DMCA.com Protection Status
title="৭

বর্তমান বাংলাদেশ কি অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের গন্তব্যহীন ভারতীয় উপনিবেশ ???

bangladesh-now2আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের বর্তমান চিত্রটি কেমন? বিশ্লেষণ করলে দাড়ায়; বাংলাদেশ ভারতের একটি উপনিবেশ, যে উপনিবেশে ভারতের প্রতিনিধি শেখ হাসিনা তার দল ও সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ভারতের ইচ্ছায় বাংলাদেশ শাসন করছে।

যারা এই উপনিবেশ থেকে মুক্তি চাইছে তারা আন্দোলন করছে। ভারতের নির্দেশে হাসিনা সরকার ও তার সশস্ত্র বাহিনীগুলো জনগনের উপর গুলি চালাচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দিচ্ছে। উপনিবেশের বরকন্দাজ বাহিনী কর্তৃক আন্দোলনকারীদের গুম করা হচ্ছে হাজারে হাজার, হত্যা করা হচ্ছে বেশুমার, গ্রেপ্তার নির্যাতন জেলে প্রেরণ খুবই মামুলি বিষয় এখন।

এ সময়ের টিক্কা খানের ভুমিকা নিয়েছে মেজর জেনারেল আজিজ, যিনি ইতিমধ্যেই নাগরিকদের হত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছেন, যদিও তার বাহিনী আরো আগে থেকেই হত্যাকান্ড চালু রেখেছে।পুলিশ হানাদারদের সহযোগী শক্তি হিসেবেই শুধু কাজ করছে না নিজেরাও হত্যাকারীর ভূমিকায় নেমে গেছে। উপনিবেশের শাসক শেখ হাসিনা  পাড়ায় মহল্লায় শান্তি কমিটি গড়ে স্বাধীনতাকামীদের প্রতিহত করতে বলেছেন।

আন্দোলনের প্রধান   দেশনেত্রী অফিসবন্দী। নাগরিকদের এই পরিস্থিতিতে ভারতের উপনিবেশ ও ভারতের দালাল মুক্ত বাংলাদেশ পুন:স্বাধীনতার পরিবর্তে শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য আন্দোলনের বৃহৎ শরিক দলের নেত্রীকে অবরুদ্ধ অফিস থেকে মুক্ত করতে আন্দোলনকারীরা ব্যর্থ হলেও শুধু মাত্র তৃনমূলের নেতাকর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টায় বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী নিয়েও শেখ হাসিনা সরকার আজ দিশাহারা।

পাঠক এই চিত্রটির সাথে ১৯৭১ এর চিত্রের ফারাক কতখানি? ফারাক একটাই পাকিস্তানি উপনিবেশে এই কাজগুলো করতো পাকিস্তানের দখলদার উর্দুভাষীরা আর এখন ভারতীয় উপনিবেশে করছে স্বগোত্রীয় বাংলাভাষীরা।

 সেদিন পূর্ব পাকিস্তানে আদমজী, ইস্পাহানি, বাওয়ানিরা বিনিয়োগ করে লাভ নিয়ে যাওয়ায় সম্পদ জোর করে নিয়ে যাওয়ার অপরাধ হতো, এখন ভারতীয় মাড়োয়ারীরা আমাদের বাজারে তাদের নিম্নমানের পন্যে সয়লাব করে দিলেও সেটি হয় আমাদের অর্থনীতিতে সাহায্য। এখানে শিল্প স্থাপন করে, শ্রমিক শোষণ করে ,শেয়ার বাজার লোপাট করে, ট্যাক্স ফাকি দিয়ে লাভের পুরোটা নিয়ে গেলেও সেটি হয় বিনিয়োগ(যেমন এয়ারটেল)। আর এদিকে ভারত পাকিস্তানের মত নিজের বাহিনী না পাঠিয়ে উপনিবেশে নিজের দালাল হিসেবে গড়ে তোলা নেতা এবং অফিসারদের দিয়ে বাংলা ভাষীদের নিজস্ব বাহিনিকেই তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। দালাল বুদ্ধিজীবিরা এক্ষেত্রে নিরব  বরং রচনা করছে তারেক রহমানের গেরিলা যুদ্ধের কাল্পনিক চিত্র।

 

 

 

১৯৭১ সালে বয়সের কারণে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেইনি। আজকের পরিস্থিতি দেখে অবশ্য নিজের কাছেই প্রশ্ন জাগে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরা কতখানি বেঠিক ছিল? মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, দেশপ্রেমিক বিপ্লবী সিরাজ সিকদার এবং অন্যান্য বিপ্লবীরা কি বেকুব ছিলেন? তারা কেন আত্মনির্ভরশীল মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছিলেন? পূর্ব বাংলার প্রথম স্বাধীনতার দলিল প্রণয়নকারী বিপ্লবী সিরাজ সিকদার কেন শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বদলীয় মুক্তিযুদ্ধের কাউন্সিল এমনকি সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহবান জানিয়েছিলেন? কেন অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে ১৬ ডিসেম্বরকে কালো দিবস ঘোষণা করেছিলেন? আজকে উপরের এই ছবি যখন সামনে ভেসে ওঠে তখন ওই সকল আহবানের যৌক্তিকতা মর্মে মর্মে সবাই উপলব্ধি করছে। তারপরেও কেন আমাদের আজকের নেতারা অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধকে সমাপ্ত করতে চান না? এর কারণ আমি না বললেও সবাই ঠিকই বোঝেন।

