রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদসহ প্রতরণার মাধ্যমে গাড়ি ছিনিয়ে নেয়া চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালিত হয়।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ২৭ রাউন্ড গুলি, চারটি পোট্রোল বোমা, পুলিশের ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাপ, দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক ছোরা ও বিভিন্ন পশুর চামড়া উদ্ধার করা হয়।
আটকৃতরা হলেন- রোখসানা (৫০), তার ছেলে জুনায়েদ (২৮), জুনায়েদের বান্ধবী আফসারা (২৫) ও বন্ধু তুষার (২৮)। আটককৃতদের নিয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ (ডিসি) কমিশনার লুৎফুল কবির বাংলামেইলকে বলেন, ‘তারা অভিজাত পরিবারের ভয়ঙ্কর অপরাধী। অভিনব পন্থায় তারা গাড়ি ছিনতাই করে থাকে। চক্রটি নারীদের ব্যবহার বরে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাওয়া অস্ত্রে প্রমাণ হয় তারা বড় ধরনের অপরাধী চক্র। আমরা এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অপরাধের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করছি।’
বনানী থানার ওসি ভুঁইয়া মাহবুব হাসান বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে আছে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি ম্যাগজিন, ২৭ রাউন্ড গুলি ও গুলির খোসা, ২৭টি বিভিন্ন ধরনের দেশি বিদেশি ছোরা, একটি এয়ারগান, চারটি শক্তিশালী পেট্রোল বোমা, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, একটি বাঘের, দু’টি ভল্লুকের, একটি কুমিরের ও একটি হরিণের চামড়া। এ ঘটনায় থানায় অস্ত্র ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষন আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে সৌহার্দ নামের এক যুবক মোবাইল বিক্রির জন্য তার বন্ধু হামজা নীলের কাছে যায়। হামজা কৌশলে সৌহার্দকে আফসারার নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। সৌহার্দ তার প্রিমিও (সাদা রঙ) গাড়ি নিয়ে বনানীর ১১ নম্বর রোডের এক চাইনিজ রেস্তেরাঁর সামনে আসে। এ সময় আফসারার বন্ধু জুনায়েদ ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি নিয়ে সৌহার্দর গাড়িতে ধাক্কা দেয়। জুনায়েদ গাড়ি থেকে নেমে বাকবিতণ্ডার ছলে সৌহার্দকে টেনে হিঁচড়ে তার গাড়িতে তোলে। জুনায়েদের সহযোগীরা সৌহার্দর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমন সময় থানা পুলিশের টহলগাড়ি বিটিসিএল অফিসের কাছে তাদের আটকায়। সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও জুনায়েদ ও আফসারা পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। গাড়ি তল্লাশি করে লোহার রড ও দু’টি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জুনায়েদ স্বীকার করে তার কাছে আরও অস্ত্র আছে।
সূত্র জানায়, রোববার সকাল ৯টার দিকে বনানী ১ নম্বর রোডের এফ ব্লকের ১০৫ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশের ব্যবহৃত একটিসহ তিনটি পিস্তল, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাপ, বাঘ ভল্লুকের চামড়া, বিয়ার, মদ, ফেনসিডিল, পেট্রোল বোমা উদ্ধার করা হয়। পরে সেখান থেকে আটক করা হয় জুনায়েদের মা রোখসানা বেগমকে।
জানা যায়, সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তার সন্তান জুনায়েদ। অভিজাত পরিবারের সন্তান জুনায়েদ কয়েক বছর ধরেই গাড়ি ছিনতাই, ডিবি পরিচয়ে অপহরণসহ অনেক অপরাধে জড়িত। মহাখালীর আরজতপাড়ার সন্ত্রাসী রনি, অং ও মুন্না তার অন্যতম সহযোগী। তারা আফসারাকে দিয়েই টার্গেট করা ব্যক্তিদের গাড়ি নিতো; না হলে ধরে এনে নির্যাতন করে টাকা আদায় করতো।
সূত্র জানায়, আফসারার বাসা উত্তরায়। তিনি এক সময় মালোয়েশিয়াতে থাকতেন। সেখানে গাড়ি চুরির অপরাধে তাকে সে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তিনি ঢাকায় এসে একই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। আফসারা ইয়াবায় আসক্ত।