মোহাম্মদ জসিম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কিছু পথভ্রষ্ট নেতৃবৃন্দের কারনে গত ফখরুদ্দীন মঈনুদ্দীনের সময় দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের উপর নেমে আসে বিশাল এক তান্ডব, তা কার না জানা। জিয়াউর রহমানের দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে সে সময় ১/১১ সরকারের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে উচ্চ চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে চলে যেতে হয়।
শুধু তাই নয়, দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও বলা হয়েছিল দেশ ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু বেগম জিয়া দেশের মায়া, মানুষের ভালবাসা ছেড়ে সেই দিন দেশ ত্যাগ করেননি। যা হবার তাই হবে এই বাক্য মাথায় রেখে সেদিন বেগম জিয়া দেশেই ছিলেন। পরাজয় বরণ করেছিলেন ফখরুদ্দীন, মঈনুদ্দীন সরকার। ২০১৪ সালের বিএনপি বিহীন নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ১৫৪ জন এমপি কোন প্রকার ভোটাভোটি ছাড়াই নির্বাচিত হন। আর নির্বাচনের দিন ৫জানুয়ারী তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
আমার এই কথা তুলে ধরার উদ্দেশ্য, যখন বেগম জিয়াকে ইট-বালুর ট্রাক দিয়ে রাজপথে বের হবার রাস্তা বন্ধকরে দেয়া হয়, বিএনপির কোন নেতা কর্মীকে সেদিন ঢাকার রাজপথে দেখা যায়নি। আর সেই সকল দূর্দিন কাটিয়ে বিএনপি যখন ঘুরে দাড়িয়েছে তখনি জিয়া পরিবার ও তারেক রহমানকে নিয়ে কুৎসা রটাতে রাস্তায় নামে কিছু সরকার পন্থী সংঘবদ্ধ হলুদ মিডিয়া। এদের অন্যতম পূর্বপশ্চিম ডটকম যার সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান।
তারেক রহমানকে দলের বোঝা এবং দেশে ও বিদেশে তারেক ভক্তদের প্রভুভক্ত কুকুর বলে গালি দেয় পূর্বপশ্চিম ডটকমের সম্পাদক এই পীর হাবিবুর রহমান। পীর হাবিবের অশালীন ভাষার এই কথাটি যখন তারই নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম ডটকমে প্রকাশ করেন। তখন অনলাইনে ও সুশাল মিডিয়ায় এর বিরুদ্ধে ঝড় উঠে। তখন কিছু লেখা চোখে পরেছিল।
সেই ঝড়তোলা স্টাটাস ছিল, এরাই কি বিএনপির বোঝা নয়? লক্ষকোটি জনতার হৃদয়ের স্পন্দন, তৃণমূল রাজনীতির প্রবক্তা, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার, প্রাণপ্রিয় নেতা দেশনায়ক তারেক রহমানকে ‘বিএনপির বোঝা’ এবং তাঁর অনুসারীদের ‘প্রভুভক্ত কুকুর’ বলে অভিহিত করেছে যে পীর হাবিব তার সঞ্চালিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করে কী অর্জন করতে পেরেছে ব্যারিস্টার রুমীন ফারহানা ও লে. জে. মাহবুবুর রহমান?
দেশ উদ্ধার করার জন্য কি পীর হাবিবের দরবারেই ধরনা দিতে হবে? দলের কান্ডারীদের প্রতি যারা বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকতে ব্যর্থ হয়, যারা নেতার মর্যাদা ভুলুন্ঠিত করতে এতটুকু দ্বিধা করে না, যারা পীর হাবিবের মতো কুলাঙ্গারের সাথে সখ্য স্থাপন করে তালেবর সাজতে চায় তারা আর যা-ই হোক দলের প্রকৃত হিতাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। শুক্কুরে শুক্কুরে আষ্টে দিন গেলো পদে বসেছে, মাঠের রাজনীতিতে শৈশব পার হয়নি এখনো, তার আগেই নেতার মুখে চুনকালি মেখে একাকার। আওয়ামী লীগ ও তাদের দালালদের অতিথি হয়ে বিএনপির যে নেতারা নিজেদের ধন্য মনে করে, তারাই বিএনপির আসল বোঝা।
দল বাঁচাতে এসব বোঝা এক্ষুনি ঝেড়ে ফেলতে হবে। আরেকটি লেখা ছিল এমন, কালসাপদের আমরা দুধকলা দিয়ে পুষি? বাংলাদেশের প্রাণভোমরা তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম প্রোপাগান্ডা মাস্টার ভন্ডপীরের মুরিদ বিএনপির ছদ্মবেশী দুশমন কালসাপদের আমরা বিএনপি দুধকলা দিয়ে পুষি। তাই এই ভন্ডপীর বাবা বার বার ছোবল দেয় ভন্ড মুরিদদের দেয়া তথ্য দিয়ে! এটাই নিয়তি! কালসাপকে সনাক্ত করে তাকে দিয়েই খেলতে হয়, আর সেই খেলা দেখাতে দক্ষ সাপুড়ে হতে হয়! কতরূপের কালসাপ আছে এবং কোন সাপ কোথায় দুধ খায়, আসছে পূর্নিমায় সব পরিস্কার হবে!
