মাটিতে রাখেননি পিঁপড়ার ডরে, মাথায় রাখেনি উকুনে খাবে, বুকে আগলে রেখেছেন শীত নিবারণে…।’ সন্তানের জন্য মায়ের নিরাপত্তা এর চেয়েও বহুগুনে বেশি। যার কারণেই মহান আল্লাহ সন্তানের বেহেশত নির্দিষ্ট করেছেন মায়ের পায়ের নিচেই। সন্তানের গায়ের চামড়া দিয়ে মায়ের পাপস বানালেও যে একফোটা দুধের দাম শোধ হবে না এমনও ব্যাখ্যা মণিঋষিদের।
সেই প্রিয় সন্তানকে নিজ হাতে কবরস্থ করতে হবে, বিদায় জানাতে হবে শেষবারের মতো। সেই সময়ের বাকি মাত্র কয়েকঘণ্টা। এমনই পরিবেশকে সামনে রেখে সময় অতিবাহিত করছেন আরাফাত রহমান কোকোর গর্ভধারিণী মা বেগম খালেদা জিয়া।
তার শোকটা একটু বেশি-ই। নিজ দেশে, নিজের বাড়িতে আতর-গোলাপ ছিটিয়ে সন্তানের শেষ গোসল করানোর সৌভাগ্যও বুঝি হলো না সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদে পদে নির্যাতিত-নিপীড়িত রাজনৈতিক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়ার কারণেই সেনানিবাস থেকে সেনানিবাসে কাটাতে হয়েছে বছর-মাস-দিন। আপাতত জীবদ্দশায় শেষ ঠিকানাটা হয়েছিল ঢাকা সেনানিবাসে। কিন্তু রাজনীতির ঝড়ো হাওয়ায় ৪০ বছরের স্থায়ী ঠিকানাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে। গৃহহীন কোটি কোটি মানুষের মতোই তিনিও ইটকাঠের নগরীতে একজন ভাড়াটিয়া।
গুলশানের ৭৯ নম্বর বাড়ির ভাড়াটিয়া তিনি। সেখানেও রাতযাপন হচ্ছে না। রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ এবং পরে অবস্থান করেই ছেলেকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে হচ্ছে। নিত্যদিন কথা হলেও চোখের দেখা হয়েছে সেই ২০১৩ সালের জুন মাসে।
গত শনিবার দুপুরে শুনতে হয়েছে তার মৃত্যুর খবর। নাড়ি ছেঁড়া ধন প্রিয়পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর কেড়ে নিয়েছে খালেদা জিয়ার বাকশক্তি। দুঃসংবাদের দিনই তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে রাখা হয়। ২৪ ঘণ্টার মাথায় তিনি চোখ-খুলেছেন। আর ৪৮ ঘণ্টা হলো তিনি প্রায় নির্বাকই আছেন। দুনিয়ার সবচেয়ে দামি সম্পদটি হারিয়ে মালিক যেমন চারপাশে খোঁজেন তার হারানো সম্পদ গত দুইদিন ধরে তেমনই আচরণ করছেন বেগম খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার স্বজন ও সাবেক সেনা প্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের বর্ণনায় কোকোকে হারিয়ে আজ খালেদা জিয়া পাগলপ্রায়।
দেশ ও দেশের রাজনীতি, গুলশানের কার্যালয়ে কে গেল- কে আসলো, কার সাথে কী আচরণইবা করা হলো তার খবর নেয়ার মনমানসিকতা নেই সন্তানহারা খালেদা জিয়ার। তিনি শুধু অপেক্ষা করছেন প্রিয়পুত্রের মুখচ্ছবি দেখার জন্য।