বিএনপির ‘নৃশংসতার’ দলিল নিয়ে বিশ্বনেতাদের কাছে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চলমান আন্দোলনের ‘ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের’ ছবি, ভিডিও সম্বলিত ডিভিডি প্রস্তুত করা হচ্ছে। শিগগিরই এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে প্রদর্শন করা হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় বিএনপির পাশাপাশি এখন আওয়ামী লীগও নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে বিদেশিদের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে।
অবশ্য ছবি, ভিডিওর ডিভিডি নিয়ে বিশ্ব নেতাদের কাছে আওয়ামী লীগের এটাই প্রথম যাওয়া নয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের কাছে বিএনপি-জামায়াত জোটের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী ‘সহিংস কর্মকাণ্ড’ নিয়ে নির্মিত ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রের ডিভিডি দেয়া হয়েছিল। এতে বাংলা ও ইংরেজি ক্যাপশন-সাবটাইটেল ছিল।
এর আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বনেতাদের বেশ কয়েকবার হস্তক্ষেপ কামনা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোটও। মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দেয়ার আবদার নিয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশক’টি দেশের কাছে গেছে বিএনপি।
সর্বশেষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের একাধিকবার বৈঠক অপরদিকে বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দফায় দফায় ব্রিফিং সেই বিদেশি তোষণের রাজনীতিরই প্রমাণ দেয়।
আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এবারও চলমান আন্দোলনের ‘ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের’ প্রমাণ্যচিত্রের ডিভিডি বিশ্বনেতাদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এজন্য টিভি ফুটেজ, পত্রিকার কাটিং ও ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে স্থান পাবে অবরোধ ও হরতালের সময় জ্বালাওপোড়াও, মানুষ খুনসহ নানা নাশকতা, নৃশংসতার চিত্র। আর এ কাজটি করছে দলের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সেল।
ডিভিডি পাঠানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। দলটি মনে করছে, এসব পাঠানোর মধ্যে দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়া সহজ হবে। ফলে বিএনপি চেষ্টা করেও খুব সহজে বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় করতে পারবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের সমর্থন আদায়ে এ ডিভিডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
গতবারের ডিভিডিটি প্রায় দুই ঘণ্টা দীর্ঘ এবং তিন অংশে ভাগ করা হয়েছিল। এবারও সেভাবেই সাজানো হচ্ছে। প্রথম অংশে থাকছে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতার ভিডিও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা ও হত্যা, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, গাছ কাটাসহ প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের স্থির ও চলচ্চিত্র। দ্বিতীয় অংশে থাকছে প্রকাশিত ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ’ অ্যালবামটি। তৃতীয় অংশে থাকছে আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের নামে যেগুলো করছে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তাদের এসকল কর্মকাণ্ডের চিত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
তবে এই প্রমাণ্যচিত্র কবে প্রকাশ করা হবে সেব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী রোববার দলের বৈঠবে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।