ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে এবার আশ্রয় নেয়া হয়েছে ভয়াবহ জালিয়াতির।
ফটোশপের মাধ্যমে বানানো বিকৃত পাসপোর্টের উপর ভিত্তি করে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার খবর প্রচার করছে, “খালেদা জিয়ার পাঁচটি জন্মদিন”।
তারা ফেসবুকে প্রচারিত ‘খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের’ দুটি ছবি দেখিয়ে বলছে, ২০১৪ সালের মে মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট অনুযায়ী খালেদার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট। আরেকটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টেও নাকি একই জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে বলে দাবি ডেইলি স্টারের।
এরপর ডেইলি স্টার বলছে, এসব ছবি যদি ‘ভুয়া’ না হয় তবে খালেদা জিয়ার মোট জন্মদিন পাঁচটি। তা হল: ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট, ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট, ১৯৪৭ সালের ১৯ আগস্ট, ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ও নির্দিষ্ট উল্লেখবিহীন ১৫ আগস্ট। কিন্তু তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ডেইলি স্টার যে দুটি পাসপোর্টের ছবি ব্যবহার করে খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন থাকার কথা বলছে, ওই দুটি ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে কুখ্যাত জালিয়াত চক্র “সিপিগ্যাং” ফটোশপে তৈরি করেছে বলে এক বছর আগেই প্রমাণিত হয়েছে।
আর সিপি গ্যাং যে ফেসবুকে গালিগালাজ ও মিথ্যা প্রচারের জন্য কুখ্যাত এ নিয়ে গত মাসের শুরুর দিকে দেশের প্রায় সব সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে খবর প্রচারিত হয়েছে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে উদ্ভাবন অনুদানের আওতায় সিপি গ্যাংকে চার লাখ টাকা তহবিল দিলে তাদের চরিত্র ও কাজ নিয়ে মিডিয়া সরব হয়।
সমালোচনার মুখে আইসিটি বিভাগ সিপি গ্যাংকে অনুদান পাওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে বাদ দেয়।
অথচ প্রায় দেড় মাসের মাথায় সিপি গ্যাংয়ের বানানো মিথ্যা পাসপোর্ট দিয়ে খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিনের কথা প্রচার করছে ডেইল স্টার!
অন্যদিকে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু দিবস হওয়ায় এতদিন খালেদা জিয়ার জন্মদিনের সত্যতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আপত্তি করা হলেও গত বছরের ১৪ আগস্ট এ থেকে সরে যায় তারা।
ওই দিন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের খালেদা জিয়াকে ১৫ আগস্টের আগের বা পরের দিন উৎসব পালনের আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেছিলেন, “যদি এটি আপনার জন্মদিবস হয়, তাহলে আগের দিনও করতে পারেন উৎসবটা, পরের দিনও করতে পারেন।” আর এ বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও একই কথা বলছেন। গত ৪ আগস্ট তিনি খালেদা জিয়াকে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পার হয়েছে। আমরা চাই সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমরা আর কোনো বিভাজন চাই না। তাই আপনি ১৫ তারিখ জন্মদিন পালন না করে ১৬ তারিখ পালন করুন।”
কিন্তু খালেদা জিয়ার প্রতি পুরনো বৈরি মনোভাবের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়ে ডেইলি স্টার তার জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে জালিয়াতি উপরই নির্ভরশীল হয়।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সরকারের প্রথম বছর ২০০৯ সালের ৩ মে খালেদা জিয়ার নামে একটি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, যাতে তার জন্মদিন লেখা হয়েছে ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট। ২০১৪ সালের ২ মে এই পাসপোর্টটির মেয়াদ শেষে হলে ওই বছরের ১৪ মে খালেদা জিয়ার নামে একটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, এটিতেও তার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট লেখা হয়েছে।
নীচের ছবি দুটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নেয়া বেগম জিয়ার পুরোনো পাসপোর্টের ছবি।লক্ষ্য করুন উপরেরটি আসল কপি আর নীচেরটিতে ১৫ কে ৫ করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলক ভাবেঃ
খালেদার ‘একাধিক জন্মদিন’ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে-এমন বরাত দিয়ে ডেইলি স্টার প্রতিবেদনটিতে দাবি করেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার নথি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।
তার বিয়ের কাবিননামায় ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেয়া শপথনামায় ১৯৪৭ সালর ১৯ আগস্ট তার জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য ডেইলি স্টার স্বীকার করেছে, নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টকে তার জন্মদিন হিসেবে পালন করেন।
এর আগে ডেইলি স্টার নাকি খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের খবর কখনো শোনেনি। শীর্ষ ইংরেজি দৈনিকটি জানিয়েছে, খালেদা জিয়া ১৯৯৫ বা ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন পালন করে আসছেন।অথচ জিয়া পরিবারের ঘনিস্ঠ কিছু মানুষ বলেছেন ১৫ আগস্টই বেগম খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্মদিন।
আর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের পরই সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দিন ১৫ আগস্টকে প্রথম বারের মতো জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। পত্রিকাটি অবশ্য বলেনি এই শোক দিবস পালনের আগে খালেদার জন্মদিন নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি হয়েছিল কি না।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে আলাপ করার সময় ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন পালন নিয়ে আপত্তি জানান।
এর জবাবে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলন, “১৫ আগস্ট আমার জন্মদিন। আমি কেক কাটবোই।… এটা বলেন না। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কোনো মানুষের জন্ম হবে না? কোনো মানুষ পালন করবে না ? এগুলো বাদ দেন।”