DMCA.com Protection Status
title=""

রাষ্ট্রপতি চুপ্পু নিয়ে অস্থিরতা

৫ আগষ্ট পরবর্তী বিভিন্ন স্যাবোটাজমূলক কার্যক্রম বিশ্লেষণপূর্বক এই কনক্লুশনে আসা যায় যে, পতীত ফ্যাসিষ্ট রেজিম পলাতক হলেও তার দোসররা অনেকেই জনতার ভীড়ে লুকিয়ে এবং একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন মদদে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় সক্রিয়। 

জনগনের সচেতনতা ও একতাবদ্ধ থাকার কারনে ফ্যাসিস্ট শক্তির ছোট বড় ৭০+ টি এটেম্প্ট নস্যাৎ করা গিয়েছে। 

সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনগনকে যারা বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে, তারা আর যাই হউক বিপ্লবের পক্ষের শক্তিকে প্রকারান্তরে চ্যালেন্জ করে সাংবিধানিক সংকটে লিপ্ত।  তারা কি জনগনের বন্ধু না শত্রু তা জনগন বুঝে বলে বিশ্বাস।  জনগনকে নির্বোধ ভাবা চরম বোকামী।  এর প্রমাণ ৩৬শে জুলাই জনগন দেখিয়ে দিয়েছে।  দেয় নি?

এদের থেকে সাবধান। 

সংবিধান তো সেদিনই ফেলে দিয়েছে জনগন যেদিন বিপ্লব শুরু হয়েছে। বিপ্লব বা বিপ্লব পরবর্তী সরকার কি সংবিধানে আছে? তাহলে সাংবিধানিক সংকট নিয়ে জাতিকে কেন বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে? 

রাষ্ট্রপতির ইস্যু নিয়ে সাধারণ জনগনের অভিপ্রায় ফাইনাল। তারা ঠিক করবে চুপ্পুর ভাগ্য। আমি আপনি বা সো কলড সুশীল সমাজ কে ফতোয়া দেয়ার? এই সুশীলরা তো জুলাই বিপ্লবে যখন প্রতিদিন লাশ পড়ছিলো তখন মিডিয়ায় দেখিনি। এখন কেন এতো পাকনামি করছে তারা? 

অজানা শত্রুঃ

বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের শত্রু বা, দুশমনরা চিহ্নিত ছিল।  স্বৈরাচার ও তার দোসররা ছিলো জনগনের শত্রু।  কিন্তু এখন?

এখনো পতিত স্বৈরাচার নিয়োজিত সমাজের বিভিন্ন সেক্টর ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে  তাদের লোক বহাল তবিয়তে আছে।  একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন?

এসব দোসররা তাদের নিজ স্বার্থেই এই সরকারকে স্থিতিশীল হতে যতরকম প্যাঁচ আছে, তা প্রয়োগ করছে ও করবে। 

কারণটা খুব সিম্পল।

ধরেন পতিত স্বৈরাচার আমলের চিহ্নিত দোসরদের তো আমরা কমবেশী সকলেই চিনি।  কিন্তু যারা ঘাপটি মেরে বসে আছে (Those Who Are Unsurfaced) তারাতো স্বৈরাচারকে সহায়তা করে নিজের আখের গুছিয়েছে। এখন সরকার স্হিতিশীল হলে এদের দূর্নীতি ও অপকর্মের বিষয়ে জনমত তৈরী হলে তো এরা বিপদে পড়ে যাবে। তাদের হারাম অর্জিত রোজগার কি বিপদে পড়ে যাবে না? টাকার মায়া বড় মায়া। তার একটা প্রমাণ আওয়ামী লীগ এর প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু নাকি টাকার তোষকে ঘুমাতেন?

তাই এরা নিজ স্বার্থে এই আন্দোলন পরবর্তী সরকারকে কার্যকর দেখতে কি চাইবে?

মনে রাখবেন এই আনসারফেসড গ্রুপের লোকজনের সংখ্যা অনেক। 

সরকারকে তো দেখছি ৮ আগষ্ট হতে ট্রাবল শ্যুট করতেই দিনের বেশীর ভাগ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব করতে গিয়ে সরকার মাঝেমধ্যে কিছু ভূল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। 

এ সরকারের দূর্বলতার জায়গাটা তাই বোঝা দরকার। রাজনৈতিক সরকার ভূল সিদ্ধান্ত নিলে রাজনৈতিক সরকারের সমর্থকগোষ্টি তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় মাঠে থেকে বিরোধী দল বা মতের বিপক্ষে সরকারকে সমর্থন করে। 

কিন্তু এই বর্তমান ড: ইউনুস সরকারের তো সেরকম রাজনৈতিক সমর্থক দল আকারে নেই যারা সরকারের সমর্থনে সরকারী সিদ্ধান্তগুলো মোকাবেলা করবে। 

