প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ৫৩ দিন পর পররাষ্ট্র দপ্তরে গেলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল অফিস সময় শুরুর পরপরই সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র ভবনে প্রবেশ করেন তিনি। গাড়ি থেকে নেমে সোজা মন্ত্রীর কক্ষে যান। অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সচিব মো. শহীদুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তা তাকে স্বাগত জানতে আগে থেকেই সেখানে প্রস্তুত ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই রাজনীতিক কাম দূতকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান তারা। কথাবার্তার শুরুতেই সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মের খোঁজখবর নেন। আলোচনা এগিয়ে যায়, স্মৃতিচারণও হয়। এরশাদ জানান, তিনি মধ্যপ্রাচ্য মিশন শুরু করতে চান। মন্ত্রীর কাছে জানতে চান তার কাজ কি? মধ্যপ্রাচ্যে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব পরিচিতজন রয়েছে বলে জানান তিনি। তাদের কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য অনেক কাজ করা যাবে বলে আশা করেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। কোথায় কি কাজ করা যায় সেই পরামর্শও চান তিনি। বলেন, মধ্যপ্রাচ্য আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে আমাদের লাখ লাখ বাংলাদেশী কাজ করেন। আমি জানি, তারা অনেক কষ্টে উপার্জন করেন। দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠান। তাদের অনেক অসুবিধাও রয়েছে। ভিসা নিয়ে জটিলতা আছে। সব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে হয়তো হবে না। কিন্তু চেষ্টা করলে কিছুটা নিরসন করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর ভরসা করেছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি কাজ করতে চাই। অনেক কাজ করার আছে। দেশগুলোতে আমাদের মিশন আছে। কূটনীতিকরা কাজ করছেন। বিশেষভাবে তিনি কোথায় কি করতে পারেন- সেই পরামর্শ চেয়ে এরশাদ বলেন, আজই শেষ নয়, আমি প্রতিনিয়ত জানার চেষ্টা করবো। প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকার যেখানে কাজে লাগাবে সেখানে ‘সর্বোচ্চ’ গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টার করার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন এরশাদ। প্রায় এক ঘণ্টার আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আমি আসবো, আবার আসবো। ব্রিফ নেবো। তোমাদের পরামর্শ নিয়েই শেখ হাসিনার মিশন এগিয়ে নিয়ে যাবো। অভ্যর্থনা যেভাবে জানানো হয়েছিল সেভাবেই বিদায় জানান পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের একান্ত সচিব মেজর (অব.) খালেদ পুরো সময় সঙ্গে ছিলেন।
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়া না নিয়ে একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় থাকা এরশাদ শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী অনেকে তা প্রত্যাহার করেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রায় এক মাস থাকার পর গত ১২ই জানুয়ারি মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে বাসায় ফিরেন এরশাদ। তার দলের একাংশ নির্বাচনে অংশ নেয়। পরে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভায়ও অংশ নেন বিজয়ী এমপিরা। সংসদের বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। সরকারে অংশ নেয়ার পর থেকে রওশন ও এরশাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ দূরত্বের জের হিসেবে উপজেলা নির্বাচনেও দলটির বিপর্যয় ঘটে বলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেই আলোচনা রয়েছে।