ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের ১ম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, সাউথ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার যুগের পর যুগ নির্বাসন এবং কারাবন্দী করে রাখায় তিনি যেভাবে বিশ্বনেতা হয়ে উঠেছিলেন, ঠিক তেমনই বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া কারাদণ্ডের কারণে তিনিও অচিরেই বিশ্বনেতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন।
মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মালয় মেইল’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ এসব কথা বলেন।
মাহাথির বলেন, ‘আমি সাধারণত আমাদের প্রতিবেশি দেশ বা বাংলাদেশের মতো বন্ধুভাবাপন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করি না। কিন্তু আমি দেখছি, বাংলাদেশে রাজনীতি বেশি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ কম। এখানকার সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী এখন কারাগারে আছেন। এমনকি তিনি জামিন পর্যন্ত পাচ্ছেন না। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ন্যায় নাকি অন্যায় তা বিবেকবান আদালতের ওপরই ছেড়ে দিতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সাউথ আফ্রিকার নন্দিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে একসময় তৎকালীন সরকার নির্বাসনে পাঠিয়েছে, কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী করে রেখেছে। কিন্তু এসবের কারণেই ম্যান্ডেলা বিশ্বনন্দিত নেতা হয়ে উঠেছেন, আর সেসব স্বৈরশাসকরা এখন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির এখনকার কর্মকাণ্ড বিতর্কিত হলেও তাকে যখন স্বৈরশাসকরা যুগের পর যুগ গৃহবন্দী করে রেখেছেন, তখন কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি গণতন্ত্রের নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঠিক এভাবেই খালেদা জিয়া এখন পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক নেত্রী হয়ে উঠছেন।’
‘আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবেই। কিন্তু সেসব সরিয়ে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিৎ দেশের উন্নয়ন ও বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করা। কিন্তু সেখানে এসব করার বদলে প্রতিপক্ষ দমনে মনোযোগ অনেক বেশি। আপনি যদি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেন, তবে বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। দেশের আপামর জনতার জীবনমানে অগ্রগতি হবে। কিন্তু তা তেমন একটা হচ্ছে না’, বলেন মালয়েশিয়ার সাবেক এই সফল প্রধানমন্ত্রী।
মাহাথির বলেন, ‘বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যেমন, গার্মেন্ট শিল্প। ওষুধ শিল্প ও অন্যান্য খাতেও দেশটি ভালো করছে। বাংলাদেশের মানুষ খুব উদ্যোগীও। তাদের দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভালো নীতিমালা। কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না। কারণ, বাংলাদেশে উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতি বেশি। আপনি যদি দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন, দৃষ্টি দেন ও অর্থনৈতিক নীতির কথা বলেন, তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি।’
পশ্চিমাদের কূটচাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমারা চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। তারা চায় মুসলিম দেশগুলোর সরকার চালাবে তাদের বেছে নেয়া মানুষরা। ক্ষমতা পরিবর্তন করতে গিয়ে, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। তবে মুসলিম দেশগুলোর রাজনীতিবিদরা নিজেরাও মাঝে মাঝে অস্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে। এই সুযোগে পশ্চিমারা কিছু সময় নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তারা সমর্থন দেয়, সরকারের ভূমিকাকে খর্ব করে, প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালায়। এছাড়া বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে অস্থিতিশীলতা, এর পেছনে পশ্চিমারা অনেক বেশি জড়িত। কিন্তু মুসলমান রাজনীতিবিদরা এসব না বুঝেই তাদের ফাঁদে পা দেয়। খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করে বাংলাদেশ এখন সেই পুরনো ফাঁদে পা দিয়েছে।’