শেষ পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৬.৯৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১ মার্চ থেকে এ বর্ধিত মূল্য কার্যকর হবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয় গত ৪ থেকে ৬ মার্চ। প্রথম দিন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়। দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ সকালে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও বিকালে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) প্রস্তাবের ওপর শুনানি হয়। আর শেষ দিন ৬ মার্চ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়। বিপিডিবি ১৫.৫০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। আর বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি ৬.৬৬ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। আরইবির ১২.৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবের বিপরীতে ৩.৪৮ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে বিইআরসি। ডিপিডিসি ২৩.৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল। আর বিইআরসি গড়ে ৬.০৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল।
ডেসকোর ১৫.৯০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবের বিপরীতে ২.০১ শতাংশ এবং ওজোপাডিকো ৮.৫১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবের বিপরীতে ৭.৫১ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল মূল্যায়ন কমিটি। ৬ মার্চ গণশুনানি শেষে বিইআরসির চেয়ারম্যান এআর খান বলেছিলেন, তারা দেশবাসীকে টেনশনে রাখতে চান না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। একই দিন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পক্ষে নীতিগত সম্মতি দেন। একই সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য শীত উপযুক্ত সময় হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। তারপর থেকেই শুরু হয় দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া।
১৬ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও : এদিকে কুইক রেন্টাল, বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৬ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতান্ত্রিক বামমোর্চা।< জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি শেষে দুপুর ২টায় বামমোর্চার সমন্বয়কারী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার এ ঘোষণা দেন। আব্দুস সাত্তার বলেন, সরকার নিজেদের সীমাহীন দুর্নীতি আড়াল ও নতুনভাবে কমিশন বাণিজ্য করতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির দায় জনগণ আর নেবে না। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মানি না। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৬ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কীভাবে হয়েছে, সরকার কীভাবে ক্ষমতায় এসেছে তা কারো অজানা নয়। ক্ষমতায় এসেই সরকার মার্কিন-ভারতের স্বার্থে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছে দেখে ভাববেন না, জনগণ আন্দোলনে নামবে না। বিদ্যুতের দাম বাড়ালে এমন আন্দোলন শুরু হবে যে, আপনাদের তখতে-তাউস থাকবে না। গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, আমরা জীবন দিয়ে হলেও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবার রুখবো। গণতান্ত্রিক বামমোর্চার অবস্থান কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, আরিফুল ইসলাম, নারী কেন্দ্রের সীমা দত্ত, বাসদ নেতা ফখরুদ্দিন আতিক প্রমুখ।