ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, নিজেদের প্রয়োজনেই জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করবে আওয়ামী লীগ। আমরা আর মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করবো না। সরকারের হাতে আরো তিন বছর সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে আমরা দলকে শক্তিশালী করবো।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীস্থ জাপা কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ, প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
এরশাদ বলেন, ‘আমার বিশেষ দূত পদে এবং মন্ত্রিপরিষদে দলের প্রতিনিধিত্ব থাকা না থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তিনি আমাকে সম্মান দেখিয়ে বিশেষ দূত পদ দিয়েছেন, পতাকা দিয়েছেন, আমি উনাকে না জানিয়ে এ পদ ছাড়তে পারি না, তাহলে বিষয়টি অসম্মানজনক দেখায়।’
এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয়, আমার সাংসদরা সংসদে দাঁড়িয়ে যখন “জয় বাংলা” বলে বক্তব্য শেষ করেন। আমাদের স্লোগানতো “জয় বাংলা” নয়, আমাদের স্লোগান “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”। আর “জয় বাংলা” বললেই যে সাংসদরা আকাশে উঠে যাবে তাওতো নয়!’
জাতীয় পার্টির অবস্থান বিশ্লেষণ করে এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে পারি বা না পারি আমরা একটা অবস্থানে যাবো। আমরা চেষ্টা করব ক্ষমতায় যাওয়ার। এতোদিন আমাদের রাজনীতি পরিষ্কার ছিল না, কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল।’
তিনি বলেন, ‘একটি সিদ্ধান্তের কারণেই আজ জাপার রাজনীতিতে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে জাপা বিভিন্ন মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছে। দেশবাসীর কাছে জাতীয় পার্টি একটি আলোচনার বিষয় হিসেবে চলে এসেছে।’
উল্লেখ্য, পাঁচ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের সময় থেকেই অভ্যন্তরণী দ্বন্দ্বে নাকাল জাতীয় পার্টি। বিশেষ করে এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের ভাইয়ের কথা মতো নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বঞ্চিত হয়ে দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে তৃণমূলে। এর মধ্যে এরশাদ ও রওশন গ্রুপ চাঙা হয়ে ওঠে।
অবশেষে ‘দল বাঁচাতে’ হঠাৎ করেই একক সিদ্ধান্তে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ দেন এরশাদ। এই ঘটনার পর থেকেই জাতীয় পার্টি গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এসময় দলের এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশ করে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘আপনারা যারা এমপি হয়েছেন, অপরাধ করেননি। পার্টির স্বার্থে দেশের স্বার্থে এমপি হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন। তিনি দেশের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন। আপনারা ভুল করেননি।’
জিএম কাদের কারো বলেন, ‘আমাদের কারো কারো মনের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতে পারে, সেটি দেশের মানুষের স্বার্থে ভুলে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের সবাইকে অতীত ভুলে গিয়ে সামনে গিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে দলের মধ্যে আর যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি কেউ চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোহেল রানা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী, দক্ষিণের সভাপতি আবু হোসেন বাবলা, শেখ সিরাজুল ইসলাম, শওকত চৌধুরী এমপি, মোহাম্মদ নোমান এমপি, নুরুল ইসলাম মিলন, সাইদুর রহমান টেপা, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।