ব্রিটেনের লন্ডনে এশীয় মুসলিমদের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে বলছে বেসরকারি সংস্থা সালাম প্রজেক্ট। সালাম প্রজেক্ট নামের সংস্থাটি কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে। সংস্থাটি বলছে, এশিয়ান আর কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলোর মধ্যে যেখানে বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে সেখানে কৃষ্ণাঙ্গরা এশিয়ান পরিবারগুলোর মধ্যেই বেশি বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সংস্থাটি এ রকম বেশ কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগও পেয়েছে। লন্ডনের একটি মুসলিম পরিবার।
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ছেলে কামাল আর বাঙালি মেয়ে সীমা নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেছেন। তবে তাদের এ বিয়ে খুব সহজ ছিল না। বিশেষ করে সীমার আত্মীয়স্বজনরা এ বিয়ে একেবারে পছন্দ করেনি। সীমা বলছিলেন,আমার আত্মীয়রা কোনোভাবেই বিয়েটা মেনে নিতে চাইল না। বিশেষ করে আমার মা খুবই আহত হয়েছিলেন। তিনি যখন প্রথম শুনলেন আমি কামালকে বিয়ে করতে যাচ্ছি, তিনি নিশ্চুপ হয়ে পড়েন। আমার মনে হয়, তিনি এখনো আমাদের ওপর রেগে আছেন। রাপ গান গাইতেন। তাদের গানের একটি দল ছিল এবং গানের মাধ্যমে তারা এ বৈষম্যের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে সঙ্গীত জীবন ছেড়ে দেয়ার পর তিনি একটি বিশেষ প্রজেক্ট হাতে নেন, যার নাম দেন সালাম প্রজেক্ট।
এর মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমদের আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলছেন, অনেক কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের কাছ থেকেই তিনি অভিযোগ পেয়েছেন যে কেবল গায়ের রঙের জন্য তারা এশিয়ান সমাজে অবহেলিত হচ্ছেন। তার ভাষায়, সাধারণত কৃষ্ণাঙ্গদের সম্পর্কে ধারণা করা হয় যে তারা মাদক ব্যবসায়ী, অলস, গরিব। তাদের সবসময় নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। তাই এশিয়ান অনেক সমাজে বয়স্ক ব্যক্তিরা কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে মিশতে চান না। তবে এটাই অবশ্য ঠিক যে বেশির ভাগ লোক এমন নয়। শুধু গায়ের রঙের কারণে অনেকে বৈষম্য তৈরি করে। পূর্ব লন্ডনের একটি মসজিদের ইমাম হাসান মাহমুদ বলছিলেন, মানুষের মধ্যে এ ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। তিনি বলেন, ইসলামে এমন কোনো কথা বলা হয়নি যে একজন এশিয়ান কোনো কৃষ্ণাঙ্গ বা এমন কোনো সম্প্রদায়ের মানুষকে বিয়ে করতে পারবে না। আমাদের নবী (সা.)-এরও একজন স্ত্রী ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। যারা কৃষ্ণাঙ্গদের বিয়ের বিরোধিতা করে বা আপত্তি করে, তারা পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক মনোভাবের মানুষ। এখানে ধর্মের কোনো বিষয় নেই। ১০ বছর ধরে বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছেন কামাল এবং সীমা। সীমার মনে এখনো গভীর দুঃখ রয়ে গেছে যে তার মা তাদের বিয়েতে অংশ নেননি। তবে সালাম প্রজেক্টের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, দিনে দিনে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। লন্ডনে এশীয় সমাজের বয়স্ক মুসলিমদের এখনো এ ধরনের সম্পর্ক মেনে নিতে কষ্ট হলেও তরুণরা কিন্তু অনেক বেশি উদার মনোভাবের এবং তারা খুব সহজেই পরস্পরের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়েও নিচ্ছেন।