ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবশেষে নিজের উপর নির্যাতন চালানোর ব্যাপারে মুখ খুললেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) হাতে অপহৃত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাক।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘সীমান্তে পাহারা দেয়ার সময় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। দেশের মাটিতে ফিরে আসতে পেরে আমি আনন্দিত।’
বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের সাথে মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন নায়েক আবদুর রাজ্জাক। আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘(ঘটনার দিন) সকাল বেলা যখন নৌকা চেক করি, এ সময় মিয়ানমার থেকে ওরা এসে আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা করে। আমরাও সাথে সাথে প্রতিউত্তর দেই। এ সময় ধস্তাধস্তি হয়।’ কথাগুলো বলার সময় নায়েক রাজ্জাক বিজিবির পোশাকে ছিলেন। গালে দাড়ি। আর নাকে ক্ষতের মতো চিহ্ন।
সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রাজ্জাক বলেন, ‘ধস্তাধস্তির কারণে এ রকম হয়েছে।’ এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে বিজিবি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার থেকে টেকনাফে পৌঁছায়। টেকনাফে নামার পর নায়েক আবদুর রাজ্জাক প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। এপর দেশবাসীর ভালোবাসার জন্য প্রকাশ করেন কৃতজ্ঞতা।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে ফিরে আসতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। দেশবাসীর এতো ভালোবাসা আমার জন্য ভাবতে পারছি না।’ যতদ্রুত সম্ভব বাবা দিবসে জন্ম নেয়া নবজাতক সন্তানের মুখ দেখতে চান বলেও উচ্ছাস প্রকাশ করেন তিনি।
এরআগে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে অপহরণের আটদিন পর মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপে এক পতাকা বৈঠকের পর বিজিবি প্রতিনিধিদলের কাছে আবদুর রাজ্জাককে হস্তান্তর করে বিজিপি। কোনো শর্ত ছাড়াই তাকে মুক্তি দিয়েছে বিজিপি। অপহরণের সময় রাজ্জাকের সঙ্গে থাকা অস্ত্র ও গুলিও ফেরত দেয়া হয়েছে।
বিজিবির কক্সবাজার সেক্টরের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু জার আল জাহিদের কাছে রাজ্জাককে হস্তান্তর করেন ২ নম্বর বিজিপির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল পি হান।
হস্তান্তরের পরপরই আবদুর রাজ্জাকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাথে থাকা মেডিকেল অফিসার মেজর মো. শাহ আলম। পরে তারা স্পিড বোটে করে দেশের পথে রওনা হন। নায়েক আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে টেকনাফ ৪২ বিজিবির অধিনায়কের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা টেকনাফ স্থলবন্দরের পুলিশ ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে পৌঁছান সন্ধ্যা সোয়া ৬টায়।
পিলখানা সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসিন আলী জানান, নায়েক আবদুর রাজ্জাক দেশে ফিরেছেন। তাকে হেলিকপ্টারে করে বিজিবি সদর দপ্তরে ঢাকায় এনে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। তখন সবকিছু তিনি বিস্তারিত জানাবেন। গত ১৭ জুন ভোরে বিজিবির ছয় সদস্যের একটি দল নায়েক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে নাফ নদীতে টহল দিচ্ছিল। তারা বাংলাদেশের নৌসীমায় মাদক চোরাচালান সন্দেহে দুটি নৌকায় তল্লাশি করছিল। এ সময় মিয়ানমারের রইগ্যাদং ক্যাম্পের দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা একটি ট্রলারে করে বাংলাদেশের নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করেন।
একপর্যায়ে বিজিপির সদস্যদের বহনকারী ট্রলারটি বিজিবির টহল নৌযানের কাছে এসে থামে। বিজিপির ট্রলারটিকে বাংলাদেশের নৌসীমা ছেড়ে যেতে বলা হলে দুপক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। বিজিবি ও বিজিপির গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন বিজিবি সদস্য বিপ্লব। বিজিপি নায়েক আবদুর রাজ্জাককে জোর করে ট্রলারে তুলে নেয়। বিজিবির অন্য সদস্যরা এতে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। এতে সিপাহি বিপ্লব কুমার গুলিবিদ্ধ হন।
পরে বিজিপির ট্রলারটি রাজ্জাককে নিয়ে মিয়ানমারের দিকে চলে যায়। অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর বিজিপি নায়েক আবদুর রাজ্জাককে মারধর করে। তার অস্ত্র ও জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে প্যান্ট খুলে লুঙি পরিয়ে তার ছবি তোলা হয়। পরে তাকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়।
তাকে এখন রইগ্যাদং পুলিশ ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়। এদিকে নায়েক আবদুর রাজ্জাকের সাথে অপহৃত হওয়া টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জলদাস পাড়ার জেলে নিলাকান্তি দাসের ছেলে লালমোহন দাস ও রামপদ দাসের ছেলে জীবন দাস জানান নগ্ন করে নির্যাতন চালিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিপি।
বুধবার এই নির্যাতনের বর্ণনা দেন অপহৃত দুই জেলে। ঘটনার ব্যাপারে লালমোহন দাস বলেন, মিয়ানমারের রইগ্যাদং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পথে পুরো সময় নায়েক আবদুর রাজ্জাকের কাপড় খুলেই তাকে মারধর করতে থাকে বিজেপি। সেখানে নায়েক আবদুর রাজ্জাকের সাথে আমরাও বিজিপির নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার