DMCA.com Protection Status
title="৭

এফবিসিসিআই এর চীন সফরে লাভবান হলেন মাতলুব আহমাদ!

nitolক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই)সদ্য নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে  প্রথম বিদেশ সফরেই ব্যক্তিস্বার্থে ব্যাপক ব্যাবসায়িক সুবিধা নিলেন শেখ হাসিনা সরকারের অত্যন্ত ঘনিস্ট জন হিসাবে পরিচিত আবদুল মাতলুব আহমাদ।

সম্প্রতি চীন সফরকালে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষে একটি সমঝোতা স্মারক সই করলেও নিজ প্রতিষ্ঠান নিটল মোটরসের পক্ষে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন তিনি।

বলা যায়, মাতলুব আহমাদের চীন সফরে এফবিসিসিআইয়ের ব্যানারে নিটল মোটরসের কার্যসিদ্ধি হয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল ১৫-১৭ জুন ষষ্ঠ সাউথ এশিয়া-সিচুয়ান বিজনেস কনফারেন্সে যোগ দিয়েছে। এ কনফারেন্সে যোগ দিতে গিয়ে আবদুল মাতলুব আহমাদের মালিকানাধীন নিটল মোটরস, চেঙ্গদু বাস কোম্পানি লিমিটেড, হাইড্রো চায়না চেঙ্গদু ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড এবং সিচুয়ান চায়না বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে।

সিচুয়ান চায়না বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ে অংশীদার হিসেবে এফবিসিসিআইকেও রাখা হয়। এছাড়া চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি) সিচুয়ান এবং এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

‘এফবিসিসিআইয়ের ব্যানারে নিটলের ব্যবসা’— ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, প্রথমত. সফরে গিয়ে চেষ্টা করেছি সবাই যাতে এগিয়ে যায়। কনফারেন্সে চীনা উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে এসেছি। আর যে চুক্তিগুলো নিটলের সঙ্গে হয়েছে, তা তাৎক্ষণিক হয়েছে। এসব চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বাংলাদেশে আসবে, তখন দেশীয় কোনো ব্যবসায়ী চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার সুযোগ গ্রহণ করতে চাইলে তাদেরই প্রাধান্য দেয়া হবে, নিটলকে নয়।

উল্লেখ্য, নিটল মোটরসের সঙ্গে ভারতীয় গাড়ি উৎপাদনকারী টাটা মোটরসের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ভারতীয় মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক হিরো মোটর করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় মাতলুব আহমাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি অবকাঠামো, কৃষি, শিল্প এবং যোগাযোগে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়াতে জোর দিয়েছেন। দেশের যোগাযোগ খাত উন্নয়নে এবং পানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো তৈরিতে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় বিদ্যুৎ আমদানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, সঞ্চালন লাইন, জ্বালানি উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি ও এলএনজি আমদানি, সমুদ্রে ও স্থলে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, সড়ক, সেতু, রেল খাতের উন্নয়ন, বন্দর উন্নয়ন, গভীর সমুদ্রবন্দর, বন্দর ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রভিত্তিক অবকাঠামোসহ সরকারের বেশকিছু অগ্রাধিকার প্রকল্প বর্তমানে পাইপলাইনে রয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে চীনা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। এছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) চীনা বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মাতলুব আহমাদ এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হওয়ার পর এটিই তার প্রথম বিদেশ সফর।

ফলে আশা ছিল সফরকালে তিনি ব্যবসায়ী সমাজের স্বার্থে কিছু করবেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সার্বিক স্বার্থের চেয়ে নিজের ব্যবসাকেই তিনি বড় করে দেখেছেন বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া যে বিষয়গুলো নিয়ে তিনি কনফারেন্সে আলোচনা করেছেন, সে-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব, দিকনির্দেশনা বা প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসতে পারেননি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য চীন সফর করেছে এফবিসিসিআই প্রতিনিধি দল।

দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির ম্যান্ডেট নিয়েই প্রতিনিধি দল বিদেশ সফর করে। সেখানে গিয়ে নিজ স্বার্থকে বড় করে দেখা কতটা যুক্তিসঙ্গত, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ দেশের সব এলাকার ব্যবসায়ীদের চাঁদায় এফবিসিসিআইয়ের তহবিল গঠন হয়। এজন্য সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের কাছে সবাই সামগ্রিক মঙ্গলের জন্য কাজের প্রত্যাশা করেন। কিন্তু বরাবরই এফবিসিসিআই নেতারা বিদেশ সফরেই বেশি আগ্রহী। নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থের প্রাধান্যই তাদের কাজে প্রতিফলিত হয়।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের এবারের চীন সফর নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা মূলত দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের জন্য বিদেশ সফরে যায়। ফলে সেখানে গিয়ে তারা নিজেদের কোনো সমঝোতা বা চুক্তি করলে সেটা দোষের কিছু নয়। তবে এ ধরনের চুক্তি বা সমঝোতা ব্যক্তিগত সফরে হলেই ভালো হতো। সমঝোতাগুলো বেশ আগে থেকেই তৈরি হয়ে থাকতে পারে। হয়তো এ সফরে কেবল আনুষ্ঠানিক সই হয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!