অন্য এরেকটি পোষ্ট, গোলাম মওলা রনি টকশোতে ভালো কথা বলে তাই বলে আওয়ামীলারা কি তাকে মাথায় তুলে রাখছে? এই ব্যাপারে লীগের বুইড়ারা আমাদের থেকে কোটি মাইল এগিয়ে 5G গতিতে চলিতেছে। তবে চোর মন্ত্রী আর জালিয়াত তথ্য উপদেষ্টা কিন্তু ঠিকই চরকি ঘুড়াইতাছে রাজার হালে, কারন তাঁরাই আসল মাল -বাচিয়ে রেখেছে অবৈধ সরকারকে তাদের কেরামতি দিয়ে! খাঁচার ভিতর অচিন পাখিকে রাখিতে হয়।
আর তা না হলে অচিন পাখির গজানো পাংখা কেটে দিতে হয়, যাতে এদিক সেদিক দৌড় ঝাঁপ না দেয়। প্রিয় নেত্রী আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আগামীদিনের রাষ্ট্রনায়ক প্রিয় নেতা দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানের উর্ধে কেউ নয়। সুশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া এই কলাম গুলো চোখে পরার পর আমি হঠাত আতকে উঠলাম, আমার মনে পরে গেল পেছনের কিছু কথা। লে. জে. মাহবুবুর রহমানের সাথে আমার ব্যক্তিগ্ত ভাবে কোন আলাপ আজও হয়নি তাই এই মূহুর্তে তার পক্ষে বিপক্ষে মতামত দেয়া থেকে বিরত রইলাম।
কিন্তু ব্যারিষ্টার রুমীন ফারহান, তিনি বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তার দলের প্রতি বা দলের কর্মীদের প্রতি যে অবহেলা তার দুএকটি কথা তুলে না ধরলেই নয়। আমি তখন নয়াদিগন্ত পত্রিকার প্রবাসী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি। লেবানন বিএনপিতে কাউন্সিলার নির্ধারণ নিয়ে দলে ক্রোন্দল চলছিল। সেই বিষয়ে কাউন্সিলার কারা হতে পারবেন জানতে ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানকে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে কল করি।
আমার নয়াদিগন্ত পত্রিকার পরিচয় পেয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হলেও তার ব্যবহারে পেলামনা কোন বিএনপির পরিচয়। আমি যখন জানতে চাইলাম কারা কারা কাউন্সিলার হতে পারবে তখন তিনি বললেন আমাকে কল করেছেন কেন? আপনি আলাল কে ( মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল) কল করুন। আমি বললাম আলাল সাহেব কি এই দায়িত্বে আছেন, আমি শুনেছি আপনি এই বিষয়ে জানেন তাই আপনার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে আপনাকে কল করেছি। তখন তিনি একটু রাগান্নিত্ব হয়ে বলেন, তাহলে আপনি খালেদা জিয়াকে কল করে জেনে নিন। কথোকপোনের এক পর্যায়ে তিনি আমাকে আলালের নাম্বার দিচ্ছেন বলে লাইন কেটে দেন।
পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। লেবানন বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দলের এক সিনিয়র নেতা তাকে কল করে এ বিষয় জানতে চাইলে তাকেও তিনি বলে দেন আপনারা খালেদা জিয়ার সাথে যোগাযোগ করেন। তখন সেই সিনিয়র নেতা দুঃখ করে বলেন, আমি দলের কর্মী হয়ে যদি ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের নিকট কোন মূল্য না পাই আমরা কাকে নেতা বানাই। দল বারে বারে কেন এরকম নেতাদের হাতে দায়িত্ব দেন। বলার কথা একটাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের জনপ্রিয় একটি দল, যে দল বারবার গনতান্ত্রিক নিয়মে দেশের মানুষের ভালবাসায় ক্ষমতায় এসেছে, রাষ্ট্রপরিচালনা করেছে। গুটিকয়েক এই ধরনের হাইব্রিড নেতার কারনে দলে কোন দাগ পরতে পারেনা।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিষ্ট