ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শুক্রবার ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের শুনানির পর যদি শুধু মহেন্দ্র সিং ধোনি শাস্তি পেতেন, তাহলে বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিত না ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ম্যানেজমেন্ট। ধোনির পাশাপাশি মুস্তাফিজুর রহমানকেও শাস্তি দেওয়ায় আপাতত ‘শান্ত’ ভারতের ক্রিকেট শিবির।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে এমনটাই বলা হয়েছে। ভারতীয় এই দৈনিকটির অনলাইন সংস্করণের ‘ইনসাইড স্টোরি: দ্য থ্রি অপশন গিভেন টু ধোনি অ্যান্ড ইন্ডিয়াস স্ট্যান্ড টু মুস্তাফিজুর পেনাল্টি অ্যাট কলিশন হিয়ারিং’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
শিরোনামেই ইঙ্গিত আছে ভারতের শক্তি প্রদর্শনের আকাঙ্ক্ষার। ভারতীয় দলের ভেতরের সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, ধোনি-মুস্তাফিজ ইস্যুতে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ‘শোডাউনে’র প্রস্তুতি নিচ্ছিল!
পত্রিকাটি লিখেছে, মাঠের দুই আম্পায়ার তাঁদের প্রতিবেদনে শুধু ধোনিকেই অভিযুক্ত করেছিলেন, মুস্তাফিজকে নয়। তাই এই প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে, যে প্রশ্নটা গতকাল থেকে বাংলাদেশ তো বটেই, অনেক নিরপেক্ষ সমর্থকও করছেন: ইচ্ছে করেই ধাক্কা দিলেন ধোনি, কিন্তু শাস্তি কেন দেওয়া হলো দুজনকেই, যেখানে ধোনি এত অভিজ্ঞ, আর মুস্তাফিজের মাত্র অভিষেকই হলো? তবে কি ভারত দল আর ধোনিকে শান্ত করতেই একটা ‘ভারসাম্য’ করার চেষ্টা? আর সে কারণেই শাস্তি পেলেন মুস্তাফিজও?
শুনানিতে, ধোনির সামনে তিনটি বিকল্প তুলে দিয়েছিল আইসিসি। অপরাধ মেনে শাস্তির মুখে দাঁড়ানো, যেটাকেই মনে হয়েছে যথার্থ। বাকি দুটো বিকল্প হলো, দায় স্বীকার করে কম শাস্তির জন্য আবেদন করা। কিংবা অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা। আগের রাতে পরাজয়ের যন্ত্রণায় জ্বলতে থাকা ভারতের কাছে ব্যাপারটি শেষ পর্যন্ত অহংবোধের লড়াই হিসেবেই মনে হয়েছে।
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে মনে হয়েছে, অপরাধ স্বীকার করে নেওয়া মানে আরেকটি পরাজয়। ক্রিকেটীয় আইনে ধোনি তো ঠিকই আছেন। আইনের চোখে মুস্তাফিজ ভুল করেছেন ব্যাটসম্যানের দৌড়ের পথে গিয়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এর আগেও একবার একই ঘটনা ঘটনায় এটা স্পষ্ট, মাত্র প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা এই ১৯ বছর বয়সী আসলে ব্যাপারটি সম্পর্কে তেমন একটা অবগতই নন। বরং ভিডিও রিপ্লেতে স্পষ্ট বোঝা গেছে, ধোনি ইচ্ছে করেই মুস্তাফিজকে ধাক্কাটি মেরেছেন। যেটি তিনি না করলেও পারতেন। ম্যাচ রেফারি পাইক্রফটের মূল্যায়নেও সেটাই উঠে এসেছে।
তিনিও বলেছেন, ধোনির ধাক্কা ইচ্ছাকৃত। কিন্তু ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এক রকম প্রস্তুত ছিল, শুধু ধোনিকে শাস্তি দেওয়া হলে তারা বিষয়টি একেবারেই মেনে নেবে না। দরকার হলে আইসিসির দরবারে তা তোলা হবে। রাত একটার দিকে ভারতীয় দল যখন টিম হোটেলে পৌঁছায়, তখনই তাদের কাছে খবর আসে, মাঠের আম্পায়ারদের লিখিত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত করা হয়েছে শুধু ধোনিকে। বিষয়টি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট একাধিকবার বৈঠকে বসেছিল বলে লিখেছে হিন্দুস্তান টাইমস।
শেষ বৈঠকটি হয় ধোনি, টেস্ট অধিনায়ক কোহলি, দলের পরিচালক রবি শাস্ত্রী আর ম্যানেজার বিশ্বরূপ দের মধ্যে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, শুধু ধোনি শাস্তি পেলে বিষয়টি নিয়ে লড়বে ভারত। তবে শেষ পর্যন্ত দুজনকেই শাস্তি দেওয়া হয়। ধোনিকে ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ আর মুস্তাফিজকে জরিমানা করা হয়েছে ৫০ শতাংশ। ধোনির শাস্তিটা ‘বেশি’ হয়ে গেছে, তার পরও সেটি মেনে নিয়ে বিষয়টি নিয়ে আর না এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।
কিন্তু শুধু ধোনি শাস্তি পেলে, আইনত যেটা হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন অনেকে, ভারত ঠিক কীভাবে ‘শোডাউন’ দেখাত, সেটি অবশ্য প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়নি। এর আগে একাধিকবার এ ধরনের ঘটনায় ভারত তাদের জোর দেখিয়েছে।
সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত হরভজন বনাম সাইমন্ডসের সেই বহুল আলোচিত ঘটনা। যেখানে সাইমন্ডসকে বর্ণবাদী গালি দিয়ে নিষিদ্ধ হন হরভজন, পরে অবশ্য তা তুলে নেওয়া হয়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।