DMCA.com Protection Status
title="৭

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নন,জিয়াউর রহমানই ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষকঃইতিহাস বিশ্লেষন পর্ব-১

mrsumon007_1322049419_1-akandablog_1182547587_1-Ziaur_Rahman15ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  পৃথিবীর  যে কোন সভ্য জাতিরই , ঐতিহ্যিক এবং সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন মানব সভ্যতার জন্য নিজ দেশের ইতিহাস জানাটা অপরিহার্য বিষয়। আর স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের মতো মহান বিষয়ে নির্মোহ, প্রামাণিক ও সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস জানার গুরুত্ব তো অপরিসীম। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে ক্ষমতার জোরে বিকৃত করে উপস্থাপন ও নিজস্বীকরণ করার যে অপচেষ্টা, তার বিপরীতে সত্য ইতিহাস তুলে ধরার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার এবারের বিষয়—বঙ্গবন্ধু  নন জিয়াই দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষনা।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নন বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এটি এখন নির্মোহ ইতিহাসের নিরপেক্ষ নিরিখের বাস্তবতা।


বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নয়, প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই দিয়েছিলেন। এ দাবির সত্যতা দালিলিক প্রমাণ হলো স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগ ৩ ধরণের দাবি উত্থাপন করে-


১. আওয়ামী লীগের একাংশের দাবি, ৭ ই মার্চেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এমনকি ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়ে এই বিষয়টিকে আদালতের মাধ্যমেও দলটি প্রমাণের চেষ্টা করে চলেছে।


২. আরেকাংশের দাবি, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পূর্বেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন? এবং তা ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার থেকে প্রথম প্রচার করা হয়।


৩. স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাটি মেজর জিয়া নন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছিলেন


এখন প্রমাণের বিষয়: আওয়ামীলীগের প্রথম দাবি অনুযায়ি, ৭ ই মার্চ কী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আদৌ কোন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন?


প্রথমে আমরা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের আগের কিছু ঘটনা জেনে নেই…১৯৭০ সালে স্বৈরশাসক ইয়াহিয়ার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৬ই জুন বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, “এমন কোনো শক্তি নাই যে পাকিস্তানকে ধংস করে!” ৭০ এর নির্বাচনে শেখ মুজিব ও আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল পাকিস্তানের সংহতির পক্ষে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে ঘোষণা করেছিলেন, ‘৬ দফা বাস্তবায়িত করা হবে। কিন্তু এর মাধ্যমে ইসলাম অথবা পাকিস্তানের জাতীয় সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ’

এরপরে ১৯৭০ সালের ৩০ নভেম্বর নির্বাচনের ৭ দিন আগে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘‘সামনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ অংশ নিয়াছে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান রচনার জন্য।’’মুজিবের এই সব বক্তৃতার কোথাও ”স্বাধীনতা” শব্দটি ছিলা না। বরং তিনি পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে তার বক্তৃতা শেষ করেছিলেন।অর্থাৎ, ১৯৭০ সালেও শেখ মুজিব পাকিস্তানের অখন্ডতা চেয়েছেন। এই পাকিস্তান জিন্দাবাদকে রক্ষার জন্য তিনি ১৯৭২ সাল অবধি চেষ্টা করে গেছেন।

 

এরপর এলো ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। সূর্যোদয়ের আগে ইয়াহিয়া ও মুজিবের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ টেলিফোন আলাপ চলে। তারপর টেলিপ্রিন্টারে বঙ্গবন্ধুর কাছে বার্তা পাঠান ইয়াহিয়া। তিনি মুজিবকে ৭ মার্চে কঠোর সিদ্ধান্ত না নিতে আহ্বান জানান। যার প্রমাণ রয়েছে সিদ্দীক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে। ব্যস, তাতেই রাজি হয়ে গেলেন শেখ মুজিব। যার কাছে ৭ কোটি মানুষ আশা করেছিল স্বাধীনতার ঘোষণা দিবেন তিনি। ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে তিনি বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা ও স্বপ্নকে বিলীন করে দিয়ে ইয়াহিয়ার স্বপ্নকে পূরণ করলেন। ইয়াহিয়ার সংবাদ পাওয়ার পর মুজিব কী করলেন?

 

সে ঘটনার বর্ণনা রয়েছে-সিদ্দীক সালিকের, উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থের ৫৩ পৃষ্টায়:শেখ মুজিব ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এর জিওসি জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার কাছে ২ জন বিশেষ দূত পাঠান। সেই দূত দুজন খাদিম হোসেন কে জানান শেখ মুজিব তার এক্সট্রিমিস্ট গ্রুপের প্রচন্ড চাপে আছেন। আগামী কাল মানে ৭ ই মার্চ তারিখ স্বাধীনতা ঘোষনার জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করছে। এই চাপ মোকাবেলা করার মত শক্তি শেখ মুজিবের নাই। এমতাবস্থায় শেখ মুজিব তাকে আর্মি হেফাযতে নেবার জন্য আহ্বান জানান। জিওসি মুজিবকে আশ্বস্থ করে সংবাদ পাঠালেন, আমি সেখানেই (রেসকোর্স ময়দানে) থাকবো চরমপন্থিদের আক্রোশ থেকে তাকে রক্ষা করতে।


আর যে কারণেই বঙ্গবন্ধু মুজিব ৭ মার্চের ভাষণের সময় বারবার পিছনের দিকে তাকাচ্ছিলেন।যার প্রমাণ রয়েছে নির্মল সেনের লেখায়।


