DMCA.com Protection Status
title="৭

অনিয়ম দেখলেই সবাই মিলে প্রতিবাদ করবেন, ভোটগ্রহন শেষে কেন্দ্র পাহারা দিবেনঃদেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া

madam6সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলসমর্থিতদের বিরুদ্ধে ‘অনিয়ম ও টাকা ছড়ানোর’ অভিযোগ এনে ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা বসাতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপাসরন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারে নেমে দারুণ সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আমি নিশ্চিত, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ একটুখানি সুযোগ পেলেই নীরব ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে অত্যাচারের বদলা নেবে, উপযুক্ত জবাব দেবে।”
রোববার বেলা ২টায় গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

ঢাকায় ভোটের প্রচারের সময় গাড়িবহরে হামলার ঘটনা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, “এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সুপরিকল্পিত উসকানির পর যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা এই হামলা চালায়।”

বর্তমান সরকার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, ক্ষমতায় থাকার অধিকার তাদের নেই।”

ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের মগ মার্কা, উত্তরে তাবিথ আউয়ালের বাস মার্কা ও চট্টগ্রামে মনজুর আলমের কমলা লেবু মার্কায় ভোট চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আপনাদের ভোট অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক বিরাট শক্তি। ভোট হচ্ছে জনগনের এক বিরাট ক্ষমতা। সঠিকভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করুন, নীরব বিপ্লব ঘটান।’’

‘‘ আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। মা-বোন-মুরুব্বী-তরুনসহ সব বয়স ও শ্রেনী পেশার ভোটার সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে যাবেন। লাইন ধরে শান্তিপুর্ণভাবে ভোট দেবেন। অনিয়ম ও কারচুপি দেখলে সবাই মিলে প্রতিবাদ করবেন।’’

ভোটগ্রহন শেষে বিকাল থেকে ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়ার আহবান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ গণনা শেষে ফলাফল বুঝে নিয়ে আপনারা কেন্দ্র ত্যাগ করবেন। যাতে আপনাদের দেয়া রায় ওপর বদলে ফেলতে না পারে।’’

ভোটের দিন ও এর পরে কোনো ‘উস্কানির ফাঁদে পা না দেয়া’ ও ‘গুজবে’ কান না দেয়ার দেয়া আহবানও রাখেন তিনি।
ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে হুশিয়ারি

খালেদ জিয়া হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার ফলাফল মেনে নেয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সন্ত্রাস ও কারচুপি হলে প্রতিটি কেন্দ্র ও এলাকা থেকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’’

তিনি সবাইকে ২৮ এপ্রিল সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে এবং কোনো অয়িনয়ম দেখলে প্রতিবাদ করতে বলেন। 
আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ এনে ভোটারদের উদ্দেশে খালেদা বলেন,  “টাকা নেবেন, কিন্তু বিবেক অনুযায়ী ভোট দেবেন।”

সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাখ্যা
সংবাদ সম্মেলনে কেনো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট সমর্থন নিচ্ছে তা ব্যাখ্যা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আমরা এই নির্বাচনকে সরকার, শাসক দল, নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছি।এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কোনো পরিবর্তন হবে না।’’

‘‘ এমন একটি নির্বাচনেও যদি তারা (ক্ষমতাসীন) যথাযথ আচরণ  না করে, যদি সকল পক্ষের জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টি না করে, যদি নিরাপদ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারে এবং যদি সন্ত্রাস, ডাকাতি, কারচুপির মাধ্যমে তারা জনগনের রায়কে বদলে ফেলে, তাহলে সকলের কাছে, আবারো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে, এদের অধীনে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবান্তর।’’

সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সঙ্গে নির্দললীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি থেকেও সরে যাননি বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

তিনি বলেন,‘‘ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবেও না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আমরা আগেও অংশ নিয়েছি, এখনো নিচ্ছি। জাতীয় নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় বলে সেই নির্বাচন এরকম সরকারের অধীনে সুষ্ঠু হতে পারে না।’’
নির্বাচন কমিশন ঠুটো জগন্নাথ

খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ এই কমিশন ঠুটো জগন্নাথ।নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের রয়েছে চরমভাবে দলীয়করণ করা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আসন্ন সিটি নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে আমাদের সন্দেহ ছিলো, আছে।’’
আবারো সেনা মোতায়েন দাবি

আবারো সশস্ত্রবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে ভোট কেন্দ্রে মোতায়েনের দাবি পূনরায় জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর ওপর সকলের আস্থা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে নির্বাচন কালীন দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে সাহসিকতার সঙ্গে পালনের ব্যাপারে এই বাহিনী গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য স্থাপন করেছে। নিজের দেশেও তারা সফলভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনো তারা এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে আমরা মনে করি।’’

‘‘ দুভার্গ্যের বিষয় ক্ষমতাসীনদের ইংগিতে তাদের ভোট ডাকাতির পরিকল্পনার দোসর হয়ে তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের কথা বলে এক ধূর্ত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তাই আবারো আমরা বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনী এলাকা জুড়ে ভোটের দিন এবং আগে-পরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোতায়েন করতে দাবি জানাচ্ছি।’’

আন্দোলনের কর্মসূচি সামনে রেখে গত ৩ জানুয়ারি থেকে একটানা ৯২ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানের পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন খালেদা জিয়া। কার্যালয়ে অবস্থানকালে গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!