DMCA.com Protection Status
title="৭

২০২০-২১ সাল হবে মুজিব বর্ষঃ শেখ হাসিনা।

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ২০২০ ও ২০২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ ঘোষণার কথা জানিয়েছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে আওয়ামী লীগের কাযির্নবার্হী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার উদ্বোধনে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ন হবে। আর ঠিক পরের বছরই বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবণর্জয়ন্তী।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যৌথসভার শুরুতে বলেন, ‘২০২০-২১ সাল আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে পালন করব। এ উপলক্ষে বছরব্যাপী কমর্সূচি নেয়া হবে।’

টুঙ্গিপাড়ায় এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ মুজিবুর রহমান স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে তার রাজনীতির দীক্ষাগুরু ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর্।

গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন শেখ মুজিব।

ম্যাট্রিকুলেশন পাসের পর কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর্ ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন।

ওই সময় থেকেই নিজেকে ছাত্র-যুবনেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন, যোগ দেন আওয়ামী মুসলিম লীগে, যা পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নাম নেয়।

১৯৪৮ সালের ১১ মাচর্ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সাধারণ ধমর্ঘট পালনকালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পযর্ন্ত তিনি বারবার কারারুদ্ধ হন।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নিবার্চন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন জনদাবি আদায়ের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিব।

বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শেখ মুজিবকে বারবার কারাগারে যেতে হতে হয়েছে। আর আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ তাকে নিয়ে যায় বাঙালির নেতৃত্বে।

আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন তিনি, যার ফলে ১৯৬৮ সালে তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ হতে হয়।

১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। ১৯৭০-এর নিবার্চনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমথর্ন জানায়। আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নিবার্চনী বিজয়কে মেনে নেয়নি।

এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ দেন। ’৭১-এর মাচের্ শুরু করেন অসহযোগ আন্দোলন।

৭ মাচর্ তৎকালীন রেসকোসর্ ময়দানে (বতর্মান সোহরাওয়াদীর্ উদ্যান) জনসমুদ্রে তার ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাঙালিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে ধাবিত করে।

১৯৭১-এর ২৫ মাচর্ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করার পর সে রাতেই বন্দি হন শেখ মুজিব। 

মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকলেও তার নামেই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে বাঙালি। 

অন্যদিকে স্বাধীনতা ঘোষণা ও বিদ্রোহের অভিযোগ এনে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে গোপন বিচারের নামে প্রহসন শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে।

নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় আসে। এরপর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি তিনি পা রাখেন স্বাধীন ভূমিতে।

সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের দায়িত্বভার নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনগর্ঠন ও পুনবার্সনের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন তিনি।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু জাতির অথৈর্নতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কমর্সূচি ঘোষণা করেন, গঠন করেন বাকশাল; যার ফলে দেশে অন্য সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়, চারটি সংবাদপত্র ছাড়া অন্য সব সংবাদপত্রও বন্ধ করে দেয়া হয়।

তার কিছুদিনের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনা কমর্কতার্র হাতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু।

যে দেশের স্বাধীনতার জন্য রাজপথ কিংবা কারাগারে যার জীবন কেটেছে, সেই দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে অবসান ঘটে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কের এবং তা বাঙালিরই হাতে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!