DMCA.com Protection Status
title="৭

রোগী পরীক্ষার্থী শিশু শিক্ষার্থী পথে পথে আটকাঃ আনন্দের ক্রিকেট বিষাদ হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরবাসীর কাছে

01.dsc-123ঘরের মাঠে চলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দর্শকদের উচ্ছ্বাসের নেই কোন কমতি। যে তিনটি নগরে বিশ্বকাপের খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলোও সেজেছে অপরূপ সাজে। চায়ের আড্ডায় ঝড় উঠছে বিশ্বকাপের খেলা  নিয়ে। সবার মুখে মুখে বিশ্বকাপের থিম সং ‘চার ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই’। তবে বিশ্বকাপের এই আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছে খেলোয়াড়দের জন্য বাড়াবাড়ি রকমের নিরাপত্তার কাছে। এর আগেও দেশে বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়েছে, দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল চট্টগ্রামে এসেছে। কিন্তু এবারের মত নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি কোনবারই দেখা যায়নি। সর্বশেষ শ্রীলংকা সফর থেকে নিরাপত্তার নামে শুরু হয়েছে এ দুর্ভোগ। যে দুর্ভোগে যারপরনাই বিরক্ত নগরবাসী। 
১৬ মার্চ ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর আগে ১২ মার্চ থেকেই বিভিন্ন দল প্রস্ত্ততি ম্যাচ খেলা শুরু করে। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও প্রস্ত্ততি ম্যাচ হয়েছে চারটি। মূলত তখন থেকেই শুরু হয় নগরবাসীর ভোগান্তি। বর্তমানে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে পাঁচটি দল চট্টগ্রামে রয়েছে। এর আগে ১ম পর্বের ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশসহ চারটি দল ছিল চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে আসা খেলোড়াররা উঠেছেন নগরীর জিইসি মোড়ের পেনিনসুলা হোটেল ও আগ্রাবাদের হোটেল আগ্রাবাদে। প্রতিদিনই কোন না কোন দলের খেলা নইলে প্র্যাকটিস থাকে। আর এসময়ে হোটেল থেকে মাঠ পর্যন্ত খেলোড়ারদের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দিতে বন্ধ করে দেয়া হয় নগরীর প্রধান সড়ক। আর এর প্রভাব পড়ে অন্যান্য সড়ক ও অলিগলিতে। পুরো নগরী এসময় স্থবির হয়ে পড়ে। প্রচন্ড গরমে গাড়িতে বসে মানুষ হাঁসফাঁস করতে থাকে। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থীদের চলছে ব্যবহারিক পরীক্ষা। যানজটে তারাও সময়মত পরীক্ষার হলে পৌঁছতে পারছে না অথবা হেঁটে বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। আর খেলোয়াড়রা কোন সময়ে হোটেল থেকে বের হবেন কিংবা মাঠ থেকে হোটেলে ফিরবেন তারও কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ফলে হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেয়া হয় যান চলাচল।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল পেনিনসুলা হোটেল থেকে বের হয় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করতে যাওয়ার জন্য। যথারীতি জিইসি মোড় থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় সড়কজুড়ে। প্রায় পৌণে এক ঘণ্টার মত রাস্তায় স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে হাজার হাজার যানবাহন। এমনকি একটি রিকশাও রাস্তা দিয়ে যেতে পারবে না এসময়। গতকাল দুপুর দেড়টায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষা ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সাড়ে ১২টার দিকে ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে যানজটে। অগত্যা অনেকে হেঁটেই রওয়ানা দেন কেন্দ্রের দিকে। তেমনই একজন বাগমনিরাম সিরাজা খাতুন সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রাবন্তী দাশ। তার কেন্দ্র ছিল টাইগার পাস বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ঘর থেকে বের হয়ে সে দেখে সব গাড়ি রাস্তায় আটকে আছে। অবশেষে হেঁটেই তাকে পৌঁছাতে হল কেন্দ্রে। ওয়াসা মোড়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বিশ্বকাপের খেলা হচ্ছে এতে আমরা সবাই খুশি। কিন্তু এভাবে সবাইকে কষ্ট দেয়ার কোন মানে হয় না। খেলার চেয়ে পরীক্ষা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
