DMCA.com Protection Status
title="৭

ওয়ানডে নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে নারাজ মাশরাফি

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ টেস্টে এমন করুণ পরিণতির পর ওয়ানডে সিরিজে কী করবে টাইগাররা? অ্যান্টিগা ও জ্যামাইকায় পরপর দুই টেস্টে আড়ষ্ঠ ও শ্রীহীন ব্যাটিংয়ের ধাক্কা সামলে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে কতটা কুলিয়ে উঠতে পারবে মাশরাফির দল? চার ইনিংসে কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও জ্যাসন হোল্ডার-পল কামিন্সদের ফাস্ট বোলিং তোড়ের মুখে যারা একদমই দাঁড়াতে পারেননি, সেই তামিম-মুশফিক-সাকিবরা কি ওয়ানডেতে সাফল্যের নীড় রচনা করতে পারবেন? প্রশ্ন ক্রিকেট অনুরাগীদের।

শুধু প্রশ্ন বলা বোধকরি কম বলা হলো। সাথে সংশয়, দুশ্চিন্তা ও খানিক উদ্বেগ যুক্ত করাই হবে যুক্তিযুক্ত। কারণ টেস্টে মূল লড়াইটা হয়েছে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারদের সাথে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। আর ওয়ানডেতে স্বাগতিক বোলারদের সাথে ক্রিস গেইল-এভিন লুইসের মতো মারকুটে ও বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানদেরও সামলাতে হবে।

অবশ্য শুধু সংশয়-শঙ্কাই নয়। আশাবাদী হবার খোরাকও কিন্তু আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতিহাস-পরিসংখ্যান জানাচ্ছে বাংলাদেশও দীর্ঘ পরিসরের চেয়ে একদিনের ফরম্যাট, বিশেষ করে ওয়ানডেতে তুলনামূলক ভালো দল। গত চার বছরের পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে ভালো দল।

রেকর্ডের পাশাপাশি ৫০ ওভারের ফরম্যাটে বাংলাদেশ দল হিসেবেও তুলনামূলক গোছানো। ব্যাটিং-বোলিংয়ে কিছু পরিণত, অভিজ্ঞ ও হাত পাকানো পারফরমার আছেন। যারা অতীতে সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। এর বাইরে ওয়ানডে ক্রিকেটে টিম বাংলাদেশের আরও একটা ইতিবাচক উপাদান আছে। যা দলটির বড় রসদও।

৫০ ওভারের ফরম্যাটে অধিনায়ক মাশরাফি- এটাও অন্যরকম নির্ভরতা। আস্থার ক্ষেত্র। মাশরাফির উপস্থিতিই দলের ভেতরে একটা অন্যরকম প্রভাব ফেলে। ভাঙাচোরা মানসিকতা ফুরফুরে হয়ে ওঠে। চিড় ধরা আস্থা ও আত্ববিশ্বাস ফিরে আসে। মাঝে মনে হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই যোগ্য, দক্ষ এবং সফলতম অধিনায়ককে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে নাও পেতে পারে বাংলাদেশ।

কিন্তু আশার খবর, অনিশ্চয়তার কালো মেঘ সরে গেছে। ওয়ানডেতে নেতৃত্বে থাকবেন মাশরাফিই। পুরোপুরি না হলেও স্ত্রী সুমি কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায়। আজ মধ্যরাতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে যাত্রা করছেন টিম বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।

সেই ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজই শেষ। তারপর আর জাতীয় দলের সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। কী করে থাকবে? এরপর যে বাংলাদেশ আর ওয়ানডেই খেলেনি! শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিদাহাস ট্রফি ও ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তানের সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে শুধু।

হাতে হয়তো আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নেই। কোনো জাদুর কাঠিও নেই। তারপরও মাশরাফি মানেই বাড়তি আস্থা। নির্ভরতা। আশা ভরসা। তার উপস্থিতিতে ড্রেসিং রুম চাঙ্গা হয়। দল ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ হয়। এগুলো সবার জানা।

