দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ ভারতের রাজস্থানের যোধপুরের আদালতে যখন বলিউড সুপার স্টার সালমান খানের ৫ বছরের সাজা হয়, আদালতের বাইরে সে সময় উল্লাস করে মিষ্টি বিতরণ করেছে একদল মানুষ। ওরা রাজস্থানের 'বিশনয়' সম্প্রদায়ের।
১৯৯৮ সালের অক্টোবরে এই সম্প্রদায়ের মানুষই সালমান খানসহ একটি শুটিং ইউনিটের আরো কজনের বিরুদ্ধে দুটি কৃষ্ণ হরিণ – যা চিংকার নামেও পরিচিত – হত্যার অভিযোগে মামলা করে।
চিংকার হরিণ ভারতে সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায়। সে কারণে, সাথে সাথেই সালমানকে তখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, যদিও ১০ দিন পর তিনি জামিনে ছাড়া পান।
২০ বছর পর বৃহস্পতিবার সেই মামলায় তার পাঁচ বছর সাজা হলো।
এর মাঝে ফুটপাতে গাড়ি উঠিয়ে মানুষ হত্যার মামলায় তিনি রেহাই পেয়েছেন। কিন্তু দুটি হরিণ শিকারের মামলা তাকে ছাড়েনি।
প্রধান কারণ বিশনয় সম্প্রদায় এই মামলার পেছনে ক্রমাগত লেগে ছিল।
ভগবান বিষ্ণুর পূজারি বিশনয় সম্প্রদায় কয়েক শ' বছর ধরে ২৯টি রীতি অক্ষরে অক্ষরে মানার চেষ্টা করে। আর সেই সব রীতির মোদ্দা কথা – প্রকৃতির সুরক্ষা, বৃক্ষ রক্ষা, জঙ্গলের প্রাণী রক্ষা।
বিশেষ করে চিংকার হরিণকে বিশনয় সম্প্রদায় পবিত্র হিসাবে গণ্য করে। এই হরিণকে তারা বলতে গেলে পূজা করে।
প্রাচীন হিন্দু পুরানের এই কৃষ্ণ হরিণের উল্লেখ রয়েছে যে এরা ভগবান কৃষ্ণের রথ টানত। চিংকারকে মানা হয় বাতাস এবং চাঁদের বাহন হিসাবেও।
বিশ্বাস এবং ভক্তির কারণেই প্রভাবশালী বিশনয় সম্প্রদায় ২০ বছরেও এই মামলা নিয়ে হাল ছাড়েনি। সাথে ছিল প্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণের আন্দোলনকারীদের সাহায্য।
কোথায় মেলে এই কৃষ্ণ হরিণ?
সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকলেও ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে এই হরিণ দেখা যায়। ভারতের রাজস্থান এবং গুজরাটের মরু এলাকায় এগুলো চেখে পড়ে বেশি।
পুরুষ চিংকারের ওজন বড় জোর ৪৫ কেজি। উচ্চতা ৭৪-৮৮ সেমি। মাদি চিংকার অপেক্ষাকৃত ছোট।
বর্ণচোরা হরিণঃ
চিংকারের প্রধান বৈশিষ্ট এটি রং বদলায়। বর্ষার শেষে পুরুষ চিংকারের রং থাকে কালো। কিন্তু শীতের সাথে সাথে রং হালকা হতে হতে এপ্রিল নাগাদ বাদামি হয়ে যায়।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ আরাফ তাহসিন বলেন, এমনকী ব্রিটিশদের সময়ে উদয়পুরে ঝাঁকে ঝাঁকে চিংকার দেখ যেত, কিন্তু এখন সেই দৃশ্য বিরল।
"এরা ঘন জঙ্গলের প্রাণী নয়, সমতলে খোলা জায়গা এদের পছন্দ। যেহেতু এ ধরণের জায়গা দ্রুত মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে, ফলে এরা বিপদে পড়েছে"।
দুই শ' বছর আগে যেখানে ভারতে এই হরিণের সংখ্যা ছিল ৪০ লাখের মতো, ২০১০ সালে সেটি নেমে আসে মাত্র ৫০ হাজারে । ফলে, চিংকার শিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভারতে।
সালমানের সাজায় বলিউড বিপাকেঃ
বলিউডের হাজার কোটি টাকার ব্যবসা যেন সালমানকে ঘিরেই। ভাইজানের ছবি মুক্তি মানেই এক কথায় ৩শ কোটি টাকার ব্যবসা। তাইতো বলিউডের ‘হিট মেশিন’ খেতাব পেয়েছেন সালমান। চলতি বছরেও তার বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তির কাঠগড়ায় ছিল।
তবে কৃষ্ণসার প্রজাতির হরিণ শিকার মামলায় সালমান খানের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড যেন সব পরিকল্পনা ধূলিসাৎ করে দিলো। বিপাকে পড়ে গেলো বলিউড। সালমানের ওপর এই মুহূর্তে খাটানো হয়েছে এক হাজার কোটিরও বেশি টাকা।
সালমানে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে সঙ্কটে পড়েছে ১০০ কোটি টাকা বাজেটের রেমো ডি সুজার ‘রেস ৩’ সিনেমা। গত মার্চেই দুবাই থেকে শুটিং শেষে দেশে ফিরেন তিনি। আগামী ঈদের সময় ১৫ জুন ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। নির্মাতাদের আশা ছিল, আগের দুটি পর্বের তুলনায় এই ছবি ২৫০ কোটির মতো টাকা আয় করবে। কিন্তু ছবির নায়কই যখন অপরাধী হয়ে জেলে যাচ্ছেন,তখন ভবিষ্যতে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না।
একই সময়ে পরিচালক আলি আব্বাস জাফরের ছবি 'ভারত'র শুটিংয়ের কাজেও ব্যস্ত ছিলেন সালমান। কিন্তু ২০০ কোটি টাকার মতো বাজেটের এই ছবির ওপর সবথেকে বড় বাজি ধরেছেন আলি আব্বাস। ভারত-এ ৫টি আলাদা লুকে দেখা যাবে সালমানকে।
অন্যদিকে দাবাং সিরিজের তৃতীয় ছবি 'দাবাং ৩'-ও আগামী জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তবে সালমানের জেল হওয়াতে এখন মাথায় হাত পড়েছে প্রযোজক-পরিচালকদের।
‘দস কা দম’ টেলিভিশন শো'র তৃতীয় সিজন আসার কথা ছিলো সনি চ্যানেলে। ‘আমি আসছি’ স্লোগানে কিছুদিন হলো অনুষ্ঠানটির প্রোমো মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। এদিকে তার কারাদণ্ড সংশ্লিষ্ট চ্যানেলকে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।
'বিগ বস' সিজন ১২-তেও উপস্থাপকের ভূমিকাতেও সালমানের থাকার কথা ছিল। চলতি বছরের শেষে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সালমানের কারাদণ্ডে এখন সব অনিশ্চিত প্রায়।
আগামী বছর কিক ফ্র্যাঞ্চাইজির পরবর্তী ছবি 'কিক ২' মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো। প্রথম ছবি কিক-এর মতো দ্বিতীয়টিতেও দেখা যাবে সালমান ও জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজকে। তবে এখন ছবির শুটিং কবে শুরু হবে তা নিয়ে চলছে সংশয়।