এই সরকার কিভাবে এসেছে তা আমরা সকলেই অবগত আছি। ছাত্র জনতা সিপাহীর মৈত্রী দ্বারা একটি প্রচন্ড শক্তিশালী ফ্যাসিস্ট রেজিমকে হটিয়ে জনগনের বিজয়ের মাধ্যমে এই সরকারের আগমন।

আমাদের পর্যবেক্ষণ করা উচিৎ এই সরকারের কর্মকান্ডগুলো। তাদের সদিচ্ছা ও বাস্তবায়নে তারা যেসব বাঁধা মোকাবেলা করছে – তা আমাদের বুঝতে হবে। এটা খুবই জরুরী।

এ সরকার শুরুতেই একটা মস্ত বড় ভূল করে ফেলেছে। তারা চুপ্পুর উপদেষ্টা হিসাবে সংবিধান সংরক্ষণের শপথ নিয়েছেন। এই ভূল আমাদের সকলের। তবে এই ভূল সংশোধনযোগ্য।

আর এই সংবিধান বিগত স্বৈরাচার সরকার গত ১৬ বছরে নিজের ইচ্ছে মতন কাঁটাছেড়া করেছেন নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য। রাতের ভোট দিয়ে এরা যেভাবে নির্বাচন হতে জনগনকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন, তাতে প্রকাশ পায় এরা জনগনের ইচ্ছেকে থোরাই পরোয়া করে। 

যে কোন সরকার পলিসি লেভেলে পলিসি প্রণয়ন করে তার প্রশাসন দিয়ে। বাস্তবতা হলো এই সরকারের আমলে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সরকারকে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রশাসন হতেও যেরকম কার্যক্রম আশা করে জনগন, তাও অনুপস্থিত। ভূল বলেছি কি?

এই সরকারের সবচেয়ে বড় শক্তির উতস জনতার সমর্থন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোও সহনশীল আচরণ প্রদর্শন করছে বলে প্রতীয়মাণ যদিও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে যাওয়ার তাগিদ দেবে এটা প্রত্যাশিত। তবে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরী। নির্বাচন ব্যাবস্হা নিয়ে জনগনের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা তা চিরতরে দূর করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে তাই সংস্কার অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা নির্বাচনের নামে আর কোন পুরানো বা নতুন ফ্যাসিষ্ট চাই না।

এবার আসি রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন না এই প্রসঙ্গে উথ্বাপিত কিছু প্রশ্ন নিয়ে:

১। সাংবিধানিক শুন্যতা
২। জনগনের ইচ্ছা 
৩। ছাত্রদের চাহিদা
৪। রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদা
৫। সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকা
৬। সরকারের ভূমিকা।

যে রাষ্ট্রপতি ৫-ই আগষ্ট স্বৈরাচার পতনের পর তিনবাহিনী প্রধানসহ টেলিভিশনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলেছিলেন, সেই রাষ্ট্রপতি কেন এখন বলছেন অন্য কথা?

তার মানে কি তিনি জাতির সামনে মিথ্যে কথা বলেছেন? রাষ্ট্রপতি তো তার নৈতিকতা হারিয়েছেন? গতকাল আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি খোলাসা করেছেন। 

রাষ্ট্রপতি চুপ্পু কেন জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় একটি ইস্যু তৈরী করলেন – তা নিয়ে জনমনে নানান গুঞ্জন ও সমীকরণ চলছে। স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে কেন তিনি এ ধোঁয়াশা তৈরী করলেন জনগন তা জানতে চায়। 

১। সাংবিধানিক শুন্যতা:

যেহেতু গণআন্দোলন সংবিধানে নেই, তাই সাংবিধানিক শুন্যতার প্রশ্নই অবান্তর। এটা নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তর আলোচনা করা যাবে। এখন এটা আলোচনার সময় নয় বলে মনে করি। 

২। জনগণের ইচ্ছে:

আমরা এমন সংবিধান চাই যেখানে জনগনের ইচ্ছে বা অভিপ্রায়ের প্রতিফলন থাকবে।  রাষ্ট্রপতি চুপ্পু নিয়ে জনগনের ইচ্ছেটা কেন আমরা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি? জনগন যেহেতু ফ্যাসিষ্ট রেজিমকে প্রত্যাখান করেছে, তাই ফ্যাসিস্ট রেজিমের পছন্দের চুপ্পুকেও প্রত্যাখান করেছে। আর জনাব চুপ্পু হঠাৎ কেন দেশকে অস্থিতিশীল করেছেন, তার প্রতিবাদে জনগনের এই রাজপথে নামার দায়দায়িত্ব এককভাবে তাকেই নিতে হবে। এ লেখা যখন লিখছি তখন পর্যন্ত ৫ জন সাধারণ জনগন ও ছাত্র আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট বন্ধ ও যানজটের কারণে। জনদূর্ভোগের জন্য কে তাহলে দ্বায়ী? 

