DMCA.com Protection Status
title="৭

ঢাকায় মোদির বক্তব্য নিয়ে পাকিস্তান ভারত বাকযুদ্ধ

nawazক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে যে বক্তব্য রেখে গেছেন তার রেশ কাটেনি বরং ওই ভাষণে পাকিস্তান সম্পর্কে মোদির বক্তব্য নিয়ে রীতিমত বাকযুদ্ধ চলছে দুটি দেশের মধ্যে।

পাকিস্তানের সংসদে ঢাকায় মোদির বক্তব্য নিয়ে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করে বলা হয়েছে এধরনের বক্তব্য উত্তেজনাসৃষ্টিকারী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ঢাকায় মোদি তার ভাষণে বলেন, পাকিস্তান ভারতে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে এবং ওই যুদ্ধের পর যে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যকে ভারত ফেরত পাঠিয়েছে তা শান্তির দিকটি বিবেচনা করেই।

মোদির এ বক্তব্যকে সহজভাবে নেয়নি পাকিস্তানের মিডিয়া। সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, সেনাবাহিনী প্রধান, মন্ত্রী থেকে শুরু করে সিনিয়র সাংবাদিকরা মোদির বক্তব্যের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি পাকিস্তান মোদির বক্তব্য নিয়ে জাতিসংঘের কাছে নালিশ জানানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ বলেছেন, শবে বরাতের রাতে বাজি ফোটানোর জন্য আমরা পরমাণু বোমা তৈরি করিনি। দেশকে প্রতিরক্ষার জন্য আমরা পরমাণু বোমা তৈরি করেছি। উৎসব করার জন্য নয়। তিনি বলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তিকে ধ্বংস করার জন্যই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভারত এই আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছে।

এরই মাঝে মায়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ঢুকে ভারতীয় সেনাবাহিনী এক অভিযান চালালে মনিপুরের বেশ কিছু জঙ্গি মারা যায়। ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ওই অভিযানে শ’খানেক জঙ্গি মারা গেছে। ভারত ওই অভিযানে বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।

তবে মায়ানমার বলছে, ওই অভিযান ভারতের মাটিতেই হয়েছে এবং মায়ানমারে ভারত হামলা করলে তা বরদাশত করা হবে না। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর  পারিক্কর বলেছেন, মায়ানমার সীমান্তে ভারতের সেনাবাহিনী জঙ্গিদের ওপর যে হামলা করেছে তা প্রতিবেশী দেশগুলোর মনোভাবে পরিবর্তন এনেছে।

ভারতের তথ্য প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর মায়ানমার সীমান্তে ওই অভিযানকে তার দেশের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এই অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানসহ সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে চায় ভারত। প্রয়োজনে পাকিস্তানেও মায়ানমারের মত এধরনের অভিযান চালাতে পারে ভারত এমন ব্ক্তব্য দিচ্ছেন ভারতীয় নেতারা।

জবাবে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেছেন, তার দেশকে মায়ানমার ভাবা ভারতের উচিত হবে না। তিনি আরো বলেছেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী বিদেশি যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম এবং ভারতীয় নেতাদের দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করা উচিত। পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকায় যে বক্তব্য দিয়েছেন ও ভারতীয় নেতাদের এধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে চৌধুরী নিসার জোর দিয়ে বলেন, অতীতে ভারত কিছু চক্রান্ত করে হয়তো সফল হয়ে থাকতে পারে তবে ভবিষ্যতে তা আর হতে দেয়া হবে না।

এদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য পকিস্তানের পুরনো ক্ষত খুঁচিয়ে দিয়েছে এবং মোদীর বক্তব্য দু’দেশের মধ্যকার সংলাপের পরিবেশকে তিক্ত করে তুলেছে। ভারত যদি কোনো রকম আঘাত হানার চেষ্টা করে, পাকিস্তান তার উপযুক্ত জবাব দেবে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ বলেছেন, ভারতের রাজনীতিকরা যেন তার দেশের দিকে কুদৃষ্টিতে না তাকান। তিনি আরো বলেছেন, যেকোনো মূল্যে পাকিস্তান ভারতীয় নেতাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করবে এবং নিজের অখণ্ডতা রক্ষা করবে।

এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ বলেছেন, ১৯৭১ সালে তার ভাষায় পূর্ব পাকিস্তান ভাঙার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা তুলে ধরার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেবে ইসলামাবাদ। পাক সিনেটকে এ কথা বলেছেন তিনি। পাকিস্তানের বর্তমান মন্ত্রিসভায় কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেই। সারতাজ আজিজই কার্যত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বুধবার পাক সিনেটে দেয়া বক্তৃতায় তার ভাষায় আরো বলেন, সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার ভারতীয় হুমকির বিষয়টিও তুলে ধরা হবে। নাশকতামূলক তৎপরতার চালিয়ে পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার কথা স্বীকার করে ভারতের খোলাখুলি বক্তব্যের প্রতি নজর দেয়ার জন্যও তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।

সূত্র -টাইমস অব ইন্ডিয়া/এনডিটিভি/ ডন/ এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

Share this post

error: Content is protected !!