ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো সময় তার মন্ত্রীসভায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। দফতর পরিবর্তন ছাড়াও মন্ত্রিসভায় নতুন অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। গত দেড় বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় কারও কারও কপালও পুড়তে পারে। বাদ পড়ার আশংকা রয়েছে কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর। বিগত দেড় বছরে যেসব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কারণে সরকার এবং দলকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে, লাগামহীন কথাবার্তায় বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে বারবার এবং দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় যারা সফলতা দেখাতে পারেননি, তাদেরও কপাল পুড়তে পারে এবার।
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে মধ্যবর্তি নির্বাচনকে মাথায় রেখে এবারের মন্ত্রীসভার অন্তর্ভূক্তি/সম্প্রসারন হতে যাচ্ছে।অন্যতম চমক হিসাবে বিকল্প ধারার যূগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহি বি চৌধুরীকে পূর্ন মন্ত্রী করা হতে পারে।আগাম নির্বাচনে বি,চৌধুরী এবং মাহি বি চৌধুরীর অংশ গ্রহনের পূর্ব শর্তে এই নিয়োগ হতে পারে জানা গেছে।বিএনপির প্রথম মহাসচিব প্রফেসর ডাঃ বি, চৌধুরীকে ব্যাবহার করে আরেকটি বিএনপি দাড় করানোর পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা যায়।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী তার প্রেস সচিব শামীম চৌধুরীকে বাদ দিয়ে নতুন প্রেস সচিব হিসেবে রাষ্ট্রপতির সাবেক প্রেস সচিব এহসানুল করিম হেলালকে নিয়োগ দিয়েছেন। খুঁড়িয়ে চলা প্রেস উইংকে আরও গতিশীল করতে নেয়া হতে পারে কার্যকর উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পার্সোনাল উইংয়েও পরিবর্তন আনার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন।
গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং ২ উপমন্ত্রী শপথগ্রহণ করেন। পরে আরেক দফা ২৫ ফেব্রুয়ারি এএইচ মাহমুদ আলী ও নজরুল ইসলাম যথাক্রমে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। তারপর মন্ত্রিসভায় আর কোনো পরিবর্তন বা অন্তর্ভুক্তির ঘটনা ঘটেনি।
তবে হজ, ধর্ম ও সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়ে জেলহাজতে আছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। দুর্নীতির একটি মামলায় সাজা থাকায় ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হয়েছে।
১৪ জুন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে ঢাকার বিশেষ আদালতের দেয়া ১৩ বছরের সাজা বহাল রয়েছে। এ সাজা বহাল থাকায় সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে গেছে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।
তাছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মন্ত্রী মায়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর সরাসরি বিরোধিতা করেন। সে কারণেও তার ওপর অসন্তুষ্ট খোদ প্রধানমন্ত্রী ও দল। এছাড়া গত বছর নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় তার জামাতা র্যাবের কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদের জড়িত থাকার ঘটনায় মায়া প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই সময় ঘাতক জামাতাকে রক্ষায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার দেন-দরবার সরকারের উচ্চ মহলকে ক্ষুব্ধ করে।
পচা গম কেলেংকারিতে বেকায়দায় পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। শুধু ব্রাজিল নয়, ফ্রান্স থেকে কেনা গমও পচা বলে জানা গেছে। এসব গম ক্রয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ গম কেলেংকারির পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে জেরবার অবস্থা পড়ে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এক এক সময় এক এক কথা বলছেন। পচা গমকে খাওয়ার উপযোগী বানানোর চেষ্টায় তিনি মহাব্যস্ত। ওয়ান-ইলেভেনের ভূমিকার কারণে দফায় দফায় পুরস্কার পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন তিনি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এমপি প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন এবং নির্বাচিত হয়েই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দ্বিতীয় মেয়াদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পূর্ণ মন্ত্রী হন। কিন্তু সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কামরুলের ভূমিকা ছিল দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
দলের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, মায়া-কামরুলের বিরোধিতার কারণেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগকে মরিয়া হতে হয়েছে। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। দলীয় পদের পাশাপাশি কামরুলের মন্ত্রিত্ব হারানোর আশংকা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দেড় বছর বয়সী আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষ করে এক বছরপূর্তিতে এ উদ্যোগ ছিল সক্রিয় বিবেচনাধীন।
কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা তিন মাসের অবরোধে সে উদ্যোগ থেমে যায়। অবরোধের মধ্যেই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘোষণা দেয়া হলে ধীরে ধীরে নাশকতা কমে আসে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে সমাপ্তি হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা বিএনপি-জামায়াতের নাশকতাও। ভারতের পার্লামেন্টে সীমান্ত চুক্তি বিলও অনুমোদন হয়েছে।
এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঢাকা সফর করে গেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ইতিবাচক মেরুকরণ ঘটতে শুরু করেছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নাতনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সমুদ্রেও বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
এসব কিছু মিলে শেখ হাসিনা বেশ উৎফুল্ল। এ অবস্থায় তিনি লন্ডন সফর করে এসেছেন। সেখানে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হলেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের লাগাতার ব্যপক বিক্ষোভের কারনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে ফিরে এক পারিবারিক আলোচনায় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেও ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দলের একজন প্রভাবশালী নেতাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে এ মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন একজন প্রতিমন্ত্রী। এর বাইরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়েও একজন মন্ত্রী নিয়োগ করা হবে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণের পর পদটি এখন পর্যন্ত শূন্য রয়েছে। এর বাইরে প্রতিমন্ত্রী পদে দলের একাধিক নেতার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে প্রথম মেয়াদে মহাজোট সরকারের কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর (সাবেক) নতুন করে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ এখনও তৈরি হয়নি বলেও কেউ কেউ দাবি করেছেন। এছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ভারত সম্পর্কে একটি মন্তব্য করে তিনি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিরাগভাজন হন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে আলোচ্য বিষয় গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপনের জন্যও সমালোচিত হন এ প্রতিমন্ত্রী।
এ ছাড়াও তার এপিএসের আর্থিক দুর্নীতির বিষয় প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিমন্ত্রীর ওপর সরকারের প্রভাবশালীরা ক্ষুব্ধ। তার বিরুদ্ধে নিজ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা নির্যাতন এবং হয়রানির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছেন। এলাকার ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও হয়রানির বিষয়টিতে শাহরিয়ার আলমের ওপর ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রেস এবং পার্সোনাল উইংয়ে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে লন্ডন যাওয়ার আগে তিনি প্রেস সচিব শামীম চৌধুরীকে সরিয়ে দেন। এ পদে যোগ দিয়েছেন পেশাদার প্রবীণ সাংবাদিক রাষ্ট্রপতির সাবেক প্রেস সচিব এহসানুল করিম হেলাল। প্রেস সচিবের পাশাপাশি প্রেস উইংয়ে প্রেষণে নিযুক্ত এক কর্মকর্তাকেও সরিয়ে দেয়া হতে পারে। প্রেস সচিবের দফতরে কর্মরত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার শুধু মন্ত্রিসভা নিয়েই ভাবছেন না। তার ভাবনায় রয়েছে যেমন তার প্রেস উইং তেমনি পার্সোনাল উইংও। পার্সোনাল উইংয়ে একজনের পদোন্নতির খুবই সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ সাবেক ছাত্রনেতা বারবার তার ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে গণভবন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সেক্ষেত্রে সাবেক এ ছাত্রনেতার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন- সে নিয়ে জোর আলোচনা রয়েছে।