নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ কাঁপানো আলোচিত এমপি যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। পাঁচ বছর নানা বক্তব্যের কারণে আলোচনায় থাকলেও দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের টিকিট পাননি তারা। ফলে এবার এই দুই নারী সংসদ সদস্যের জ্বালাময়ী ও উপভোগ্য বক্তব্য শোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ!
নবম সংসদে তৎকালীন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানুর ‘চুদুর বুদুর’ শব্দের পর ঝড় তোলে শাম্মী আক্তারের ‘চুতমারানি’ শব্দটি। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মপরিচয় নিয়ে নতুন করে ঝড় তুলেছিলেন অপু উকিল। এমনকি সংসদে দাঁড়িয়ে দেয়া বক্তব্যে তিনি ছাড় দেননি জিয়াউর রহমান ও তার দুই ছেলেকেও। অবশ্য এসব নারী নেত্রীর বক্তব্য সব সময় শোভন ছিল না।উদ্ভট ও চরম আশালীন ভাষায় বিরোধী দলের নেতাদের আক্রমন করার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিলো দলনেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে লাইমলাইটে অবস্থান করা।
এবার সংসদ চত্বরে বহিরাগত নারীদের নিয়ে নবম সংসদের বিরোধী দলের এমপিদের ধাওয়াকারী যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি।
অপু উকিলের বাহাদুরি
সংসদে দাঁড়িয়ে অপু উকিল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মা লক্ষ্মী রানী মারমা দার্জিলিংয়ের চা বাগানের মালিক উইলসনের চাকরানি ছিলেন। চা বাগানের মালিকের ছিল মদ ও নারীর প্রতি আসক্তি। লক্ষ্মী রানী গর্ভবতী হলে উইলসনের দারোয়ান মুরালী মোহন মারমার সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়। উইলসনের তত্ত্বাবধানে ১৯৪৫ সালের ১৩ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্ম হয়। খালেদা জিয়া ইহুদি ঔরসজাত। তার গায়ের রঙ ও খাদ্যাভ্যাস তার প্রকৃত ইহুদি পিতার সঙ্গে মিল আছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমান ফুর্তি করতে এসে ফেঁসে গিয়ে খালেদা জিয়াকে বিয়ে করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা জানজুয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় মত্ত ছিলেন।
তার এই বক্তব্যের সময় বিএনপি ও জামায়াত তীব্র প্রতিবাদ করে এবং সমস্বরে ছিঃ ছিঃ ধ্বনি দেয়। বিএনপি সাংসদেরা অপু উকিলের মাইক বন্ধ করে দেয়ার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানায়।
অপু উকিল বলেন, ‘খালেদা জিয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ঘরে জন্ম নিয়েও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ভাঙছে। রক্ত পিপাসু খালেদা জিয়া লাশ আর মানুষের রক্ত ভালোবাসেন।’
এদিকে গত ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে সুপ্রিমকোর্টে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ওপর আওয়ামী মহিলা যুবলীগের হামলার সময় কর্মীদের ইট সরবরাহ করছিলেন এবং একইসঙ্গে নিজেও উপর্যুপরি ইট ছুড়ে মারছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ইট গার্ল’ খেতাবও জোটে তার।
নাজমা আক্তারনামা
গতবছরের শেষের দিকে জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে বিএনপির দলীয় এমপিদের ধাওয়া করে হামলার চেষ্টা চালায় যুব মহিলা লীগের কর্মীরা। আর এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি নাজমা আখতার। সঙ্গে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলও। তাদের নেতৃত্বে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় যুব মহিলা লীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। তবে ধাওয়া খেয়ে বিএনপির এমপিরা দ্রুত সরে যাওয়ায় বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
নতুন দশম সংসদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নারী প্রার্থীরা হলেন
মোছা. সেলিনা জাহান লিটা, অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমী, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, বেগম আখতার জাহান, সেলিনা বেগম স্বপ্না, সেলিনা আখতার বানু, লায়লা আরজুমান বানু, শিরিন নাঈম (পুনম) কামরুল লায়লা জলি, হেপী বড়াল, রিফাত আমিন, নাসিমা ফেরদৌসী, আলহাজ্ব মিসেস লুৎফুন্নেছা, মমতাজ বেগম অ্যাডভোকেট, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, মনোয়ারা বেগম, মাহজাবিন খালেদ, ফাতেমা জোহরা রানী, আলহাজ্ব দিলারা মাহবুব আসমা, ফাতেমা তুজ্জহুরা, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, পিনু খান, সানজিদা খানম, সাবিনা আক্তার তুহিন, রহিমা আক্তার, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা(বাবলী), কামরুন নাহার চৌধুরী(লাভলী), নীলুফার জাফর উল্লাহ, রোখসানা ইয়াসমিন ছুটি, অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, আসমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, শামছুন নাহার বেগম অ্যাডভোকেট, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী, ওয়াসিফা আয়শা খান, জাহানারা বেগম সুরমা, সাবিহা নাহার বেগম (সাবিহা মুসা), ফিরোজা বেগম চিনু, সুচিত্রা তঞ্চঙ্গ্যাঁ।
প্রসঙ্গত, দশম সংসদে নারী আসনে মনোনয়ন পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছে তৃণমূলের নেত্রীরা। ৩৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল থেকেই সুযোগ পেয়েছেন ২০ জন। বাকিদের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের রাজপথে সক্রিয় নেত্রীরা থাকলেও বাদ পড়েছেন বিতর্কিতরা। তবে নবম সংসদে নির্বাচিত এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম এবার নারী আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে সংসদীয় দলের এক বৈঠকে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।