DMCA.com Protection Status
title="৭

পলাতক জঙ্গি নেতা মারজান ও সাদ্দাম কথিত বন্দুকযুদ্ধে(???) নিহত !!!!

zongi1-copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ   গতকাল গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম মারজান ও সাদ্দাম হোসেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মারজান গত এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিল। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের নব্য জেএমবি প্রধান সাদ্দাম জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।

মারজান ও সাদ্দামকে দীর্ঘদিন থেকে খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে এই দুই জঙ্গি। ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেল ও অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ইউনিট রাতে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি চেকপোস্ট বসায়। রাত ৩টার দিকে মারজান ও তার সহযোগী সাদ্দাম মোটরসাইকেলে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকা দিয়ে রায়েরবাজারের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পুলিশ তাদের চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু তারা মোটরসাইকেল না থামিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে এবং    
গুলি করে। পরে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে দুজন নিহত হয়। পরবর্তীতে তাদের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামালউদ্দিন মীর বলেন, আমি ঘুমে ছিলাম। এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া জানান, রাত পৌনে ৪টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার গাড়িতে করে গুলিবিদ্ধ দুজনের লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসে থানা পুলিশ। একজনের বয়স ২৮ বছর, আরেকজনের ৩২ বছরের মতো। তাদের মাথা ও বুক গুলিবিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের একজন মারজান, যাকে গুলশান হামলার পর থেকে পুলিশ খুঁজছিল। অপরজন সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল। সাদ্দাম ছিল উত্তরাঞ্চলে জেএমবির অন্যতম সংগঠক। গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম হোতা ছিল মারজান।

গত বছরের জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে জিম্মির পর হত্যা করে। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তে উঠে আসে মারজানের নাম। মারজানকে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড উল্লেখ করে তাকে ধরিয়ে দিতে সকলের সহযোগিতা চায় পুলিশ।
মারজান ছিল নব্য জেএমবি’র মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর সহযোগী। বেশিরভাগ সময় তামিম চৌধুরীর সঙ্গে চলাফেরা করতো সে। বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি আরবিতে দক্ষ ছিল মারজান।

কানাডা প্রবাসী তামিম ঢাকা শহর ভালোভাবে চিনতো না। তাকে এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতো মারজান।
হলি আর্টিজানে হামলার সময় তারা দুজন মিরপুরে এক জঙ্গি আস্তানায় ছিল। সেখানে বসেই হামলায় অংশগ্রহণকারী রোহান ইমতিয়াজের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয় বলে কাউন্টার টেররিজম সূত্রে জানা গেছে।
অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা মারজানের সঙ্গে যোগাযোগ করেই হলি আর্টিজানের ভেতর থেকে রক্তাক্ত লাশের ছবি বাইরে পাঠিয়েছিল জঙ্গিরা। মারজান ছিল গুলশান হামলার অপারেশন কমান্ডার।

সে টার্গেট সিলেক্ট করার পাশাপাশি নিজেই পাঁচ হামলাকারীকে নির্বাচন এবং তাদের হলি আর্টিজানে হামলার জন্য প্রস্তুত করেছিল বলে জানান তিনি।
হামলার আগে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট রেকি করে জেএমবির অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিমকে সে জানিয়েছিল,  হামলার জন্য হলি আর্টিজান তার কাছে  উপযোগী বলে মনে হয়েছে। ওই রেস্টুরেন্টে হামলা চালালে একসঙ্গে অনেক বিদেশিকে হত্যা করা যাবে। মারজানের পরামর্শেই  হলি আর্টিজানে হামলার প্রস্তুতি নেয় জঙ্গিরা। ওই হামলায় মারজান অপারেশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
গুলশান হামলার পর গত ২৭শে আগস্ট নব্য জেএমবি’র হোতা কানাডার পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিক তামিম চৌধুরীসহ তিনজন নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে নিহত হয়। এরপর ১০ই সেপ্টেম্বর আজিমপুরের আরেক জঙ্গি আস্তানা থেকে জঙ্গি তানভীরের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা খাদিজা, জেএমবি নেতা বাসারুজ্জামান চকোলেটের স্ত্রী শারমিন শায়লা আফরিন ও গু নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজিমপুরে অভিযানকালে নব্য জেএমবি নেতা তানভীর কাদেরী আত্মহত্যা করে বলে জানায় পুলিশ।
পাবনার হেমায়েতপুরের আফুরিয়া গ্রামের হোসিয়ারি শ্রমিক নিজাম উদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম মারজান। পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হয় মাদরাসায়। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল মারজান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত হয়ে যায় সে। ২০১৫ সালের  জানুয়ারি থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ‘বন্দকযুদ্ধে’ নিহত সাদ্দাম হোসেনের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চরবিদ্যানন্দ গ্রামে। তার পিতা তাজু আলম ওরফে আলম জলার। উত্তরাঞ্চলে জেএমবির জঙ্গি কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন থেকে সম্পৃক্ত সাদ্দাম। বিভিন্ন সময়ে সে চঞ্চল, রাহুল, সবুজ ও রবি নামে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। ২০১৫ সালের ৩রা অক্টোবর জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা, রংপুরের কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা পঞ্চগড়ের মঠ অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যা, কুড়িগ্রামে ধমান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা এবং বাহাই নেতা রুহুল আমীন হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তে তার নাম উঠে এসেছে।
সাদ্দামের পিতা তাজু আলম সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ১৪ই এপ্রিল রাতে পুলিশ সাদা পোশাকে সাদ্দামকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোপালচরণ গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। সাদ্দাম ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিল। ২০১৪ সালের ২৭শে ডিসেম্বর বিয়ে করে সাদ্দাম। তার একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!