DMCA.com Protection Status
title="৭

ক্রিমিয়ায় কেন এতো আগ্রহ রাশিয়ারঃ

Pebble_beach_Crimea_Kanakaরাশিয়ার সঙ্গে একীভূত হতে গণভোটে সম্মতি, স্বাধীনতা ঘোষণা। এরপর রুশ ফেডারেশনে যোগ দিতে খসড়া চুক্তিতে স্বাক্ষর। মাত্র দুই দিনের মধ্যেই সব হয়ে গেল। এ নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় ক্ষিপ্ত রাশিয়ার ওপর। কিন্তু ১০ হাজার বর্গমাইলের ক্ষুদ্র ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি রাশিয়ার মতো বিশাল রাষ্ট্রের কাছে কেনই বা এত আকর্ষণীয় হয়ে উঠল? রাশিয়ার বিখ্যাত কবি ম্যাক্সিমিলিয়ান ভলোশিনের মা ক্রিমিয়ার ছোট গ্রাম ককটেবেলে এক টুকরো জমি কিনেছিলেন। সেই জমিতে জলাশয়মুখী বাড়িও তৈরি করেন ভলোশিন।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশকে তার বাড়িই পরিণত হয় মস্কো ও সেইন্ট পিটার্সবার্গের কবি-শিল্পী-দার্শনিক ও লেখকদের আড্ডাখানায়। বিংশ শতাব্দীর আরেক উল্লেখযোগ্য নারী সাহিত্যিক মারিনা সভেটেভা তার স্বামী সের্গেই এফ্রোনের সঙ্গে প্রথম দেখা করেন ককটেবেলের সৈকতে। রাশিয়ান আধুনিকতাবাদী কবি আনা আখমাটোভা এবং ওসিপ ম্যান্ডেলস্টামও কিছু সময় কাটান ককটেবেলে। শহুরে জটিলতা থেকে বাইরে তখন ক্রিমিয়া ও কৃষ্ণসাগর এলাকা পরিণত হয় বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়নের শিল্পীদের উপনিবেশে এই কবি-সাহিত্যিকদের হাত ধরেই ক্রিমিয়া জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসেবে। সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণকারী যে কারোর জন্য ক্রিমিয়া পরিণত হয় একটি আকর্ষণীয় ছুটি কাটানোর জায়গায়। তাই রাশিয়ানদের কাছে ক্রিমিয়া স্বাধীনতা, বিনোদন, খেলাধুলা, খাবার; সবকিছুর জন্যই একটি মডেল।

কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী পর্যটন শিল্পে তুরস্কের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকার পরও ক্রিমিয়া এখনো তার আবেদন ধরে রেখেছে। নীল আকাশ ও রৌদ্রস্নানের জন্য ক্রিমিয়ার রয়েছে বিশেষ জনপ্রিয়তা। তবে অঞ্চলটির পার্থিব গুরুত্বও অনেক। রাশিয়ান সাম্রাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ের কাছে ক্রিমিয়া একসময় ছিল ভূ-মধ্য অঞ্চলে প্রবেশপথ। ক্রিমিয়ার সুন্দরতম ভূ-দৃশ্য ও প্রাচীন নিদর্শন খুবই মূল্যবান। তাদের মধ্যে আছে_ ফিওডোসিয়ায় বালুকা-সৈকত, আঙুর ক্ষেত ও ফলগাছ সমৃদ্ধ ঢালু পাহাড়, দর্শনীয় সমুদ্র বাঁধ, পশ্চিমের জঙ্গলাকীর্ণ পর্বতশ্রেণীর আড়ালে আবৃত সুপ্রাচীন গুহার শহর, পাহাড়ের কিনারে অবস্থিত দুর্গ ইত্যাদি। ক্রিমিয়ার ফিওডোসিয়ায় ঊনিশ শতকের শেষ দিকে টার্কি ইহুদিরা বিশাল অট্টালিকা তৈরি করেন। পরে এগুলোকে চিকিৎসাকেন্দ্রে পরিণত করা হয়। তবে বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো ধ্বংস হতে বসেছে।

stock-photo-crimea-mountains-and-black-sea-landscape-good-sunny-day-52794154রাশিয়ান রাজপরিবারের সদস্যরা গত শতাব্দীর প্রথম ভাগে ক্রিমিয়ায় অবকাশ কাটাতে যেতেন। এ ছাড়া রাশিয়ার শেষ জার রাজা দ্বিতীয় নিকোলাস ক্রিমিয়ার লিভাডিয়ায় একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। রাশিয়া সাম্রাজ্যের ক্রিমিয়ার প্রতি আগ্রহের কারণ ছিল মূলত কৌশলগত। আঠারো শতকের শেষের দিকে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে ক্রিমিয়াকে ছিনিয়ে নেন রাশিয়ান রানী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট। নৌবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করতে উষ্ণ পানির বন্দর খুঁজছিলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে ক্রিমিয়া ছিল উত্তরাঞ্চলের তীব্র ঠান্ডা থেকে রাশিয়ার জন্য পরিত্রাণ এবং বহির্বিশ্বে প্রবেশের দুয়ার। ক্রিমিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে ক্রিমিয়ান তাতার। সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন ১৯৪৪ সালে ক্রিমিয়া থেকে এই জাতিভুক্ত পুরো জনগোষ্ঠীকেই নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় ওই অঞ্চলে বসবাসকারী দুই লাখ তাতারের প্রায় অর্ধেককেই বের করে দেয়া হয়।

 ভুলবশত তাতারদের বিরুদ্ধে নাৎসি বাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগও আনা হয়েছিল। সে সময় প্রায় পুরো তাতার জনগোষ্ঠীকেই উজবেকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে স্বাধীন হওয়ার পর এক লাখ ক্রিমিয়ান তাতার তাদের জন্মভূমিতে ফিরে আসে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তাতারদের বাড়ি-ঘর রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ানরা দখল করে নেয়। তবে সেই প্রতিকূলতা পেরিয়ে তাতাররা রাজনীতিতে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। রোববারের গণভোটেও দেখা গেছে, তারা ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার একীভূত করার পক্ষে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মদ প্রস্তুতে আদর্শ স্থানে অপরিবর্তিত থাকে ক্রিমিয়া। ককটেবেলের উন্মত্ত সৈকত, সাশ্রয়ী মদ, গোল্ডেন ইগল অথবা আলবিনো পিককের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ সবই আছে ক্রিমিয়ায়। দুই দশকের ব্যর্থ পুঁজিবাদে এত সুযোগ থাকার পরও তলানিতেই পড়ে আছে ক্রিমিয়া। আর এটাই হয়ত ক্রিমিয়ার প্রতি রাশিয়ার এত আগ্রহের কারণ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!