ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিএনপি যে বরাবরই আন্তরিক এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ন ভাবে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসী তা আরেকবার প্রমানিত হোলো।
সংসদের বাইরে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে রোববার বিকালে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির এই সংলাপ শুরু হলো।
নির্বাচন পরিচালনায় ইসির ভূমিকাই যে ‘মুখ্য’, তা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রায় এক ঘণ্টার এই আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নিতে আসায় রাষ্ট্রপতি শুরুতেই তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিএনপি যেসব প্রস্তাব পেশ করেছে সেগুলো সহায়ক হবে।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বঙ্গভবনে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান।
পরে দরবার হলে রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিএনপির ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই সংলাপে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
জয়নাল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতি আলোচনায় বলেন, ‘আপনাদের মতামত পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যে কোন বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় সমাধানের বহুমুখী পথের সন্ধান দেয়’।
প্রেস সচিব জানান, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানোয় বিএনপি চেয়ারপারসন রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ দেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি একটি লিখিত প্রস্তাব আলোচনায় তুলে ধরেন।
এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন ও নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে তাদের প্রস্তাবও তিনি তুলে ধরেন। জয়নাল আবেদীন বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগের সফলতা কামনা করেছে এবং এ ব্যাপারে তাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে জানিয়েছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাহীন বিএনপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। এবার যে ইসি গঠন করা হবে, তাদের অধীনেই হবে ২০১৯ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন। গত নভেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ইসি ও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির ১৩ দফা প্রস্তাব সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন খালেদা জিয়া। সেসব প্রস্তাব সংলাপেও তোলা হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি বসবেন মঙ্গলবার বিকাল ৩টায়। পরদিন বিকাল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (এলডিপি) ও সাড়ে ৪টায় কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ এবং বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় সরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে বসার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতির।
পরে পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি দলকে আলোচনায় ডাকা হবে বলে বঙ্গভবনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।