আজকের এই উন্নত প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিগত দুই দশকে পুরো পৃথিবীকে একটি ভিন্ন ডাইমেনশনে নিয়ে গেছে। রাজনীতি এবং আর্থ -সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অব্যস্থাপনাকে আমরা জেনারেশন গ্যাপ বলি কিন্তু জেনারেশনের মিসিং লিঙ্ক এর কথা বলি না। মান্ধান্তা আমলের মত সামন্ত চিন্তা চেতনার নেতারা বাংলাদেশকে আজও যেভাবে নিজেদের মত করে চালাতে চাচ্ছেন, নতুন প্রযুক্তির ছোয়া পাওয়া এই নতুন প্রজন্মকে শাসন করার প্রবণতা বুমেরাং হবে। প্রতিটি দলে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে ঠিকই কিন্তু দলীয় আদর্শ চর্চার ক্ষেত্রে পুরোটাই পিছিয়ে থাকার কারণে একের পর এক ব্যর্থতা জেকে বসেছে। অবশ্য সামনের দিনগুলো কি হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। এই মুহুর্তে দেশকে শত্রু মুক্ত করার চেয়ে বড় কোন এজেন্ডা নাই।

তবে কথা পরিস্কার, ১৯৭১ এ দেশকে পাকিস্তানি উপনিবেশ মুক্ত করতে মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। সেদিন শেখ মুজিবর রহমান সর্বদলীয় সরকারের দিকে না গিয়ে যে ভুল করেছেন, পাকিস্তানি উপনিবেশ মুক্ত হয়ে সেই একই ভুল করে তিনি নিজেই তার পরিনতি রচনা করেছেন। আজকেও সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ না করলে এই শত্রুর হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করা দুরহ হবে। একসময় জয় আসবে কিন্তু সেই পুরনো ইতিহাসের দিকেই যদি জয়ীরা হেটে যায় তবে শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাস তাদের হাত ছানি দিয়েই ডাকবে। অঙ্কের যোগফল একই হয়। সমর্থনের বিশালত্ব দিয়ে ক্ষমতায় আরোহন করা যায়, দেশ শাসন করা যায়। কিন্তু দেশের সেবা করা কঠিন হয়। যেমন সেবার পরিবর্তে বিশালত্বের কারণে শাসন করতে চেয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ।

অতীত আর ভবিষ্যত নয়, ক্ষমতার হিসেব নিকেশ নয়, এই সংগ্রামকে সফল করতে হবে। হিসেব নিকেশ এখন পরিস্কার। এই সংগ্রামে যে পক্ষ জিতবে তারাই টিকবে, পরাজিতের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এখনি ভারতীয় ডিজাইনের ”যৌথ বাহিনী” মানুষের বসত ভিটা ধংস করে হত্যা করছে হায়েনার মত। নাগরিক হত্যা করে হাত পাকানো অফিসার আর আওয়ামী লীগের লোকজন জানে তাদের ভবিষ্যত কি হবে যদি হেরে যায়। তাই তারা মরণ কামড় দিয়েছে, প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে মুক্তিকামী নাগরিকদের বিরুদ্ধে। তাদের ভাষা অস্ত্রে প্রকাশ পাচ্ছে। নিজে এবং পরিবারকে রক্ষা করতে এই জাতিকে ঠিক করতে হবে তারা কোন পদ্ধতিতে নিজেদের রক্ষা করবেন। নিরস্ত্র হয়ে নাকি অস্ত্রের মোকাবেলায় অস্ত্র দিয়ে। অস্ত্র সব সময়ই অবৈধ নয়, আত্মরক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র আন্তর্জাতিক ভাবেই স্বীকৃত।

দেশে বিকাশমান দালাল পুঁজির কর্তাব্যক্তি এবং মাফিয়াদের হাতেই অর্থনীতির চাবিকাঠি। রাজনৈতিক দলগুলো যে কোন কারণেই হোক এদের অস্বীকার করতে পারেন না। এই অপ অর্থনৈতিক শক্তি নিজেদের লোকসান ঠেকাতে বেগবান এই সংগ্রামকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাইবে। এ থেকে সংগ্রামীদের সতর্ক থাকতে হবে। আন্দোলনের দ্বারা ভারতীয় উপনিবেশ মুক্ত না হলে বুঝে নিতে হবে সংগ্রামকে হাইজ্যাক করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে হয়ত সরকারের পরিবর্তন হবে কিন্তু আবারো অসমাপ্ত থেকে যাবে দেশের মানুষের পুন:স্বাধীনতার সংগ্রাম।

তাই শেখ হাসিনার   পাড়ায় মহল্লায় আওয়ামী রাজাকার কমিটির বিরুদ্ধে এবং হানাদার বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী মুক্তিফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের নেত্রী ও নেতাদের এ বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ডাক দিয়ে বলতে হবে, হে জনতা শত্রু মুক্ত কর স্বদেশ, রক্ষা কর নিজের পরিবার। নিরাপদ কর আগামীর সন্তানদের বাসস্থান। নইলে প্রস্তুত থাকতে হবে আগামী দশকে দেশের উপনিবেশিক মর্যাদা থেকে উন্নীত করে গর্বিত অংশ হওয়ার রেফারেন্ডাম করার জন্যে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!