ক্যাপ্টেন (অবঃ) মারুফ রাজুঃ অবশেষে দুর্নীতির অভিযোগ ও তদন্তে তা প্রমাণিত হলে যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়া ইস্যুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বক্তব্য জানা গেল।
যুক্তরাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী পিটার কাইল বলেছেন, স্বাধীন তদন্তের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তার ভিত্তিতে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
শনিবার (১২ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়। এর আগে খালা শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্র নিয়ে বাংলাদেশ সরকার গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করলে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনচ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তিনি (স্টারমার) ‘ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, যেখানে সিদ্দিক নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত’।
এদিকে, টিউলিপের বিরুদ্ধে সম্পত্তি অর্জন এবং তার খালার বাংলাদেশে রাজনৈতিক পদক্ষেপের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগ তদন্ত চলাকালীন তার পদত্যাগ করা উচিত বলে যে দাবি তোলা হচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মন্ত্রী পিটার কাইল।
পিটার কাইল বলেন, টিউলিপ সংসদীয় তদারকি সংস্থার কাছে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে ‘ঠিক কাজ করেছেন’। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (তার খালা) ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া একাধিক ফ্ল্যাটে বসবাস করেছেন।
টিউলিপের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আসার পরে সেগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস (প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে গত সোমবার চিঠি লেখেন তিনি।
ম্যাগনাসকে পাঠানো চিঠিতে তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, তিনি ‘কোনো ভুল করেননি’।
একই দিন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক ‘সম্পূর্ণভাবে সঠিক কাজ করেছেন’ এবং তিনি তার ওপর ‘আস্থা’ রেখেছেন। তবে, সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের সম্পত্তিগুলো তদন্ত করা উচিত। যদি তিনি সেগুলো ‘প্লেইন ডাকাতি’ (সোজা ডাকাতি) করে অর্জন করে থাকেন, তবে তা সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
ড. ইউনূস টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাইতে এবং পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি নিজে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হয়ে নিজেকে রক্ষা করছেন। হয়ত আপনারা তখন বুঝতে পারেননি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন।
কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনচ টিউলিপ সিদ্দিককে পদচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন: কিয়ার স্টারমারের টিউলিপ সিদ্দিককে পদচ্যুত করার সময় এটা।
পিটার কাইল স্কাই নিউজের ‘সানডে মর্নিং উইথ ট্রেভর ফিলিপস’ অনুষ্ঠানে বলেন, আমি মনে করি টিউলিপ ঠিকই করেছেন। তিনি নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আবেদন করেছেন। সেই তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করার সুযোগ দিতে হবে। আমরা তাদের আরও ক্ষমতা দিয়েছি যাতে তারা স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে পারে। আপনারা জানেন, সময় হলে কিয়ার স্টারমার অবশ্যই কর্তৃপক্ষের কথা শুনবেন।
অন্যদিকে, শ্যাডো চ্যান্সেলর মেল স্ট্রাইড টরি নেতা কেমি বাডেনচের মতামত পুনর্ব্যক্ত করে কিয়ার স্টারমারের কাছে টিউলিপ সিদ্দিককে পদচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সিদ্দিকের জন্য এখন তার দায়িত্ব পালন করা ‘অসম্ভব’, এবং প্রধানমন্ত্রীকে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
স্ট্রাইড স্কাই নিউজের একই অনুষ্ঠানে বলেন, যা সঠিক নয় তা হলো, প্রধানমন্ত্রী তাকে ওই পদ থেকে সরাচ্ছেন না এবং পদত্যাগ করতে বলছেন না।
তিনি বলেন, কারণ তিনি (টিউলিপ) দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী, তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে তার পক্ষে এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা কঠিন। তাই তাকে পদত্যাগ করা উচিত এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত।
শ্যাডো চ্যান্সেলর আরও বলেন, এমন কিছু পরিস্থিতি থাকে, যেখানে আপনি কার্যকরভাবে আপনার কাজ করতে পারেন না। এখন দেখুন, চ্যান্সেলর চীন গিয়েছেন। আমার ধারণা ছিল, টিউলিপ সিদ্দিক তার সাথে যোগ দিয়ে সেখানে যাবেন। কিন্তু এখন তিনি যাচ্ছেন না এবং আমি অনুমান করতে পারি, এর কারণ তার বর্তমান পরিস্থিতি।
তিনি বলেন, তাহলে, বর্তমানে তিনি সরকারে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম নন। এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তাকে সরিয়ে দিতে হবে।