ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘আগের চেয়ে অনেক খারাপ হয়েছে এবং তা উদ্বেগজনক’ অবস্থায় পৌঁছেছে বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারান্তরীণ আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করে এসে এই দাবি করেন। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ ও উদ্বেগজনক।‘
‘ সরকারী মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া ওষুধে কোনোকাজ হচ্ছে না’, যোগ করেন ফখরুল।
এর আগে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান কারাগারে প্রবেশ করেন।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ এপ্রিল বিএনপির এই তিন নেতা সরকারের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে কারাফটকে যান। ‘জেলার ভেতর থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে মির্জা আব্বাসকে জানান যে, আজ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ এর জন্য সুস্পষ্টভাবে কোনো কারণ দেখানো হয়নি’ বলে অভিযোগ করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল, পরের দিন অর্থাৎ ২০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরাও সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও তাঁরা দেখা করতে পারেননি। জানানো হয়, তিনি অসুস্থ।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মোঃ আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার পর থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে আছেন।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিদিন অবনতি হচ্ছেঃ
কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিদিন অবনতি হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারাবন্দি আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ফাইল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পড়ে আছে, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি এবং এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে প্রতিদিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।
আজ শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এই বিষয়টা আমরা অত্যান্ত গুরুত্বসহকারে বার বার বলছি। আমরা উচ্চ পর্যায়ের একটি ডেলিগেশন টিম হোম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় পর্যন্ত পাঠিয়েছিলাম। সেখানে দীর্ঘক্ষন আলোচনা হয়েছে। হোম মিনিস্টারও কনভিন্সট যে উনার একটা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এবং একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসার প্রয়োজন। এজন্য তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সাথে সাথেই আইজি প্রিজনকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন, এ সময় তিনি তাকে বলেছিলেন চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার করুন। আমরা শুনেছি তারা (আইজি প্রিজন) তারপরে বিভিন্ন ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে যেনো চিকিৎসা দেয়া হয় এর রিকমেন্ড করেছেন। সেটা এখন পর্যন্ত সেই ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে পড়ে আছে, এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এবং এই সিধান্তহীনতার কারণে প্রতিদিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগে তিনি সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে আমাদের সাথে দেখা করতে পারতেন, কিন্তু এখন তিনি অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার কারনে আর তা পারছেন না। আমরা বার বার বলছি, অন্তত বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাটা করানো হবে। কিন্তু কতটা ভয়ঙ্কর হলে চিন্তা করেন, তার চিকিৎসা পর্যন্ত জেলখানায় করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। বেগম জিয়ার চিকিৎসা না করানোর পিছনে একটা থিম আছে, নিল নকশা রয়েছে। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে তার স্বাস্থ্যর আরো অবনতি ঘটতে পারে। আর এর দায় দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি করলেও সরকার সেদিকে কোনো কর্ণপাত করছে না। আমরা বলে আসছি বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দের হাসপাতাল ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। এখানে এমআরআই সহ সকল পরীক্ষার যন্ত্র আছে যা অন্য খানে নাই। এজন্যই আমরা ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বলছি।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই চিকিৎসা দিচ্ছে না সরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তিনি আইজিপ্রিজনকে ডেকে এনে চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নাই। সরকার যে উদ্দেশ্য বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়েছে সে উদ্দেশ্য শেষ হয়নি। তারা চান বেগম খালেদা জিয়ার আরেও ক্ষতি। সেজন্যই তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে না। তার চিকিৎসায় একদিন বিলম্ব হলেও দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন, পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিউরো মেডিসিন ডা. ওয়াহেদুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার ঘারের হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে নার্ভগুলো ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। এতে তিনি ডান হাতের তুলনায় বাম হাতে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে, এবং বাম হাতে শক্তি কমে যাচ্ছে ফলে ওই হাত দিয়ে তিনি কিছুই ধরে রাখতে পারছেন না বলে আমরা শুনছি। এছাড়া কোমরের স্পাইনাল কড নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোমরের হার ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এতে তার প্যারালাইসিস হওয়ার আশঙ্কা করছি।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল কুদ্দুদ বলেন, ২০০১৫ ও ১৭ সালে অপারেশন করা হয়েছে। তার চোখের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। তার যদি চোখের সু চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তার চোখের কর্নিয়া স্থায়ী ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এজেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. আব্দুল কুদ্দুস, ডা, ওলিউর রহমান, ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।