সংবাদটি পড়েছেন: 501
প্রবল সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে নানামুখী চাপে রয়েছে বিএনপি। পাঁচ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে চলমান টানা আন্দোলনে সরকারের ক্রমশঃ আক্রমনে রীতিমতো ভেঙ্গে পড়েছে দলটির পররাষ্ট্র উইংও। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র উইংটি রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। দৃশ্যত বিদেশ নির্ভর এই দলটির পররাষ্ট্রবিষয়ক ছয় জন উপদেষ্টা বেশ কিছু দিন ধরে দৃশ্যপটে না থাকায় দলটির এখন লেজেগোবরে অবস্থা।
শুধু তাই নয়, নানা ইস্যুতে দলের মধ্যে অবিশ্বাসের জায়গাটাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। সার্বিকভাবে বলা যায় তিন তিন বার দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই দলটি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র উইং দূর্বল হয়ে পড়ায় ভারত সফর শেষে কী বার্তা দিয়ে গেলেন বারাক ওবামা তাও আড়ালেই থেকে গেল।
৯ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্র উইংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি শমসের মবিন চৌধুরী। বলা হয়ে থাকে, শমসের মবিন বিএনপির পররাষ্ট্র উইংয়ের মূল চালিকাশক্তি। তিনি এখনও কারাগারে। কবে মুক্তি পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
দলটির পররাষ্ট্র উইংয়ের আরেক প্রভাবশালী সদস্য রিয়াজ রহমান। তিনি সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১৩ জানুয়ারি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন। এখনও তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর আগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বেগম জিয়ার আরেক পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসভবনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এসব কারণেই বেগম জিয়ার বৈদেশিক যোগাযোগ রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে বিএনপির এই তৎপর বৈদেশীক টিমের সাফল্যে ভীত হয়েই সরকার এদের তৎপরতা বন্ধে হামলা ,মামলা, গ্রেফতার এবং কুৎসা রটনার মতো ষঢ়যন্ত্র করে এই টিমকে বিব্রত ও বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করে চলেছে।‘তাই পররাষ্ট্র উইংয়ের দায়িত্বে থাকা নেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের উপর হামলার ঘটনাকে সরকারের ঘৃণ্য চক্রান্ত বলেই উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞ গন।
এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যানের নামে গণমাধ্যমে ভুয়া বিবৃতি পাঠানোর অভিযোগে অত্যন্ত তৎপর দুই উপদেষ্টাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কার স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে সেটা আজ প্রশ্ন। এই দুজন হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ উপদেষ্টা ও বিএনপির বৈদেশিক দূত, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জাহিদ এফ সরদার সাদী ও ড. মুজিবর রহমান মজুমদার।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জনাব সাদী ও জনাব মুজিবকে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ উপদেষ্টা এবং বিএনপি বৈদেশিক দূত নিযুক্ত করা হয়েছিল।তাদের কর্মতৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্র সিনেট,কংগ্রেস এবং জাতিসংঘ সদর দফতরে একটি শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সমর্থ হয় বিএনপি।হঠাৎ করে তাদের অব্যহতি দেয়ায় যে শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা সহসা পূরন হবার নয়।বিশেষ করে দির্ঘদিন যাবৎ গড়ে তোলা এই সম্পর্ক রাতারাতি অন্য কারও পক্ষে তৈরী করাও প্রায় অসম্ভব বলা চলে।তবে অত্যন্ত আশার বিষয় হলো দলের নিবেদিত প্রান কর্মী জনাব জাহিদ এফ সরদার সাদী এখনও পর্যন্ত তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশের ও দলের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের ভয়াবহ অবস্থা বহির্বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারী মহল এবং জাতিসংঘ সদর দফতরে তুলে ধরার কার্যক্রম তিনি অবশ্যই অব্যাহত রাখবেন বলে জানা গেছে।
এভাবে কূটনীতি নিয়ে কাজ করা এই ছয় নেতা নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনায় বিএনপিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেছে।
এ অবস্থায় দল ও ২০-দলীয় জোটকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে ‘সফল’ হওয়াই বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দল ও জোট ভাঙার আশঙ্কা তো রয়েছেই। তাই নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি জোট ‘বাঁচা-মরার লড়াই’ হিসেবে নিয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভাতর সফর করে গেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও সেদিকে নজর ছিল। বিশেষ করে বিএনপি নেতারা আশায় ছিলেন- ওবামা ও মোদি সরকারের মধ্যে বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।এতে চলমান অচলাবস্থার অবসান হতে পারে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এ নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করার মতো নেতা দৃশ্যপটে ছিলেন না। ওবামার ভারত সফর থেকে বিএনপি কোনো আশার আলো দেখছে কি না তা আপাতত পর্দার আড়ালেই থাকলো।