এন্তনী মাসকারেনহাসের ‘দ্য রেপ অব বাংলাদেশ’, ১৯৭১ গ্রন্থটির ১০৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
১৯৭১ এর ৩ থেকে ২৫ মার্চ বাঙালি সেনারা তিনবার পৃথক ভাবে শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করে নির্দেশ চেয়েছেন, কেননা যা ঘটবে সে সম্বন্ধে তাদের কোন সংশয় ছিল না। প্রতিবারই শেখ মুজিব বাঙালি সেনাদের সঙ্গে মামুলি ধরণের কথা বার্তা বলেছেন।


মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একনিষ্ঠ সহযোগী তাজউদ্দিন আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ৭ মার্চের আগে স্বাধীনতার একটি ঘোষণাপত্র পাঠের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনিতা ঘোষণায় অস্বীকৃতি জানান।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাজউদ্দিনকে বলেন, এটা করা হলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে। তাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বায়ত্বশাসন।


আওয়ামী লীগ আবদার করছে,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ ই মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা। কারন ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে তিনি বলেছেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারেরসংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”


এনতলী মাসকারেনহাস এর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ১১০ ও ১১১ পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবের ৭ মার্চের বক্তব্য সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে দেখুন:


শেখ মুজিব একজন বজ্রকন্ঠি বক্তা। সেদিন (৭ই মার্চ) রেসকোর্স ময়দানের বক্তৃতায় তিনি সব কিছুই ব্যবহার করেছেন- যথার্থ শব্দের মুর্ছনা, তীব্র শ্লেষ, বজ্র কণ্ঠের মন্ত্রপূত আহ্বান। কিন্তু তিনি যাবলেছেন তার সঙ্গে সে সময়ের জনগনের প্রত্যাশার সাথে মিল ছিল না।


৭ মার্চের বক্তৃতা শেষ করার পর তিনি কিছুক্ষণের জন্য নীরব দাঁড়িয়ে রইলেন এবং বিরাট জনসমুদ্রের দিকে তাকিয়ে তাদের নৈরাশ্য ভাব উপলব্ধি করলেন। এবার তিনি তার দৃষ্টি উত্তোলন করে বজ্রকন্ঠে উদাত্ত আহ্বান জানালেন… ‘আমাদের এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। অর্থাৎ, মুজিব স্বাধীনতার বিষয়ে কোন কথাই তুলতে চাননি তার রেসকোর্স ময়দানের বক্তৃতায়।

কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ স্বাধীনতার প্রশ্নে ব্যাপক উত্তেজিত ছিল। মুজিব যখন বুঝলেন যে স্বাধীনতার ব্যাপারে কোন কথা না বললে তিনি উত্তেজিত জনতাকে কোনভাবেই সামলাতে পারবেন না। যে কারণে বক্তৃতা শেষ করেও আবার স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা দেন। এবং বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা জয় পাকিস্তান বলে শেষ করলেন। উভয় পক্ষকেই ঠান্ডা করলেন তিনি। যেটা স্বাধীনতাকামী উত্তাল জনস্রোতের জনআকাঙ্ক্ষার সাথে প্রতারণার শামিল।


প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনীতিক নির্মল সেন ‘জয় বা জিয়ো পাকিস্তান’ বলে ৭ই মার্চের ভাষণ শেষ করার বিষয়টি তার ‘‘'জয় পাকিস্তান' বলা সম্পর্কে আমার সঙ্গে শেখ সাহেবের আলাপ’’ নামের লেখায় দারুণভাবে উল্লেখ করেছেন: সংক্ষেপে তার অভিজ্ঞতাটি তুলে ধরা হলো:


শেখ সাহেব ভাষণের মাঝে মাঝে পেছনের দিকে তাকাচ্ছিলেন। পেছনে ছিল ছাত্রলীগ নেতারা। তিনি এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম বলে একটু থামলেন এবং পেছনে ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলমখানের কাছে কি যেন জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর তিনি বললেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান। এরপর সভা ভাঙল। জনতার একটি অংশের মনে যেন কিছু না পাওয়ারক্ষোভ থেকে গেল। তারা সবাই ওইদিনই চেয়েছিল শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণা করুক। কিন্তু তা শেখ সাহেবের পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না। …. … …


'জিয়ো পাকিস্তান' বলা সম্পর্কে আমার সঙ্গে শেখ সাহেবের আলাপ হয়েছিল। আমি বললাম, আপনি জিয়ো পাকিস্তান বললেন কেন? শেখ সাহেবের মুখ কালো হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আমাকে

স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হলে অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারকে শেষ কথা বলতে হবে। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ভুট্টো। তার সঙ্গেও কথা বলতে হবে। আমি এই আলোচনাশেষ না করে কিছু করলে পৃথিবীতে আমি জবাবদিহি করতে পারব না। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হয়েও আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না। এই প্রেক্ষিতে আমি কিছুটা বিরক্ত এবং অসহিস্নু হতে পারি মাত্র, এরবেশি কিছু নয়। সবদিক এত অপ্রস্তুত রেখে একটি দেশকে আমি সংগ্রামের মুখে ঠেলে দিতে পারি না।


বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের তারিখ’ প্রথম সংস্করণে তিনি উল্লেখ করেছেন, ভাষণের শেষে শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, ‘জয় বাংলা। জিয়ো পাকিস্তান।’
দৈনিক জনকন্ঠের ‘কালের ধুলোয় লেখা’ শিরোনামে ধারাবাহিক লেখায় কবি শামসুর রহমান বলেছেন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ কথা ছিল ‘জিয়ো পাকিস্তান’।


স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করা মানে যুদ্ধের পূর্বে যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় সেটাকে বলে। আর স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার অর্থ হল সম্পূর্ণ সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র এর অবস্থিতি ঘোষণা করা। যেটা   বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কখনই দেননি, এমনকি চানওনি

 

চলবে…………………………….

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!