একই অবস্থা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা দল বিকেল তিনটার দিকে হোটেলে ফেরার সময়। এসময় ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় ব্যবসায়ী মামুন সরোয়ার আটকে যান মেয়েসহ। মেয়েকে পরীক্ষার হল থেকে নিয়ে নিজ গাড়িতে করে বাকলিয়ার বাসায় ফিরছিলেন তিনি। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ি থেকে নেমে তিনি একটি রিকশা নেন। কিন্তু মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ তাকে অন্য রাস্তা দিয়েও যেতে দেবেন না। মামুনের সাথে একরকম বাক-বিতন্ডাই বেঁধে যায় ট্রাফিক পুলিশের। এক পর্যায়ে তিনি ট্রাফিক পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার অধিকার নেই কোন কারণ ছাড়া একজন নাগরিককে তার গন্তব্যে যেতে বাধা দেয়ার। আর আমি তো গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি না। রিকশা নিয়ে কেন যেতে পারব না।’ পরে ট্রাফিক পুলিশ তাকে যেতে দেন।
প্রায় একই সময়ে জিইসি মোড়ে এ ভোগান্তিতে পড়েন ইঞ্জিনিয়ার নওশাদ। তিনি বলেন, নিরাপত্তার নামে এ ধরণের হঠকারিতার কোন মানে হয় না। রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে এ কোন ধরণের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে তা নগরবাসীর বোধগম্য নয়। মানুষের অনেক জরুরি কাজে ঘর থেকে বের হতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যদি মানুষকে রাস্তায় বসে থাকতে হয় তাহলে দেশেরই ক্ষতি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ক্রিকেট খেলা হয়। এ ধরণের হাস্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর কোন দেশে নেয়া হয় বলে আমার জানা নেই। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।
তবে সহসা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবে না নগরবাসী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামে বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ধরণের অবস্থা বলবৎ থাকবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এ নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে খেলোয়াড়দের। যেকোন ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এ ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) বাবুল আক্তার দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে  বলেন, খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্যই এ ব্যবস্থা। তবে নগরবাসীর যে কষ্ট হচ্ছে তা-ও আমরা বুঝি। তবে আমরা নিরুপায়। আগে থেকে যে নগরবাসীকে জানিয়ে দেব সে অবস্থাও নেই। কারণ দলগুলো হঠাৎ করেই প্র্যাকটিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে। দেখা গেল কোনদিন প্র্যাকটিস বিকেল ৩টায়। কিন্তু তারা ২টায় বেরিয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আমাদেরও ওই সময় যান চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। তবে এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগ আরো ভালো বলতে পারবে।
যোগাযোগ করলে উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফারুক আহমেদ দৈনিক প্রথ বাংলােশকে  বলেন, যতদিন বিশ্বকাপের ম্যাচ হবে ততদিনই এ অবস্থা চলবে। এ ব্যাপারে কোন ঝুঁকি নেয়া যাবে না। নগরবাসীকে এ বিষয়টা বুঝতে হবে। এটি একটি বিশ্ব ইভেন্ট। এ ধরণের বড় ইভেন্ট আগে কখনো হয়নি। তাই খেলোয়াড়দের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। নগরবাসীকে এ কয়দিন এটা সহ্য করতেই হবে। ২০১১ বিশ্বকাপেও দু’টি ম্যাচ চট্টগ্রামে হয়েছিল কিংবা এর আগেও অনেক দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে চট্টগ্রামে এসেছিল। তখনতো এ ধরণের পরিস্থিতি হয়নি। তাহলে এবার কেন ? এ প্রশ্নের জবাবে ফারুক আহমেদ বলেন, এবার বিশ্বকাপের অনেক ম্যাচ চট্টগ্রামে। ২০১১ সালে মাত্র দু’টি ম্যাচ হয়েছিল। তাই নিরাপত্তার ব্যাপারটি তখন ভালোমত বোঝা যায়নি। সেবারও এ ধরণের নিরাপত্তা দেয়া হয়েছিল।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!