DMCA.com Protection Status
title="৭

সহায়ক সরকার প্রশ্নে অনড় আওয়ামী লীগ,আবার চরম অনিশ্চয়তার মুখে বাংলাদেশ।

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  নির্বাচন কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের মধ্য দিয়ে দেশে এক ধরনের নির্বাচনী আবহ তৈরি হলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ।অথচ দেশের সিংহ ভাগ জনগন মনে করে দলীয় সরকারের অধীনে সুুস্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অসম্ভব।

 

ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দুই প্রধান দলের নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে এখন পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দল দুইটির অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত শীর্ষ পর্যায় থেকে দেয়া হয়নি। যদিও উভয় দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানিয়েছেন বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। সেভাবে দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রার্থী নির্বাচনে একাধিক জরিপ চালানো হয়েছে।

অপর দিকে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া স্পষ্টভাবে গত ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেখে কোনো জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ধরনের কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। 


বিএনপির এ ঘোষণায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অবস্থান জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ জানান, বিএনপির এ দাবির পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। হতে পারে এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল। এর মাধ্যমে দরকষাকষি করে তারা একটু বাড়তি সুবিধা পেতে চায়। তার মতে বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় বা সংসদে ছিল। তারা সংবিধান এবং আইন জানে। একটি দায়িত্বশীল ও বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা এটা বেশ ভালো করেই জানে সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন হতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কারো সুযোগ নেই।

অপর দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তার মতে সংলাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়া অতীব প্রয়োজন।

অবশ্য দুই দলের মধ্যে আলোচনার বিষয়টি একেবারে নাকচ করেননি মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, সংলাপ যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে হতে পারে। এটা অযৌক্তিক নয়; বরং হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই মুহূর্তে বিএনপির সাথে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি অভিযোগ করেন বিএনপি যেভাবে আক্রমণাত্মক ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে দুই দলের মধ্যে সংলাপের সম্ভাবনা কম।


বিএনপি মহাসচিবও মনে করেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের পথ বেরিয়ে আসতে পারে।

বিএনপি কী ধরনের নির্বাচনকালীন সরকার চায় এবং তা কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না সে ব্যাপারে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আলোচনা বা সংলাপের রূপরেখা নির্ধারণ করা সম্ভব। যথাসময়ে বিএনপি রূপরেখা প্রকাশ করবে।

তিনি আরো বলেন, সংসদ বহাল রেখে কিংবা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ এক সময় আন্দোলন করেছিল। তাদের দাবি ছিল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা। ফলে নির্বাচনকালীন সরকার কেন দরকার তা নতুন করে বুঝিয়ে দেয়ার দরকার নেই। 


২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলের সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, তখনকার পরিস্থিতি আর বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের সময় সর্বদলীয় সরকার গঠনের কোনো প্রয়োজন হবে না। আমরা আশা করি, বিএনপি মুখে যাই বলুক এ সরকারের অধীনেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে। 
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই দলের এ বিপরীতমুখী অবস্থানে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে বলে মনে করেন খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামান। তিনি  বলেন, দুই পক্ষ অনড়। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে না। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা ছাড়া নির্বাচন করবে না।

অপর দিকে বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। দুই দলের মধ্যে আপসের সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না। তিনি মনে করেন শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল একটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তার মতে শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে আবার রাজপথে ফিরে যেতে হতে পারে। এর ফলে দেশ আরেক দফা অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়বে এবং গণতান্ত্রিক ভবিশষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!