চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ৪১টি জেলার ৮১টি উপজেলার ভোটগ্রহণ শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। পূর্বের দুই ধাপের তুলনায় এ ধাপের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইসি। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে এবং ভোটপ্রদান করতে পারে সে ব্যাপারের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তৃতীয় দফায় ৪২ জেলার ৮৩টি উপজেলায় তফসিল ঘোষণা করলেও নির্বাচনী পরিবেশ না থাকায় গাজীপুরের শ্রীপুরের নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশন। এছাড়া সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের আগের দুইদিন ও ভোটগ্রহণের দিন এবং পরের দুইদিন নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করবে তারা। অন্যদিকে মাঠে থাকছে র্যাব, পুলিশ বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড ও গ্রাম পুলিশ।
এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অনিয়ম রোধে ৩২৪ জন নির্বাহী ও ৮১ জন জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবেন। থাকছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি। এছাড়া সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তৃতীয় দফায় তিন পদে ১ হাজার ১১৯ জন প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২৩ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান ২৭৭ জন।
৮১টি উপজেলায় মোট ভোটার ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩২, নারী ভোটার ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ১৮১ জন।। মোট ভোটকেন্দ্রর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৫৬, ভোট কক্ষ ৩৮ হাজার ১৮৯টি।
তৃতীয় দফা নির্বাচনে মোট ৫ হাজার ৪৩৪ জন পর্যবেক্ষক মাঠে থাকবে। ৮১টি উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষক থাকবে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। এ দুই উপজেলায় ১৩২ জন করে মোট ২৬৪ পর্যবেক্ষক মাঠে থাকবে। এছাড়া বেশির ভাগ উপজেলায় ৪০ জন করে পর্যবেক্ষক মাঠে থাকবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই পূর্বের সীমাবদ্ধতাগুলো যাতে তৃর্তীয় ধাপে না দেখা যায় সে ব্যাপারে নির্বাচন পরিচালনাকারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত দুই ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া কোনো ধরনের গোলমাল দেখা দিলেই নির্বাচন বন্ধ করে দিতে কর্মকর্তা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এ প্রসঙ্গে কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে নির্বাচনী পরিবেশ না থাকায় গাজীপুরের শ্রীপুরের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। কোনো উপজেলায় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে নির্বাচন বন্ধ দেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেবে না কমিশন।
তিনি আরো বলেছেন ‘কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি নিজ এলাকা এবং অন্য এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসারদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী এসব উপজেলায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রচারণা। আইন অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। তা বহাল থাকবে ভোটগ্রহণের ৬৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। কোনো ব্যক্তি বা প্রার্থী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে, অন্যূন ৬ মাস অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এছাড়া যানচলাচলেও থাকবে নিয়ন্ত্রণ। ওই সময় নির্বাচনী এলাকায় অনুমোদনহীন কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
এছাড়া নির্বাচনকালে কোনো ব্যক্তি কোনো আক্রমনাত্মক কাজ বা বিশৃঙ্খলা এবং ভোটার বা নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে পারবেন না। কোনো ধরনের শক্তি প্রদর্শনও করা যাবে না। এছাড়া প্রতিদ্বান্দ্বীকে প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে আক্রমনাত্মক কথা বলা যাবে না।
তৃতীয় দফায় যে ৮১টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর; দিনাজপুরের সদর ও নবাবগঞ্জ; নীলফামারীর সদর; লালমনিরহাটের আদিতমারী; কুড়িগ্রামের সদর, রৌমারী ও চিলমারী; গাইবান্ধার সদর ও সাদুল্লাপুর; জয়পুরহাটের আক্কেলপুর; চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ; নওগাঁর মান্দা, পোরশা ও ধামইরহাট; রাজশাহীর গোদাগাড়ি, চারঘাট ও দুর্গাপুর; চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা; যশোরের মনিরামপুর; নড়াইলের লোহাগড়া; বাগেরহাটের সদর, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মংলা ও শরণখোলা; খুলনার পাইকগাছা; সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ; ভোলার সদর, বরিশালের মুলাদী, হিজলা ও বাবুগঞ্জ; পিরোজপুরের নেছারাবাদ; জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, শেরপুরের শ্রীবর্দী; ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া, গৌরীপুর, মুক্তাগাছা, ফুলপুর ও ধোবাউড়া; নেত্রকোনার সদর ও মোহনগঞ্জ; কিশোরগঞ্জের সদর, কুলিয়ারচর ও হোসেনপুর; ফরিদপুরের সদর, আলফাডাঙ্গা ও সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাংগা ও মধুখালী; গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, শরীয়তপুরের সদর ও নড়িয়া; সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ; সিলেটের দক্ষিণ সুরমা; মৌলভীবাজারের বড়লেখা; টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও দেলদুয়ার; কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, হোমনা, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়া, তিতাস; চাঁদপুরের কচুয়া ও হাজীগঞ্জ; নোয়াখালীর সেনবাগ; লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ড; রাঙামাটির বরকল, বাঘাইছড়ি ও কাউখালি; মানিকগঞ্জের ঘিওর; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর; ফেনীর দাগনভূঁইয়া; বান্দরবান সদর ও আলী কদম।