বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে যত সমালোচনাই হোক, নিজ দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রশংসায় ভেসেছে ‘টিম ইন্ডিয়া’।
দেশটির প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র এ-সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম- ‘লেটার মার্কস নিয়ে ‘বাংলা পরীক্ষা’ পাশ করল ভারত’।
প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
ইনিংসের শেষ ওভারে জাডেজা এক রান নিয়ে ভারতকে তিনশোর গণ্ডি পার করতেই দেখা গেল সেই তথ্য। মেলবোর্নে আজ পর্যন্ত তিনশো রান তাড়া করে কোনও দলই জেতেনি। বাংলাদেশও জিতল না। স্বচ্ছন্দ্যেই বাংলাদেশকে ১০৯ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠে গেল ভারত।
মেলবোর্নে বৃহস্পতিবার সকালে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। প্রথমে রোহিত ও শিখর খুব সাবধানে ইনিংস শুরু করেছিলেন। রান রেট ঘোরাফেরা করছিল ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে। শিখর আজ তেমন একটা ফর্মে ছিলেন না। খুব ভাল টাইমিংও হচ্ছিল না তাঁর। ৫০ বলে ৩০ রানের ইনিংসে সেই ছাপ ছিল স্পষ্ট। ধবন আউট হওয়ার পর বেশি ক্ষণ টেকেননি ভারতের ‘পিন-আপ বয়’ কোহলিও। সম্ভবত অনুষ্কা অনুপস্থিত ছিলেন বলেই তেমন মেজাজে দেখা গেল না কোহলিকে। বেশি ক্ষণ টেকেননি রাহানেও। রাহানে যখন আউট হন, তখন ভারতের স্কোর ছিল ১১৫। তীব্র হচ্ছে ‘ব্যাঘ্র গর্জন’। কিন্তু সে বাঘকে খাঁচায় আটকানোর কাজটি ভাল ভাবেই করলেন রায়না-রোহিত জুটি।
রোহিত গুরুনাথ শর্মা। মরাঠী এই যুবকটিকে প্রতিভাবান বলেছেন অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা। তালিকায় রয়েছেন সচিন থেকে পন্টিং, সৌরভ থেকে নাসের। ওয়ান ডে’তে দু’টি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক রোহিত কিন্তু বিশ্বকাপে ফর্মের ধারেকাছেও ছিলেন না। কিন্তু মরাঠী যে তাঁর ফর্মে ফেরার জন্য মেলবোর্নকেই বেছে নেবে তা বোধহয় আন্দাজ করেননি মাশরফিরা। তবে ইতিহাস বলছে মেলবোর্ন হলেই জ্বলে ওঠার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি আছে রোহিতের। এ দিনের আগে ক্রিকেটের লালকেল্লায় রোহিতের দু’টি শতরান ছিল। তিন নম্বরটা করে স্যর ভিভ এবং ডেভিড গাওয়ারের কুলিন ক্লাবে জায়গা করে নিলেন তিনি। এই দু’জন ছাড়া মেলবোর্নে অন্য কোনও বিদেশি ব্যাটসম্যানের তিনটি শতরান নেই যে। এমসিজিতে ব্যাটিং গড়েও দু’নম্বরে উঠে এলেন তিনি। রোহিতের এ দিনের সেঞ্চুরি এল ১০৮ বলে। শেষ পর্যন্ত ১২৬ বলে ১৩৭ রান করে রোহিত যখন ফিরছেন, দল তখনই বেশ ভাল জায়গায়।
তবে শুধু রোহিত নয়। ভারতের ইনিংসকে মজবুত করতে সাহায্য করেন সুরেশ রায়নাও। রাহানে যখন আউট হন ২৮ ওভারে ভারত তখন ১১৫/৩। রায়না নেমে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন তাসকিন-রুবেলদের। চতুর্থ উইকেটে ১৬ ওভারে ১২২ রানের পার্টনারশিপ পাল্টে দেয় ম্যাচের রঙ।
ইনিংসের একেবারে শেষ দিকে জাডেজার ১০ বলে ২৩ রান ভারতকে ৩০০ পার করতে সাহায্য করে।
মেলবোর্নের মতো সুবিশাল মাঠে এত বড় স্কোর তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই স্বস্তিতে ছিল না বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালের আগে মাশরফিরা বারবারই বলছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য ছিল নক আউট পর্বে পৌঁছনো। সে কাজ সম্পন্ন করে যেন দেশে ফিরতে ব্যস্ত ছিল তারা। তাই রেকর্ড করে সেমিফাইনালে ওঠা তো দূর, সামান্য লড়াই করতেও দেখা গেল না তামিম-সাকিবদের। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার আট নম্বরে নামা নাসির হোসেনের। তা-ও মোটে ৩৫। সৌম্য সরকার (২৯), মাহমুদুল্লাহ (২১), মুশফিকুর (২৭) বা সাব্বির (৩০)— প্রত্যেকেই ভাল শুরু করলেও ইনিংস টেনে নিয়ে যেতে পারলেন না। এ দিনও ভাল বল করল ভারতের পেস ব্যাটারি। উমেশ চারটি, শামি দু’টি এবং মোহিত একটি উইকেট নেন। শামি আবার দু’টি উইকেট নেওয়ায় বিশ্বকাপে উইকেট শিকারীদের তালিকার ফার্স্ট বয় হয়ে গেলেন। আর সাতে সাত করার পথে ভারতীয়রা টুর্নামেন্টে ৭০টি উইকেটও নিয়ে ফেলল।
শুক্রবার তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান। সেই ম্যাচের বিজয়ীর সঙ্গে শেষ চারে দেখা হবে ভারতের। আপাতত ক্রিকেট প্রেমীরা চাইছেন, কালকের ম্যচে পাকিস্তানের জয়। তবেই যে সেমিফাইনালে ফের হবে সেই চিরকালীন যুদ্ধ।