DMCA.com Protection Status
title="৭

সংকট নিরসনে অবিলম্বে সংলাপে বসুনঃসরকারের প্রতি খালেদা জিয়া

kzio copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সংঘাতের পথ ছেড়ে  অবিলম্বে সংলাপে বসতে হাসিনা সরকারের প্রতি আবারো আহবান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ইসলামী ঐক্যজোটের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, বল এখন শাসক দলের কোর্টে। দেশের সঙ্কট নিরসনে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা আহবান জানিয়েছি। আশা করি তারা সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপের পথে সমস্যার সমাধান করবে।

বাংলাদেশের ৩বারের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে আমরা দলের জাতীয় কাউন্সিল করেছি। দল পুর্নগঠনে ব্যস্ত রয়েছি। ওই সম্মেলনে বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা ও সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার একটি পথ নির্দেশনা তুলে ধরেছি। দেশে যে অসুস্থ রাজনৈতিক ধারা তৈরি করা হয়েছে এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পথ দেখাতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশের আজ কী অবস্থা। গণতন্ত্র নেই। জনগণের সরকার নেই। সুশাসন নেই। সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। সবখানে নৈরাজ্য। আইন-শৃঙ্খলার সীমাহীন অবনতি ঘটেছে। কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। জাতীয় অর্থনীতি ছত্রখান হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংকগুলো লুঠ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও জনগণের অর্থ-সম্পদ নিরাপদ নয়। ডিজিটাল ডাকাতি করে সে অর্থ লুটে নিয়ে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ রয়েছে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায়। অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, নারীর সম্ভ্রম হরণ, দুর্নীতি, লুণ্ঠন অতীতের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। ভিনদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের জাতীয় সংষ্কৃতি বিপন্ন।

বিএনপি নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ক্ষমতাসীনদের কোনো উদ্যোগ নেই। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন ও বন্ধুহীন করে ফেলা হয়েছে। বন্ধুত্বের বদলে গোলামীর পথ বেছে নিয়ে শাসকেরা তাদের গদি রক্ষায় ব্যস্ত। ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং আলেম সম্প্রদায় নানাভাবে নিগৃহীত ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। অন্য ধর্মের লোকদেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা অন্য ধর্মের নাগরিকদের ভোটই শুধু চায় না। তাদের সহায় সম্পদও তারা দখল করে নিচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পেতে চায়।

খালেদা জিয়া বলেন, যে অসুস্থ রাজনৈতিক ধারা এদেশে চালু করা হয়েছে সেখান থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেখাতে হবে নতুন সম্ভাবনার পথ। জাতির বিরাজমান সমস্যাবলী সমাধানের জন্য সুচিন্তিত ও বাস্তবমুখী কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। সেইসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।

সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা এখন একটি ভিশন ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কাজ করে যাচ্ছি। আলেম সম্প্রদায়সহ সকল স্তরের মানুষের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা আমরা সেই কর্মসূচিতে রাখছি। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। কিন্তু তারা সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিতে আক্রান্ত নয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের এই দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ আবহমানকাল থেকে পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করে আসছে। এটা আমাদের পরম গৌরবের বিষয়। সেই ঐতিহ্য ও গৌরবকে ক্ষুন্ন করার জন্য বিভিন্ন সময় কায়েমী স্বার্থবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালিয়ে থাকে। আমাদের সম্মানিত আলেম সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে, যাতে আমাদের বদনাম না হয়। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম।

আপনারা সেই শান্তির ধর্মের নেতা। হিংসা, হানাহানি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোনো স্থান ইসলামে নেই। ইসলাম শান্তির পক্ষে, মজলুমের পক্ষে, ইনসাফের পক্ষে, সুশাসনের পক্ষে, মৈত্রীর পক্ষে, সাম্যের পক্ষে, মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তার পক্ষে। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী লোক সন্ত্রাস, প্রতিহিংসা ও নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইসলামের পবিত্র শিক্ষার আলোকে আপনারা শান্তির পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন, এই কাউন্সিলে আপনাদের প্রতি সেটাই আমার আহ্বান।

আপনারা জানেন বাংলাদেশেও পবিত্র ইসলামের নামে বিপথগামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলে আমরা তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে পেরেছিলাম। আমাদের সেই অভিযানে সম্মানিত আলেম সম্প্রদায় সন্ত্রাস-বিরোধী জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

সেজন্য আমি আপনাদের মোবারকবাদ জানাই। খালেদা জিয়া বলেন, পবিত্র ধর্মের নামে সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে আপনাদের এই দৃঢ় ভূমিকা আগামীতে আরো জোরদার হবে। শিক্ষার ওপর ইসলাম অনেক গুরুত্বরোপ করেছে। ইসলাম দিয়েছে নারীর মর্যাদা। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে ভিন্ন ধর্মের মানুষকে পবিত্র আমানত ভাবতে শিখিয়েছে ইসলাম। পবিত্র ইসলাম দারিদ্র থেকে মুক্তি এবং বৈষম্য নিরসনের পথ দেখিয়েছে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে আপনারা আপনাদের নীতি নির্ধারণ ও কর্মতৎপরতা পরিচালনা করবেন। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের চরম সংকট উত্তরণে আপনাদের এই সম্মেলন থেকে সম্মানিত আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হবার আহ্বান জানাই।

এদেশে হাজী শরিয়তউল্লাহ, শহীদ তিতুমির ও ফকির মজনু শাহরা ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামেও আলেম সমাজ পিছিয়ে ছিলেন না। স্বাধীন দেশের মানুষের অধিকার ও ইনসাফ কায়েমের জন্য আপনারা অকাতরে জীবন দিতেও পিছপা হননি। আগামীতেও আপনাদের সে ভূমিকা দেশবাসী আশা করে।

 

খালেদা জিয়া বলেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে স্পষ্ট কথা বলাও উত্তম জিহাদ। দেশে শান্তি, সুশাসন, গণতন্ত্র জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে, দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায়, আলেমসহ সকলের সম্মান রক্ষায়, জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষায়, জুলুমের অবসান কল্পে আপনারা ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হোন। এই সম্মেলন আপনাদেরকে সেই লক্ষ্য অর্জনে পথ দেখাক, আমি সেই দোয়া করি। এই ঢাকার রাজপথেও ওলামা মাশায়েখ, হাফেজ ও মাদরাসার গরীব শিক্ষক-ছাত্রদের রক্ত ঝরেছে। সেই ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। লোভ ও ভয়ের মুখে ঈমান নষ্ট না করে আপনারা যারা ইসলামী ঐক্যজোটের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের সাফল্য কামনা করে খালেদা জিয়া বলেন, জাতীয় জীবনের এক কঠিন দুঃসময়ে আপনাদের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আপনারা সকলে দোয়া করবেন, যাতে বাংলাদেশের জনগণ এই কঠিন সংকট থেকে মুক্তি পায়। দেশে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।

জনগণ তাদের সকল অধিকার ফিরে পায়। জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটে। আপনারা পবিত্র কোরআনে কারীমের একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। আমিও তার উল্লেখ করে মুনাজাত করি : সত্য সমাগত এবং মিথ্যা দূরীভূত হোক।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!