DMCA.com Protection Status
title="৭

গ্রেফতার পরবর্তি পরিস্থিতিতে তৃনমূল নেতা-কর্মীদের প্রতি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ নির্দেশনা

1423713857দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া,তিনি গ্রেফতার হলে মনোবল অটুট রেখে, দলের নির্দেশনা ও চেইন ইন কমান্ড মেনে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। নিজে গ্রেফতার হতে পারেন জানিয়ে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

গত দুদিনে তার পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সারাদেশের মোট ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৪ জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় প্রধানের এই বার্তা জানিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সোয়া পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির দুই মামলায় ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় গত বুধবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এদিন তাদের জামিন বাতিল করে পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। খালেদার আইনজীবীরা পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করলে তাও নাকচ হয়ে যায়।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এবং ২০১১ সালের ৮ অাগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতির অভিযোগে এ দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত বছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত বিএনপির চেয়ারপারসনসহ আসামিদের বিচার শুরু করেন।

দলীয় সূত্র জানায়, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর যেকোনো মুহূর্তে বিএনপির প্রধান গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত আছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) এর আগে ১/১১-এর সময়েও গ্রেফতার হয়েছিলেন। দলের প্রতিকূল সময় পার করেছেন। কিন্তু কখনো মনোবল হারাননি। এবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কথা শুনেও সে সময় উদ্বিগ্ন ছিলেন না তিনি। কারণ, এই ধরনের পরিস্থিতিতে তিনি পড়তে পারেন, তা আগে থেকেই অনুমান করে রেখেছিলেন। সে জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা তার কাছে বিশেষ কোনো বার্তা ছিল না।

যেমনটি বলছিলেন তার সঙ্গে কার্যালয়ে অবস্থান করা দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) হয়রানি করা হবে, তা তিনি আগে থেকেই জানতেন। শুধু ম্যাডাম নয়, তার পরিবার ও দল ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাই তিনি অনুমান করে রেখেছিলেন শেষ পর্যন্ত এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাকে পড়তে হতে পারে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন নন, বরং তার মনোবল অটুট আছে জানিয়ে সেলিমা বলেন, ‘জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। সন্তান হারানোর বেদনা কী, তা সবাই জানে। ছোট ছেলেকে হারিয়ে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল, কিন্তু তার মনোবল ভেঙে পড়েনি। বৃহৎ স্বার্থে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি আপসহীন আছেন।’

খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে আন্দোলন থেমে যাবে না জানিয়ে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনি গ্রেফতার হলে আন্দোলনের প্রভাব পড়বে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। তখন আন্দোলন আরো জোরদার ও বেগবান হবে। এতে কোনো নির্দেশনা লাগবে না। আন্দোলন তার আপন গতিতেই চলবে।’

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দুজন নেতা এবং লন্ডন বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর খালেদা জিয়াকে কয়েকবার ফোন করেছেন তার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করলে আন্দোলনের নির্দেশনা বা দল কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের নেতাদের সেভাবে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

তারা বলেন, ‘আগে থেকেই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে আন্দোলনের গতিবিধি রাখছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। ম্যাডাম গ্রেফতার হলে তিনিই (তারেক রহমান) হাল ধরবেন। কিন্তু যেহেতু তিনি দেশের বাইরে আছেন, সেহেতু দেশে একজনকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সমন্বয়কারীকে সহায়তা করার জন্য তিনজনের একটি কমিটিও করা হতে পারে। যারা মাঠপর্যায়ে সার্বিক যোগাযোগ রেখে তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দেবেন।’

দলের গুলশান কার্যালয়ের সূত্র বলছে, গ্রেফতার নয়, আন্দোলন নিয়ে বেশি ভাবছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কার্যালয়ে তার সঙ্গে থাকা নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আন্দোলনই আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু থাকছে। কার্যালয়ে অবস্থান করা বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খান বেগম জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী গত দুদিনে অন্তত অর্ধশতাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি খালেদা জিয়া গ্রেফতার হতে পারেন আশঙ্কা প্রকাশ করে মনোবল অটুট রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার প্রভাবশালী নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলন চালিয়ে যেতে বিএনপির চেয়ারপারসনের নির্দেশনা পেয়েছেন। কেন্দ্র থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। ১/১১-এর সময়েও দল কঠিন সময় পার করেছে। জানি সামনে কঠিন সময়, কিন্তু আমরা আশাহত নই। বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের নেতারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!