DMCA.com Protection Status
title="৭

পদ্মা সেতু দুর্নীতি : বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষেই রায় দিলো কানাডার সুপ্রিম কোর্ট

padma copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ পেতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের চার সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলায় বিশ্ব ব্যাংককে নিজস্ব তদন্তের নথিপত্র আদালতে উপস্থাপন করতে হবে না বলে রায় দিয়েছে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট।

অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিস গতবছর বিশ্ব ব্যাংককে তদন্তের নথিপত্র উপস্থাপনের যে নির্দেশ দিয়েছিল তার আপিল মঞ্জুর করে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আসে।

বিশ্ব ব্যাংক বলেছিল, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে তারা অনেক বিষয়ে আইনি দায়মুক্তি ভোগ করে, সুতরাং আদালতের এ ধরনের নির্দেশনা মানার বাধ্যবাধকতা তাদের নেই। সুপ্রিম কোর্ট তাদের এই যুক্তিতে সায় দিয়েছে।

পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ সরকারও বিশ্ব ব্যাংকের কাছে তাদের অভিযোগের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চেয়েছিল।

বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালে নিজেরা তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ সম্পর্কে নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে (আরসিএমপি) অনুরোধ জানায়।

ওই অনুরোধে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডায় এসএনসি লাভালিনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০১২ সালে টরোন্টোর আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে এসএনসি-লাভালিনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার ভূইয়াকেও এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

সে সময় রমেশ সাহের কাছ থেকে কানাডীয় পুলিশের জব্দ করা একটি ডায়েরি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়, যাতে ‘বাংলাদেশের কাকে কতো শতাংশ ঘুষ দেয়া হবে’ তার সাংকেতিক বিবরণ ছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের এক পর্যায়ে গতবছর জুলাইয়ে জুলফিকার ভূইয়ার আইনজীবী বিশ্ব ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ ও নথিপত্র আদালতে উপস্থাপনের দাবি জানান। এরপর অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিস ওই নথি উপস্থাপনের নির্দেশ দিলে বিশ্ব ব্যাংক উচ্চ আদালতে যায়। এদিকে দুর্নীতির এই অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ অবকাঠামো প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে যায়।

বিশ্ব ব্যাংকের চাপে ‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে দুদক ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করলেও ২২ মাস পর তদন্তকারীরা বলেন, অভিযোগের কোনো প্রমাণ তারা তদন্তে পাননি। দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে, তখনকার সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেয় আদালত।

এর আগে দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও।

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে এ সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ কাজের ৩৩ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১৬ এপ্রিল জানিয়েছেন। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!