৩।  ছাত্রদের চাহিদা:

ছাত্ররা দলমত নির্বিশেষে জনগনের কথা যেহেতু বলছে, তাই তাদের দাবীর ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই।  ভালো লেগেছে ছাত্ররা জাতীয় ইস্যুতে সকল রাজনৈতিক দলের সহায়তা ও ঐক্যের ডাক দিয়েছে। 

৪।  রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান: 

অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই চাচ্ছেন চুপ্পু সাহেব সসম্মানে চলে যান।  আমরাও চাই না রাষ্ট্রপতিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সড়াতে। তাহলে রাষ্ট্রপতির পদটাই কলঙ্কিত হলে তার একক দায়ভার চুপ্পু সাহেবকপ নিতে হবে।  ছাত্ররা পরিষ্কার বলেছে, তারা বঙ্গভবনকে গনভবনের পরিনতি দেখাতে চাচ্ছে না।  ছাত্ররা যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিচ্ছে যা সাধারণ জনগন প্রশংসা করছে। 

৫।  চুপ্পু নিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকা:

একটা মহল বিভিন্ন বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রকাশ করে সেনাবাহিনীকে জনগনের প্রতিপক্ষ বানাতে ব্যাস্ত। একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের আপামর জনগনের সেনাবাহিনী। 

আমাদের সাধারণ সৈনিকরা এদেশের গ্রাম গঞ্জের সাধারণ মানুষের সন্তান। আমাদের অফিসাররা আপনাদেরই সন্তান। আমাদের সেনাবাহিনী আপনার, আমার ও সকল বাংলাদেশী জনগনের সেনাবাহিনী। তারা কোন দল বা গোষ্ঠীর সেনাবাহিনী নয়। 

কতিপয় দলবাজ, খুনী ও সেনা অফিসার ও তাদের অপকর্মের দায়ভার আপনাদের সেনাবাহিনীর উপর দেবেন না। যারা খুনী, স্বৈরশাসকের দোসর, দূর্নীতিবাজ – তারা দেশ ও জাতির দুশমন। এদের অপকর্মের বিচার হবেই হবে। সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সদস্যও চায় এদের বিচারের আওতায় এনে তাদের কলংকমুক্ত ও প্রফেশনাল বাহিনী হিসাবে কাজ করে এগিয়ে চলতে।

সেনাবাহিনী আর কখনোই জনগনের প্রতিপক্ষ হবে না এটা নিশ্চিত থাকুন। যদি থাকতো, তবে ৫ই আগস্ট কি সম্ভব হতো? 

হয়তো হতো।  কিন্তু বিলম্বিত হতো বা অনেক রক্তের হোলিখেলা দেখতো বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাধারণ জনগনের বিপক্ষে গুলি চালাবে না – এটা স্পষ্ট বলার পরদিনই স্বৈরাচার পালিয়েছে।  পালায় নি?

তাই দয়াকরে সতর্ক থাকবেন একটা পক্ষ সেনাবাহিনী নিয়ে খেলছে যাতে জনগন – সেনাবাহিনী – সরকারের মাঝে একটা গ্যাপ তৈরী করে ফায়দা নিতে পারে। এরা কারা? এদের আইডেন্টিফাই করুন।  খুব কষ্ট করতে হবে না।  নিজের চোখ কান খোলা রাখুন।  তাতেই তারা চিহ্নিত হতে বাধ্য।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে নোংরা খেলা আমরা বরদাস্ত করবো না।  যারা করবে তাদের বিচারের আওতায় আনবো।  হুশিয়ার ষড়যন্ত্রকারীরা।  দেশকে অস্থিতিশীল করলে তোমাদের পরিনতি হবে ৫-ই আগষ্টের মতন।  আমরা সভ্য জাতি বিধায় বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাচ্ছি তোমাদের।  যদি এতে কাজ না হয়, তবে বাঁকা আঙুলে কিভাবে ঘি উঠাতে হয়, তা আমরা ভালো বুঝি। 

৬। সরকারের ভূমিকা:

চুপ্পু যদি নিজে পদত্যাগ না করে তবে তাকে জনগনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে রেখে দেওয়া কি ঠিক না বেঠিক, তা নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারকেই আমরা দিয়েছি। তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ঠিকই বলছেন " এটা একটা রাজনৈতিক সমস্যা। "

আপনাদের উপর আমাদের আস্হা রয়েছে। রয়েছে সমর্থন। আমরা এই ফালতু ইস্যুর দ্রুত সমাধান চাই। 

ধন্যবাদ, 

মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অবঃ) 
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং কলামিস্ট

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!