ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ছেলের সামনে মাকে ধর্ষনের রোমহর্ষক ঘটনায় পুলিশ দোষীদের বাঁচাতে কাজ করছে এই অভিযোগে শুক্রবার বিকালে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ফারুক (২০) ও শামীম (৩৫) নামে দু’যুবকসহ তিনজন নিহত এবং পুলিশসহ অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার বিকাল পৌঁনে ৬টার দিকে ঘাটাইল উপজেলার আঠারদানা ও হামিদপুর এলাকার ৪-৫ শ’ লোক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কালিহাতী থানা ঘেরাওয়ের উদ্দেশে কলেজগেট এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়।
এ সময় পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের বাকবিতন্ডা হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে।
এতে কালিহাতী থানার এসআই ফারুক, কনস্টেবল লিয়াকত ও কনস্টেবল হারুন আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা একত্রিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ৬০-৬৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারিরা দিকবিদিক দৌঁড়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের ২০ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৯-৩০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ঘাটাইল উপজেলার কালিয়াগ্রামের শামীম (৩৫) ও কালিহাতী উপজেলার কুষ্টিয়া গ্রামের ফারুক (২০) কালিহাতী উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তারা মারা যায়। নিহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিক আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আহতদের টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, ঘাটাইল উপজেলার কয়েকটি গ্রাম থেকে ২-৩ হাজার লোক দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ করতে করতে থানার দিকে আসতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর হামলা করে। এতে একজন এসআই ও দু’জন কনস্টেবল মারাত্মকভাবে আহত হন। বাধ্য হয়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে। কিন্তু কেউ পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হয়নি।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যেও দ্বিধাবিভক্তি ছিল, তাদেরই আঘাতে কেউ মারা গিয়ে থাকতে পারে। ময়না তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি। তিনি আরো জানান, মা-ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনায় মূলহোতা হাফিজ উদ্দিন ও রোমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও থানা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে কালিহাতী পৌর এলাকার সাতুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম রোমা তার স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার জের ধরে ঘাটাইলের আঠারদানা গ্রামের এক শ্রমজীবী ছেলে ও তার মাকে কৌশলে ডেকে এনে বাড়ির উঠানে বিবস্ত্র করে অমানবিক নির্যাতন করে।
এক পর্যায়ে রোমার ভগ্নিপতি হাফিজ উদ্দিনের অপতৎপরতায় ওই মা-ছেলেকে ঘরে আবদ্ধ করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কালিহাতী থানায় মামলা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার সেই মা অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষ পান করেন। তাকে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
দেখুন ভিডিওঃ