ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির কো-চেয়ারম্যান হচ্ছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মার্চে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলেই বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত করার পাশাপাশি কো-চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আর এ পদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা তারেক রহমান, যিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে।
দলের সিনিয়র এক নেতা আমাদের জানিয়েছেন, চেয়ারপারসন ও কো-চেয়ারম্যানের প্রায় সমান ক্ষমতাই থাকবে। একজনের অনুপস্থিতিতে আরেকজন দায়িত্ব পালন করবেন। দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে এ পদটি সন্নিবেশ করা হবে। সে ক্ষেত্রে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদটি আর থাকবে না।
কী কারণে এ পদটি সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, সে সম্পর্কে ওই নেতা জানান, ‘বিএনপিকে চাপে রাখতে ক্ষমতাসীনেরা নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকাতে চায়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট মামলার রায় শিগগিরই দেয়ার কথাও বলা হচ্ছে। সেরকম কোনো অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্ব অটুট রাখতে কো-চেয়ারম্যানের পদটির কথা জোর দিয়ে ভাবা হচ্ছে।’
বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় দেড় যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন তারেক রহমান। দলকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করা এবং জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গবেষণামূলক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তিনি। দলে তারেক রহমানের প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করেই পঞ্চম কাউন্সিলে তাকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। বিএনপির মধ্যম সারির নেতারা তারেক রহমানের স্ত্রী ডা: জোবায়দা রহমানকেও দলের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষপাতি। তারা বলছেন, জোবায়দা রহমান একজন বুদ্ধিমতী, পরিচ্ছন ব্যক্তিত্ব। তাকে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করা হলে দলই লাভবান হবে।
এ দিকে নেতৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ‘এক নেতার এক পদ’ তত্ত্ব এবারো কার্যকর হচ্ছে না বলেই জানা গেছে। একজন নেতা কেন্দ্রসহ একাধিক পদে থাকায় এমন অনেক নেতা আছেন দীর্ঘ দিন দল করার পরেও উল্লেখগোয্য পদে আসতে পারছেন না। আর এ কারণেই বিএনপিতে এক নেতার এক পদ দাবি দীর্ঘ দিনের। ষষ্ঠ কাউন্সিল সামনে রেখে এ দাবি আবারো উঠেছে।
গত ২৩ জানুয়ারি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে দুইটি প্রস্তাব দেন। একটি প্রস্তাব হলো মন্ত্রী-এমপিরা সংশ্লিষ্ট জেলার সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। দ্বিতীয়, এক নেতার এক পদ থাকতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার ব্যাপারে একমত হন।
এরপর এ নিয়ে শুরু হয় দলের বিভন্ন পর্যায়ে আলোচনা। তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা সন্তুষ্ট হলেও কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। তারা এর ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি নেতিবাচক দিকগুলো খুঁজতে শুরু করেন।
বহুপদধারী নেতারা হাইকমান্ডকে জানান, সর্বক্ষেত্রে না হলেও কিছুস্থানে এক নেতাকে একাধিক দায়িত্ব না দিলে তা সংগঠনের জন্য নেতিবাচক হবে।
যেমন- বহু কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, যারা স্থানীয় রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় পর্যায়ে যদি সেই নেতার কোনো পদ না থাকে, সে ক্ষেত্রে নতুন যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা পুরো এলাকায় কার্যকর নেতৃত্ব নাও দিতে পারেন। স্থানীয় পর্যায়ে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে সেই কেন্দ্রীয় নেতাও নতুন নেতাকে সহয়তা নাও করতে পারেন। ফলে দলের ভেতরে গ্রুপিং বাড়বে, নির্বাচনের সময় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশেষ করে জেলা বা মহানগর পর্যায়ে এমনকি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা রাখার বিকল্প নেই। দলের সিনিয়র এক নেতা জানিয়েছেন, গঠনতান্ত্রিকভাবে ‘এক নেতার এক পদ’ প্রস্তাব কার্যকর করা না হলেও নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি মাথায় রাখা হবে।