ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আজ সংসদে বলেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কিছুকিছু ক্ষেত্রে ব্যপক লুটপাট হয়েছে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে পুকুরচুরি নয়, সাগরচু্রির মতো ঘটনা ঘটেছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দৃস্কৃতি হয়েছে বলে অনেকে এই বিভাগের সমস্ত বরাদ্দ একেবারে কেটে দেয়ার কথা বলেছেন। আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে, এমন এরকম কিছু ঘটেনি যার জন্য এই ধরণের প্রতিষ্ঠান থেকে ধুয়ে মুছে ফেলে দিতে হবে।
সংসদে ২০১৫-১৬ সালের সম্পুরক বাজেটের মঞ্জুরী দাবির ওপর আলোচনাকালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মঞ্জুরী দাবির ওপর আনিত ছাটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী এই সব কথা বলেন।
সম্পূরক বাজেট পাসের আগে দাবি নং-৮ এ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খাতে ২৩৮ কোটি দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা মঞ্জুরি প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
এর বিরোধিতা করে কয়েকজন সংসদ সদস্য ছাটাই প্রস্তাব দেন। মঞ্জুরী দাবির বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পাটির, নূরল ইসলাম মিলন, নূরল ইসলাম ওমর ও ফখরুল ইমাম।
ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দের বিরোধিতা করে ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ব্যাংকিং খাতে পুকুর চুরি নয়, মহাসাগর চুরি হয়েছে। গত সাত বছরে শুধু ব্যাংকিং খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা লটুপাট হয়েছে। বেসিক ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক সহ সব সরকারি ব্যাংকের একই অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেই যখন রোগ ধরেছে অন্য ব্যাংকের কথা বলে লাভ কি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮শ কোটি টাকা রিজার্ভ চুরি হয়েছে। তাই ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি কমিশন করা দরকার। এর জন্য নতুন করে একটি সংস্থা করা দরকার।
নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের কোন আস্থা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকদের যোগসাজসে ৮শ কোটি টাকার রিজার্ভ চুরি হয়ে গেছে। এই টাকা ফেরত পাওয়ার আশা নেই। যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থই লুপপাট হয় দেশ কিভাবে চলবে ? নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, বাংক খাতে সরকার ব্যর্থ। ব্যাংক থেকে পুকুরচুরি
হয়েছে। জনগনের টাকা চুরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারের বেহাল অবস্থা। এভাবে চলতে পারেনা। ফখরুল ইমাম বলেন, ২০১৩ সালে শেয়ার বাজার থেকে ৭২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিনিয়োগকারিরা পথে বসেছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে। তাই এই বিভাগকে টাকা কম দিলে চুরিও কম হবে। শৃংখলা ফিরে আসবে।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অনেক দুর্নিতী হয়েছে বলে অনেকে বরাদ্দ কেটে দেয়ার জন্য বলেছেন। আমি আশস্ত করতে চাই এমন কিছু ঘটেনি যার জন্য এই ধরণের প্রতিষ্ঠান থেকে ধুয়ে মুছে ফেলে দিতে হবে। হ্যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন লুটপাট হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফরাজী সাহেবের উত্তি অনুসরণ করে আমি বলতে পারি যে, এটা পুকুরচুরি নয়, সাগরচুরির মতো হয়েছে।
সুদের হার সুনির্দিষ্ট করার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে অর্থনীতির স্বাস্থ্যকে চাঙ্গা করা, সুদের হার নির্ধারণ করা নয়। সুদের হার নির্ধারণ করে ব্যবসায়ী, ঋণ প্রদানকারী ও বিনিয়োগকারীরা।
অর্থমন্ত্রী তার আগে সম্পুরক বাজেটের আলোচনায়ও অংশ নেন। তিনি সম্পুরক বাজেটের ওপর সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাব দেন।তিনি বলেন, সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করেই এই সম্পূরক বাজেট আনা হয়েছে। সম্পূরক বাজেট পাস সংসদে ২০১৫-১৬ সালের অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়েছে।
প্রথমে ৩১টি মঞ্জুরী দাবি কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের প্রস্তাবে এই সম্পর্কিত আইন কণ্ঠভোটে পাস হয়। আজ/গতকাল দুপুরে অর্থমন্ত্রী নিদিষ্টকরণ (সম্পুরক) আইন ২০১৬ নামে বিলটি উত্থাপন এবং পাসের প্রস্তাব করলে সেটি পাস হয়।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এসময় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সম্পূরক বাজেটের ওপর মোট ৩১টি দাবি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপিত হয়। এগুলোর ওপর ৭ জন সংসদ সদস্য ১৯৪টি ছাটাই প্রস্তাব জমা দেন। এর মধ্যে স্পিকারের অনুরোধে সংসদ সদস্যরা মাত্র ৬টি দাবির ওপর আলোচনাং অংশ নেন।
বাকীগুলো সরাসরি কণ্ঠাভোটে পাস হয়ে যায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্ধের মঞ্জুরী দাবির ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা তার জবাব দেন।
প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। সম্পূরক বাজেটের আওতায় ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে ১৯ হাজার ৮০৩ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়।
এর মধ্যে সর্বাধিক ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি ২৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। সবচেয়ে কম ৪৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বছর শেষ হওয়ার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে দেওয়া বরাদ্দ কাটছাঁট করার ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার সম্পূরক বাজেটে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। এ অর্থ বছরের মূল বাজেটটি ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে এটির আকার কমেছে ৩০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটের আকার কমে আসার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে। আর ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ কমেছে। সম্পুরক বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয় সোমবার বিকালে। মঙ্গলবার সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা হয়।