প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদে বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আইন-কানুন, আদালত-সংবিধান কিছুই মানেন না। কিন্তু আমরা আইন মানি, আইনকে রক্ষা করি। তাই আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। আইন ও আদালত যে নির্দেশনা দেবে, সেই নির্দেশ আমরা মেনে চলব। দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আদালত যদি বলে অবরোধ-হরতাল আহ্বানকারী বিএনপি নেত্রীসহ অন্যদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নাশকতায় নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে, আমরা তাই করব। তবে আইনের বাইরে যাওয়ার আমাদের কোনো সুযোগ নেই।
শামসুল হক চৌধুরীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে স্থানীয় নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে না হলেও ফলাফল ঘোষণার সময় তা দলীয়ভাবেই লেখা হয়। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যেসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমাদের দেশেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রচার করার বিধান থাকা প্রয়োজন বলে আমিও মনে করি। সংসদ সদস্যরা চাইলে এ ব্যাপারে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এ কে এম শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, হায়াত-মউত, ক্ষমতা দেওয়া ও কেড়ে নেওয়ার মালিক আল্লাহ। আমি দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করি, নিজের জন্য নয়। প্রতিনিয়ত মৃত্যুভয় নিয়ে চললে তো দেশের এত উন্নয়ন করতে পারতাম না। তাই আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। বার বার আমার ওপর আঘাত এসেছে, ভবিষ্যতেও হয়ত আসবে।
তিনি বলেন, শুনছি আমাকে হত্যা করা হবে, কে কখন মারবে এই দুঃচিন্তা নিয়ে চললে তো দেশ ও জনগণের জন্য কিছু করতে পারব না। এতবার চেষ্টা করেও বিএনপি নেত্রী ও বিএনপি-জামায়াত আমাকে হত্যা করতে পারল না, এই দুঃখ তো তাদের। এই দুঃচিন্তা আমি করি না। দেশ ও জনগণের কল্যাণে জীবনের যত বড় ঝুঁকি নিতে হয়, আমি তা নিতে প্রস্তুত।
আওয়ামী লীগের সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আন্দোলন যৌক্তিক পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বিএনপি নেত্রীর এ সব কর্মসূচিই বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দিবে, আর এটাই হবে তার তথাকথিত আন্দোলনের যৌক্তিক পরিণতি।
সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেত্রী দেশের আইন মানেন না। কোর্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়েছে অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি আইন অমান্য করছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) যদি কোর্টে আত্মসমর্পণ না করেন, তবে থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা যাওয়ামাত্র পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেত্রী খালেদা জিয়া গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে তার হিংসার রূপ আবারও প্রকাশ করেছেন। এতগুলো মানুষ মারা গেল অথচ তিনি তার বক্তব্যে তাদের প্রতি সমবেদনাটুকুও জানাননি। আসলে এই নিরীহ মানুষগুলোকে খালেদা জিয়া হত্যা করেছেন। তাই সমবেদনা জানানোর মানসিক শক্তিটুকুও তার ছিল না। জঙ্গি নেত্রীর কথা দেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংসদ নেতা বলেন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করছে। নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী, অর্থায়নকারী ও পরিকল্পনাকারীদের কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। এ ছাড়া সকল জঙ্গি, আসামী গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদকদ্রব্যসহ সকল ধরনের অবৈধ মালামাল উদ্ধারে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।
বিএনএফের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, একজন নেত্রী আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছেন, সম্পদ বিনষ্ট করছেন, আর আমরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। একজন নেতা-নেত্রীর কাজই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়ন সাধিত করা। তিনি আরো বলেন, কিন্তু যিনি আগে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে তাদেরকে হত্যা করছেন! দেশের জনগণের প্রতি তার ন্যূনতম দায়িত্ববোধ নেই। আর তিনি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না বলেই একাত্তরের মতোই দেশের মানুষকে হত্যা করছেন, জ্বালাও-পোড়াও চালাচ্ছেন। তবে দেশের মানুষ জঙ্গি নেত্রী খালেদা জিয়াকে প্রত্যাখ্যান করে নাশকতা দমনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে বলেই আমরা সবকিছু মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।