ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশকে একটি বৃহৎ কারাগার অভিহিত করে বাংলাদেশের ৩বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে। পুরো জাতি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। এ মুক্তির লড়াইকে সফল করতে প্রবাসীদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদলে প্রত্যক্ষ ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে ঈদের দিনে ২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে একসঙ্গে তিনি নয় বছর পর ঈদ করলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদ উল আজহার সকাল কাটান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের কিংসটনের বাসায়।
বিকেলে দলীয় নেতাকর্মী, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন শেনী-পেশার মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ইলফোর্ডের ফেয়ারলুপ ওয়ার পার্ক অডিটোরিয়ামে দুই সহস্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী প্রিয় নেত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে অংশ নেন।
অনুষ্ঠান হলের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বিপুল লোক সমাগমের কারণে নিরাপত্তারক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকদের ভিড় সালাতে বেশ বেগ পেতে দেখা যায়।
দীর্ঘক্ষন ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে লাইনে থেকেও অনেকে তাদের প্রিয় নেত্রীর কাছাকাছি পৌঁছেতে পারেননি। অনুষ্ঠান মঞ্চে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও চেয়ারে বসাছিলেন । দীর্ঘদিন পর দেশনায়ক তারেক রহমান মায়ের সঙ্গে কোনো অনুষ্ঠান মঞ্চে বসলেন।
বাংলাদেশে ভয় ও ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী আপোষহীন নেত্রী দীর্ঘ নয় বছর পর নিশঙ্কচিত্তে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন।
ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস সন্দীপ ভার্মা স্বামী সহ দেশনায়ক তারেক রহমানের ব্যক্তিগত আমন্ত্রনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বক্তৃতার শুরুতেই বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এই প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে ঈদ করছি। কিন্তু এখানে আপনাদের সবাইকে কাছে পেয়ে মনে হচ্ছে, আমি যেন দেশেই আছি। দীর্ঘদিন পর যেমন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত পেয়েছি, তেমনি এই অনুষ্ঠানে এসেও ভাল লাগছে। কারন আপনারা আমার পরিবারের সদস্যের মতোই আপন।
দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, সারা দেশ যেন আজ এক বিশাল কারাগার। বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী মামলায় মামলায় ফেরারী। বর্তমান অর্নিবাচিত অবৈধ সরকারের দমন-পীড়ন আর অত্যাচারে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। আর তাই বিএনপির পেছনে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ।
দুঃসময় কাটিয়ে অচিরেই সুদিন আসবেই বলে প্রবাসীদের আশ্বস্ত করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশে মানুষের কোনো মৌলিক অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই। বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীদের ওপর বিশ থেকে একশটির মতো মামলা রয়েছে। এই হল বাংলাদেশ। যেখানে মানুষ ঠিক মত ঘুমাতে পারে না। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। আদালত সরকারের ইশারায় চলছে। সরকারের নির্দেশে যাকে-তাকে কারাদন্ড দেয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকারকে অবৈধ ও অনির্বাচিত একটি সরকার উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি, ভোট কেন্দ্রগুলো ছিলো ফাঁকা। নির্বাচনের আগেই ১৫৪ জনকে বিনাভোটে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বিনাভোটের এই সরকারকে জনগণ বৈধ বলে মেনে নেয়নি। তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে।
তিনি বলেন, সরকার আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধানকে পরিবর্তন করে নিজেদের মতো করেছে। দেশে সেই বাকশালের মতো অবস্থা চলছে।
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশে বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের মাধ্যমে এ সরকারকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়া আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের মানুষ অতি দ্রুত রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে।
তিনি বলেন, দেশে সংবাদপত্রের কোনো স্বাধীনতা নেই। সাংবাদিকরা সত্যি কথা লিখতে পারে না। সত্যি কথা লিখলে তাদের নামে মামলা হয়, জেল হয়। যারা টকশো-তে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের সমালোচনা করে তাদেরকে টকশো তে আসতে দেয়া হয় না। সংবাদপত্রে বা টেলিভিশনে বিরোধী দলের কিছু প্রচার করতে দেয়া হয় না। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারেক রহমানের সত্য বক্তব্যে তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় আতংক হলো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। কিছু হলেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম। একদলীয় পার্লামেন্টে বসে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই।