স্টাফ রিপোর্টারঃ বিডিআর হত্যাকান্ড নিয়ে সরব থাকায় দীর্ঘ ১৫ বছর পর দেশে ফিরেছেন সাহসী নির্ভীক সাংবাদিক ক্যাপ্টেন মারুফুর রহমান রাজু (অব.)। গত ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার মধ্যেরাতে একটি ফ্লাইটে কানাডা থেকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ক্যাপ্টেন মারুফ রাজু।
বিমানবন্দরে ঢাকা, চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা ক্যাপ্টেন মারুফুর রহমান রাজুকে(অব.) ফুলেল অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরের বাইরে তার নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউরা ও কসবা থেকে আসা ছাত্র-জনতা সমবেত হয়ে সাংবাদিক ক্যাপ্টেন মারুফ রাজুকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মারুফ রাজু বলেন, হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ। হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে এতদিন পর পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় আসতে পেরেছি। এতো দিন আসার অধিকার ছিল না। আমরা ছিলাম 'নো লিস্টে'।
আপেক্ষারত গণমাধ্যম কর্মীদের নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে কান্নাভরা হৃদয়ে চোখে পানি নিয়ে বলেন, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসতে পারার জন্মগত অধিকার আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আল্লাহর রহমতে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ফিরে পেয়েছি। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং আমরা এই গণতন্ত্রকে রক্ষা করবো ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশের কেউ যেন আর বিদেশের মাটিতে নির্বাসিত না হয়। এইটাই আমারা চাই। এইটাই আমার কামনা।
কেন দেশে আসতে পারেননি? গণমাধ্যম কর্মীদের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকান্ডের পর থেকে সরকারের রহস্যজনক আচরণ ও বীরদের হত্যাকান্ডের বিচার না করায় প্রবাস থেকে বিক্ষুব্ধ ছিলাম, সংক্ষুব্ধ ছিলাম। দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ দিয়ে আমরা প্রচার- প্রচারণা করেছি। তারপর একটার পর একটা বিনা ভোটের নির্বাচন, গুম-খুন, আধিপত্যবাদ ভারতের বাংলাদেশের রাজনীতির মধ্যে হস্তক্ষেপ, সবকিছু মিলিয়ে ক্রমাগতভাগে শেখহাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা করেছি, গণতন্ত্র পুনুদ্ধারে কাজ করেছি, সেই জন্যই আমরা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিলাম। বাংলাদেশে কোন ভাবেই আসার কোন সুযোগ ছিল না।
তিনি আরো বলেন, প্লেন থেকে নেমে আসার পর চোখের পানি রাখা যায় না। কোন মানুষকে যেন তার জন্মগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয়। রাজনৈতিক মতপার্থক্য এর জন্য কাউকে যেন গুম খুনের শিকার হতে না হয়। কেউ যেন আর আমাদের মতো হয়রানির শিকার না হয়। আমাদের মতো পারিবারিক হয়রানি, জায়গা জমি ক্রোক, সম্পত্তি ক্রোক, এবং আমাদের মতো নিষিদ্ধ না হয়। সেইটাই এক মাত্র সবার প্রতি আবেদন। দেশটাকে ভালোবাসুন, দেশ সবার।
মতপার্থক্য থাকতে পারে, তাই বলে গুম খুন করে ফেলতে হবে এইটা কোন গণতন্ত্র না এইটাই আমার একমাত্র কামনা সবার প্রতি।'
তিনি আরো বলেন, গত ১৫ বছরে যে সীমাহীন দুর্নীতি এবং দুঃশাসন ছিল, হঠাৎ করে ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছে ঠিকই, এরপর থেকে সবকিছু কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। তার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারা সব জাগায় আছে। আপনারা সবাই সজাগ দৃষ্টি রাখেন, কোন ভাবেই এইটা ঢিল দেওয়া যাবে না। তাহলে এবার আর আমারা কোন সুযোগ আর পাবো না। সবাই দেশকে ভালোবাসুন। কোন দেশ যেন আমাদের ওপর রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে। কোন বিদেশী শক্তি কোন দেশের ষড়যন্ত্রকারী। সবাইকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। '
প্রবাসে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে তার বাবা-মা সহ অনেক আত্মীয়স্বজনের মৃত্যু হলেও রাজনৈতিক কারণে তিনি দেশে আসতে পারেননি।
ক্যাপ্টেন মারুফ রাজু সম্পাদিত পত্রিকা দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ (www.protombangladesh.net) এবং বিবাড়িয়ানিউজ ( BBariaNews24 ) বিডিআর হত্যাকান্ড নিয়ে সরব ভূমিকাও আওয়ামী দুর্নীতি, দুঃশাসন, গুম-খুনও বিনা ভোটের নির্বাচন নিয়ে সত্য প্রকাশ করায় ২০১৮, ২০২২ সালে তথ্যমন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে গণমাধ্যম দুইটির ওয়েব লিংক বন্ধ করে দেয়। প্রজ্ঞাপন তালিকায় নাম্বার -২৬।