ক্যাপ্টেন (অবঃ) মারুফ রাজুঃ আজকের ভোরটা ভিন্ন এক খুশির সংবাদ নিয়ে হাজির হলো বাংলাদেশের মানুষের সামনে। সেই সাত সমূদ্র, তেরো নদীর ওপারে- ওয়েস্ট ইন্ডিজের জ্যামাইকায় হয়তো এখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। মাত্র কিছুক্ষণ আগেই কিংস্টনের সাবিনা পার্ক স্টেডিয়ামে দারুণ এক টেস্ট জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে টাইগাররা।
খেলা কি পঞ্চম দিনেও গড়াবে? এমন সম্ভাবনা যখন উঁকি মারছিলো, তখনই সর্বশেষ আঘাতটা হানলেন নাহিদ রানা। শামার জোসেফের স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিলেন তিনি। সে সঙ্গে চতুর্থ দিনেই (একদিন হাতে রেখে) টেস্ট জিতে নিলো মেহেদী হাসান মিরাজ অ্যান্ড কোং। টেস্ট নেতৃত্ব দিতে নেমে মাত্র দ্বিতীয় টেস্টেই জয়ের দেখা পেলেন মিরাজ।
প্রথম টেস্টে ২০১ রানের বিশাল ব্যবধানে হার। দ্বিতীয় টেস্টের শুরুতেও নড়বড়ে ব্যাটিং। মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট। এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি টেস্ট হারের সামনে দাঁড়িয়ে; কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের কৃতিত্বে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৬ রানে অলআউট করে প্রথম ইনিংসেই ১৮ রানের লিড পেল বাংলাদেশ।
এরপর ব্যাট করতে নেমে ব্যাটাররা মোটামুটি দৃঢ়তার পরিচয় দিলেন। সাদমান ইসলাম (৪৬), শাহাদাত হোসেন দিপু (২৮) মেহেদী হাসান মিরাজ (৪২) ও লিটন দাসের (২৫) পর জাকের আলী অনিক। বিশেষ করে জাকের আলি অনিক দারুণ ব্যাটিং করলেন। তার ৯১ রানের ওপর ভিত্তি করেই দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রান হলো এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ২৮৭ রানের বড় লক্ষ্য বেঁধে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
এবার পরীক্ষা বোলারদের। প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের বোলাররা রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে দেখা দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের সামনে। প্রথম ইনিংসে পেসার নাহিদ রানা ছিলেন বড় আতঙ্ক। তিনি নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই আতঙ্ক নিয়ে হাজির হলেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তিনিও নিলেন পাঁচ উইকেট। তার এই বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৮৫ রানে অলআউট। সে সঙ্গে বাংলাদেশ পেল ১০১ রানের বিশাল ব্যবধানে এক জয়।
১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদের আবার হারাতে পারলো বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে সর্বশেষ সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ক্যারিবীয়দের মাটিতে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা। সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ বছর পর হারালো বাংলাদেশ।
২৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিলেন দু‘জন। কাভেম হজ। তিনি করেন ৫৫ রান এবং ওপেনার ও অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। তিনি করেন ৪৩ রান। এছাড়া জাস্টিন গ্রিভস ২০ রান করেন।
তাইজুল ইসলাম ছাড়া ২টি করে উইকেট নেন হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদ। নাহিদ রানা নেন ১ উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তাইজুল ইসলাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৬৪ ও ২৬৮ (জাকের আলী অনিক ৯১, সাদমান ইসলাম ৪৬, মেহেদী হাসান মিরাজ ৪২, শাহাদাত হোসেন দিপু ২৮; কেমার রোচ ৩/৩৬, আলজারি জোসেফ ৩/৭৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৪৬ ও ১৮৫ (কাভেম হজ ৫৫, কার্লোস ব্রাথওয়েট ৪৩; তাইজুল ইসলাম ৫/৫০, হাসান মাহমুদ ২/২০, তাসকিন আহমেদ ২/৪৫, নাহিদ রানা ১/৩২)।
ফল: বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম। সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতা।