ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে চরম টানাপড়েন চলছে।
সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কে পদত্যাগেরও আল্টিমেটাম দিয়েছেন। দেশের রাজনীতিতেও এখন এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে এখন সরকার ও বিরোধীদল মুখোমখি অবস্থানে।
প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সবমহলে যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে ঠিক তখনই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহার আয়-ব্যয়ের তদন্ত শুরু করেছে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
আয়-ব্যয়ের এ তদন্তকে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা বলে মনে করছেন অনেকে।
জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির পরিবারের আর্থিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখছে জাতীয রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। বিচারপতি সিনহা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে যথাযথ ভাবে আয়কর দিয়েছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং তাঁর শ্যালকের বার্ষিক আয়কর বিবরণী নিরীক্ষা করছে তারা।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দুই কন্যা। একজন ভারতে থাকেন, অন্যজন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। তারা কীভাবে চলেন, বাংলাদেশ থেকে বৈধ অবৈধ পথে তাঁদের কোনো টাকা পয়সা পাঠানো হয়েছে কিনা। সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এনবি আরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেছেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেকোনো ব্যক্তিরই আয়ের উৎস এবং তাঁর আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য খতিয়ে দেখতে পারে।
এটাই আমাদের কাজ। এর মধ্যে অন্যকোনো যোগসূত্র খুঁজতে যাওয়া ঠিক না।’
এনবিআরের নথিতে দেখা যায়, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৯৭৪ সালে সিলেটে আইনপেশা শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি হাইকোর্টে এবং ১৯৯০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর বিচারপতি সিনহা হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে শপথ নেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি কত আয়কর দিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখছে এনবি আর। একই সঙ্গে বিচারপতি হবার পর তাঁর আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যপূর্ণতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিচারপতি সিনহার স্ত্রীর সম্পত্তি, জমি-জমা, ব্যাংক হিসাব ইত্যাদির উৎস সম্পর্কেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তাঁর দুই মেয়েকে কীভাবে বিদেশ পাঠানো হলো সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান চলছে।
অপরদিকে, বিচারপতি সিনহা এবং তাঁর পরিবার অবৈধ পন্থায় কোনো অর্থ দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই তদন্ত কাজ করছে।
গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রণালয় একটি অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে ‘বিষয়টি’ খতিয়ে দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়। ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের কাজ হলো অবৈধ অর্থ বিদেশ পাচার খতিয়ে দেখা।
এদিকে, বর্তমান এ উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির আয়-ব্যয়ের তদন্ত নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে নানান প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
এনিয়ে অনেকেই সরকারের সমালোচনা করছেন।