প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোর্ট নির্দিষ্ট করে দিয়ে নাশকতাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এসব ঘটনার বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল না হোক, অন্তত বিশেষ কোর্ট নির্দিষ্ট করে দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রীকে এব্যাপারে বলা হয়েছে। যাতে এ ধরনের ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের জন্য এ কোর্টের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয়। এ বিচার দ্রুত হওয়া উচিত। কারণ এ ধরনের নাশকতা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য আবদুর রউফ’র এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, নাশকতাকারীদের বিচারে সন্ত্রাস দমন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ অনেক আইন রয়েছে। আইনগুলো কার্যকর করে যারা নাশকতা করে তাদেরকে এ আইনের আওতায় আনা যায়। যারা নাশকতা করছে তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনমন্ত্রীকে ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০ জন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ শত শত মানুষকে বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিরা হত্যা করেছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশ ভালোভাবেই চলছিল। দেশে শান্তি ফিরে এসেছিল এবং দেশ যখন উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ হরতাল-অবরোধের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে। তাদের হাত থেকে ছোট্ট শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। এবারও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১ জন সদস্যসহ অনেক মানুষকে হত্যা ও আহত করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বিচারের কাজে জড়িত সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান, যারা এ ধরনের পেট্রোল বোমা মারাসহ মানুষ হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিচার যেন তারা সঠিকভাবে করে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করেন।
সরকারি দলের সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দ্রুত বিচার আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনকে কার্যকর করে নাশকতাকারীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যেই বিচার বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের ‘সাংবাদিকরা টকশোতে রাতের আধারে সুড়সুড়ি দিচ্ছে-তাদের বিষয়ে কিছু করবেন কী না?’ -এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, টিভি চ্যানেলের টকশোতে উস্কানীদাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, নিজের ক্ষমতার লোভে মানুষ হত্যা করা এটা কোন ধরণের রাজনীতি? যারা এ ধরণের উস্কানিমূলক কথা বলবে, এগুলি দেখা হবে। মনিটর করা হবে এবং এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সরকার যদি কোন অপরাধ করে সমালোচনা করুক। কিন্তু এ ধরণের মানুষ হত্যার ঘটনায় উস্কানী দেওয়ার অধিকার তাদের নাই। তাহলে তারা সমান দোষী হয়ে যাবে এবং এই খুনের দায়-দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী দুর্ভাগ্য দেশের এনারা (ড. কামাল) এত বড় বড় নেতা। তারা একাধারে রাজনৈতিক দলও করে, আবার একাধারে সুশীলও হয়ে যায়। সেই সাথে টকশো। প্রাইভেট চ্যানেলগুলো আমারই দেওয়া। সেখানে বসে এই যে মানুষকে উস্কে দেওয়া। কোথায় আমি আশা করি তারা এটাই বলবে, অন্তত খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করবে তিনি যেন মানুষ পোড়ানো বন্ধ করে। তারা বলে কী? আর কয়টা দিন চলুক ঘটনা ঘটবে। কী ঘটনা ঘটবে? কেউ এসে উনাকে চেয়ারে-ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন? এ আশায় উনি একটার পর একটা মানুষের লাশ ফেলে যাচ্ছেন? এই আশায় বসে আছে। তিনি বলেন, যারা এত কথা বলছেন তারা কয় জন বার্ন ইউনিটে গেছেন। মান্না, কামাল হোসেন। উনারা বসে আছেন খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করবে, এমন একটা ঘটনা ঘটবে। বাস উনারা লাশের পথ বেয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারবেন। এই চিন্তা নিয়েই উনারা আছেন। কিন্তু উনাদের সে আকাক্সক্ষা পূর্ণ হবে না। এটা আমি স্পষ্ট বলতে পারি। তাদের এই আশা নিরাশাই হবে। কারণ, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এসেছে, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা থাকবে। যারা জনগণের জানমাল নিয়ে খেলবে তাদের জনগণ কেন ক্ষমতায় বসাবে? বাংলাদেশের ইতিহাসেই আছে যারা ফল পায় তারাই ফল খায়, কাউকে দেয় না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যেদিন দেখলাম খালেদা জিয়ার পুত্র মারা যাওয়ার পর তাকে শোক জানাতে গেলো আমাদের ড. কামাল হোসেন, মান্না। তারা যে শোক জানাতে গেলো আমি ভেবেছিলাম, ড. কামাল হোসেন এরা সব সময় হরতালের বিরুদ্ধে কথা বলে। আমি ভেবেছিলাম তারা অনুরোধ করবে অন্তত এসএসসি পরীক্ষার স্বার্থে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করা হোক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া পুত্র হারিয়েছেন সেই জন্যই তো দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখতে যাওয়ার সাথে সাথে দরজা আটকে দিয়ে যে অপমান তিনি করে দিলেন সে অপমান বোধহয় কেউ হজম করতে পারবে না। সরকার প্রধান হিসেবে আমি সেটা হজম করেই চলে এসছি। কিছু বলি নাই। কিন্তু আর কেউ কী পারবে এটা মেনে নিতে? পারবে না। তিনি বলেন, যারা উস্কানি দিচ্ছে-এটা ঠিক। আজকে মানুষের জীবন নিয়ে খেলে, মানুষের লাশ ফেলে কিছু লোক সেখান থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। যারা জীবনে দল করতে পারে না। নির্বাচন করতে পারে না। কিন্তু তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ। আজকে শত শত মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে সেই দিকে তাদের দৃষ্টি নেই। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় গণমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ দেশের প্রতিটি মানুষের জানমাল রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কার্যক্রম সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নাশকতা সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করার জন্য যতটুকু কঠোর হওয়া প্রয়োজন তা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাশকতা বন্ধ না করলে এদেশের জনগণ তার উপযুক্ত জবাব দেবে।