ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘অসুস্থতা’ নিয়ে বাংলাদেশের গনমাধ্যম এখন সরগরম।
এর ফলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকেই ফোন করে মেসেজ দিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন- আসলে কি হচ্ছে। এনিয়ে বিএনপি মহাসচিবের সংবাদ সম্বেলন, এর পরপরই আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদকের ‘দরকার হলে চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানো হবে’ এমন উক্তি, অতঃপর মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে বিএনপি দপ্তরকে।
গত ২৮ তারিখে বেগম জিয়াকে দু’টি মামলায় বকশিবাজার এবং কুমিল্লার আদালতে উপস্থিত করানোর জন্য হাজিরা পরোয়ানা ইস্যু করা হয় আগেই। বেগম জিয়া অসুস্থ বোধ করায় ঐদিন আদালতে হাজির করেনি সরকার।
এ নিয়ে কোর্টে বিএনপির আইনজীবিরা কড়া ভাষায় বক্তৃতা করেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার ব্যাখ্যা দাবী করেন, তারপরেই মহাসচিবের প্রেস কনফারেন্স। মহাসচিবের বক্তৃতা শেষ না হতেই আ’লীগ সাধারন সম্পাদক তার জবাবে “চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর” কথা প্রকাশ করেন। এতে করে অনেকের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে তবে কি বাজারে প্রচলিত আওয়ামী সেই গুজব (রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বিদেশে চিকিৎসায় যাবেন) সফল হতে চলল?
আমার জানা মতে, এটা হওয়ার কোনেই সম্ভবনা নাই। বেগম জিয়া অতীতেও শারিরীকি অসুস্থতার কারনে বহুবার কোর্টে যাননি, কাজেই এটাও নতুন কিছু নয়। তবে নেত্রীর অসুস্থতার খবর শুনে বিএনপি মহাসচিবের বক্তৃতায় আবেগ ছিলো বটে, তিনি বাইরে থেকে অমন কথা হয়ত বলতেই পারেন। তিনি তো আর কারাবন্দী নেত্রীর সাথে কথা বলে এ বিবৃতি দেননি। দেশনেত্রী বিদেশে চিকিৎসা চাননি, তাই এনিয়ে অনাহুতভাবে চর্বিত চর্বন অর্থহীন। দলীয় প্রধানের অসুস্থতার খবর পেলে নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন হবেন, খোঁজখবর নিবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর যদি কারবন্দী থাকেন তবে তো উদ্বেগ আরও বেশী থাকবে।
মহাসচিবের বক্তব্যকে ভুল ব্যাখ্যা করে যদি সরকারী দলের সাধারন সম্পাদক নিজের মনের ভাব (বিদেশে পাঠাব) প্রকাশ করতে চায়, তবে সেটা তার দৈণ্যতা। এক্ষেত্রে কিছু বলার থাকলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব বলবেন। আগ বাড়িয়ে ওবায়দুল কাদেররের কথা বলা মানে- ‘রান্নাঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’ দশা!
বেগম খালেদা জিয়াকে যারা চিনেন জানেন, তারা নিশ্চিত- কোনো ষড়যন্ত্র্রমূলক পরিকল্পনায় তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর স্বপ্ন কখনই সফল হবে না।১/১ এর কুখ্যাত মইন-ফখরুদ্দীন সরকারই পারে নাই। আর এই অবৈধ হাসিনা সরকারও পারবে বলে মনে হয় না।
অবৈধ হাসিনা সরকার প্রথমে ভেবেছিল, বেগম জিয়াকে কারাবন্দী করলে তাদের লাভ হবে। কিন্তু সেটা সহসাই বুমেরাং হয়েছে। জেলে নেয়ার পরে দেশের মানুষ যখন জানলো, সেখানে কোনো দুর্নীতিই হয়নি, মিথ্যা অভিযোগে সাজানো রায়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে,তাতে দেশের অধিকাংশ জনগন বিরক্তই হয়েছে।
একটা কথা মনে রাখা দরকার, মুক্তেগম খালেদা জিয়ার চাইতে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া অনেক বেশী শক্তিশালী। সরকারে এখন বুঝতে পারছে, এ নিয়ে তারা ফাঁদে পড়েছে। এখন না পারছে ছাড়তে, না পারছে আটকে রাখতে, তাই মাসখানেক ধরে হাসিনার প্রোপাগান্ডা মেশিন বোরহান কবিরকে দিয়ে “আপোষ করে বিদেশে চলে যাবেন বেগম জিয়া” এরূপ গল্প ছড়াচ্ছে, যা ইতোমধ্যেই পাঠকদের কাছে সরকারকে হাসাস্পদ করেছে।
এখন সেই গুজবে বাতাস দিচ্ছে ওবায়দুল কাদের! এর সুত্র হিসাবে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যাখ্যা করে নিয়েছেন। আখেরে এসব করে কোনো লাভ হবে না। বেগম জিয়াকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে, আর সেটা রাজনৈতিক কারণে।
‘বেগম জিয়া কোনো অবস্থাতেই বিদেশে যাবেন না’ – এটাই নিশ্চিত।আর গেলেও নিজের ইচ্ছায় যখন খুশী যাবেন আর যখন খুশী ফিরবেন।চাপ দিয়ে এই জননন্দিত নেত্রীকে দিয়ে কিছু করানো অসম্ভব বলে আমি মনে করি।
বেগম জিয়া দেশে থেকেই রাজনীতি করবেন, সেটা কারাবন্দী হন, বা মুক্তই থাকুন। মনে রাখবেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় রাজনীতিক। তিনি একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। উনাকে নিয়ে কোনো যড়যন্ত্র করে কেউ পার পাবেন না।
বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে ছাড়া বিএনপি কোনো জাতীয় নির্বাচনে যাবে না ,যেতে পারে না।
বিএনপি চাইলে এখনি রাজপথ দখলে নিয়ে নিয়ে তুলকালাম বাধিয়ে দিতে পারে, কিন্তু কৌশলগত কারণে তা করছে নাতারা। তাই বিষয়টি নিয়ে কেহ যেনো অতিরিক্ত স্বপ্ন না দেখেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে যারা সাংবাদিক সম্মেলন করবেন, একটু জেনে শুনে করা ভালো। আর ওবায়দুল কাদের সাহেব তো হাসান মাহমুদের আরেক রুপ। আপনারা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যান হাসিনার সেই নোবেল পুরষ্কার এর মনোনয়ন পাওয়ার মতন! মিথ্যার পিছে ছুটতে ছুটতে শেষে একদিন দেখবেন ক্ষমতা,সিপাই -সান্ত্রী, লোকজন কেউ আর পিছনে নেই।
তাই হাসিনার আওয়ামী লীগকে বলি, এখনও সময় আছে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ করা সুযোগ দিন ,হারুন জিতুন ,ভবিষ্যতে রাজনীতির পথ সুগম হবে,অন্যথায় জনরোষ থেকে বাঁচতে পালিয়েও শান্তি পাবেন না।