DMCA.com Protection Status
title="৭

মোদীর সফরে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি কিন্তু ভারত যা নেবার নিয়ে গেছেঃ আনু মোহাম্মদ

anuক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আজকাল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। আমাদের জিডিপির অনেক গ্রোথ হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আসলে তা ঠিক নয়।’এ মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং বিশিষ্ট  অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, ‘কাগজ-কলমে জিডিপি বাড়লেও বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে দুর্নীতি। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলেই অর্থনৈতিক লেনদেন বাড়ছে। এর ফসল হচ্ছে জিডিপি’র গ্রোথ।’

শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসের মামুন’স টিউটোরিয়াল মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন)’ এবং ‘প্রোগ্রেসিভ ফোরাম’ এর উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশের জীবন মান এবং পরিবেশের উন্নয়নে বড় বাধা হচ্ছে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক ব্যানারে কিছু স্বার্থান্বেষী মুখোশধারী রাজনীতিবিদ, আমলা, কনসালটেন্ট ও বুদ্ধিজীবীরা। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর স্বার্থে গোপন চুক্তি, অস্বচ্ছতা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া। ভাগ-বাটোয়ারা ও কমিশন বাণিজ্যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে দেশের জনগণ পুরো জিম্মি।’

তিনি বলেন, ‘জিডিপি মানে কি? একটি দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা সামষ্টিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে বলা হয়। জিডিপি হচ্ছে অর্থনীতির আকার পরিমাপের একটি পদ্ধতি। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের ভেতরে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মোট বাজারমূল্য। একে উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে পণ্য ও সেবার উপর সংযোজিত মূল্যের সমষ্টি হিসেবেও দেখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এর চিত্র ভিন্ন।’ ‘জাতীয়ভাবে সরকার জনগণের স্বার্থ দেখলে উন্নয়ন সম্ভব। তবে বাস্তবে তা হচ্ছে না। বর্তমানে দুর্নীতি হচ্ছে ফলাফল। এতে নীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার নীতি, নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর ব্যক্তিস্বার্থ, রাজনৈতিক আধিপত্য, ভুলনীতি, অস্বচ্ছতা, গোপন চুক্তি, জনগণকে না জানানোর একটি নীতির ফসলই হচ্ছে দুর্নীতি,’— মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘সরকার মনে করল উন্নয়নের স্বার্থে সব চুক্তি গোপন রাখছে। কিন্তু এসব গোপন চুক্তির পক্ষে অবস্থানকারী কনসালটেন্ট আর আমলা-বুদ্ধিজীবীরা তাদের স্বার্থ এবং কমিশন বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। কালো অর্থনৈতিক লেনদেনে জিডিপির আকার বাড়ছে ঠিকই, তবে দেশের ভবিষ্যৎ চলে যাচ্ছে অন্ধকারে।’ ‘এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। জিডিপি কেন্দ্রিক উন্নয়নের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। গোপন চুক্তি বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জার্তীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিতে সরকারি আমলা, কন্সালটেন্ট, বুদ্ধিজীবী এদের কেবল একেকটি ব্যানারে মুখোশ পরিবর্তন হয়েছে। দুর্নীতি ঠিকই রয়ে গেছে। মুখোশ সরালে দেখবেন যে একই মানুষ। এখন সময় এসেছে আমাদের মুখোশটা সরাতে হবে।’

সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি হলেও তাতে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। ভারতের লাভ হয়েছে দীর্ঘ মেয়াদি ট্রানজিট।’ মোদির বাংলাদেশ সফরকালে দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির ফলে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাব দেন আনু মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, ‘ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ ব্যবহার করার অনুমোদন পেয়েছে ভারত। কিন্তু এতে বাংলাদেশের প্রাপ্যটা কী? তা সরকার পরিষ্কার করেনি। কৃষি, রাস্তাঘাট এবং পরিবেশের কতটা ক্ষতি হবে সেটাও জানতে চায়নি বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশ সরকার বলছে অনেক লাভ হয়েছে। তবে তার কোন পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই।’ ‘আমি মনে করি যে কোনো বাংলাদেশি বলবে প্রথমে আপনারা কাঁটাতারের বেড়া সরান, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করুন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এসব বিষয়েও পরিষ্কার কোন আলোচনা করেনি বাংলাদেশ। বিনিময়ে ভারত যা নেবার তা নিয়ে গেছে।’

প্রোগ্রেসিভ ফোরামের প্রেসিডেন্ট খোরশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন— সৈয়দ ফজলুর রহমানসহ প্রবাসী পরিবেশবিদ, রাজনীতিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!