টেস্টের অমন হতশ্রী অবস্থার পর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস কমেছে অনেকটা। সেখান থেকে দলকে আবার টেনে তোলা এবং ভালো খেলতে উদ্যমী করে তোলা সহজ নয় মোটেই। তারওপর ক্যারিবীয়রা ঘরের মাঠে বরাবরই সীমিত ওভারের ফরম্যাটে বিপজ্জনক দল।

কী ভাবছেন মাশরাফি? তার চিন্তা ভাবনা, লক্ষ্য-পরিকল্পনা কী? সত্যি কথা বলতে, মাশরাফি এখনই আকাশ কুসুম ভাবতে নারাজ।

প্রথম কথা, একটা ফুরফুরে মেজাজ ও শতভাগ অনুকুল পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তার জ্যামাইকা যাওয়া হচ্ছে না। চিত্তে সুখ বা মানসিক স্থিরতা বলতে যা বোঝায়- তার কোনোটাই পুরোপুরি নেই। সবার জানা, রক্তে ব্যাকটেরিয়ার কারণে স্ত্রী সুমির জ্বর হয়েছিল একটানা দুই সপ্তাহ। সেই ব্যাকটেরিয়া রোধে তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ও ইনজেকশনও দিতে হয়েছে।

অসুস্থ স্ত্রীর সেবা ও ছোট দুই সন্তানের দেখভাল করতে গিয়ে মাঝে ক’দিন ঠিকমতো অনুশীলনই করা সম্ভব হয়নি মাশরাফির। এখনো স্ত্রী শতভাগ সুস্থ নন। মাশরাফির ইচ্ছে, যদি দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল সহ্য করার মতো শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্য জন্মায়- তাহলে আমেরিকা নিয়ে যাবেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। স্ত্রীর পাশাপাশি মেয়েটার চোখের ডাক্তার দেখানোর ইচ্ছেও আছে।

মধ্য রাতে (সোমবার দিবাগত রাত একটা ৪০ মিনিটে) ফ্লাইট। তার আগে আজ দুপুরে জাগো নিউজের সাথে কথা বলেছেন মাশরাফি। ওই কথোপকোথনের শুরুতে ছিল অসুস্থ স্ত্রীর প্রসঙ্গ। মাশরাফি বলেন, ‘স্ত্রী সুমি এখন আগের চেয়ে ভালো। তারপরও কিছু সমস্যা আছে এখনো। চেষ্টা করছি ওখানে (আমেরিকায়) আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে যদি সম্ভব হয় তাহলে ডাক্তার দেখানোর। অবশ্য যদি যাবার মতো অবস্থা হয়, তাহলে নিয়ে যাব ডাক্তার দেখাতে। আমার ওখানে নানিরা আছে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কোনোরকম উচ্চবাচ্য করতে নারাজ মাশরাফি। একদম দুই কথায় সেরেছেন। প্রথম কথা, ‘যেহেতু মাঝে দল কোনো ওয়ানডে খেলেনি। তাই আমি ছয় মাস জাতীয় দলের বাইরে। আগে দলের সাথে যোগ দেই। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখি। পর্যবেক্ষণ করি। তারপর একটা অনুভব ও উপলব্ধি আসবে। তাই আমি এখন দেশে বসে মনে হয় আগ বাড়িয়ে কিছু না বলাই ভারো। আগে যাই। দলের সাথে যুক্ত হই। তারপর সব দেখে ও বুঝে করণীয় ঠিক করবো।’

লক্ষ্য-পরিকল্পনা নিয়ে এখনই কোনো আকাশ কুসুম কল্পনায় যেতে রাজি না হলেও মাশরাফি আরও একটি তাৎপর্য্যপূর্ণ কথা বলেছেন। যা আকার আয়তনে ছোট্ট, সংক্ষিপ্ত; কিন্তু ব্যাপ্তি অনেক বড়।

মাশরাফির অনুভব, ‘ওয়ানডে ডিফারেন্ট বল গেম। টেস্টের সাথে যার মিল নেই। আকার, দৈর্ঘ্য ও গতি প্রকৃতি- সব ভিন্ন। তবে আমার মনে হয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরও ভালো দল। তারপরও সেই একই কথা, এটা ডিফারেন্ট বল গেম।’

এই একটি কথা দিয়ে মাশরাফি অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ওয়ানডে টেস্ট নয়। যেখানে তার দল টেস্টের চেয়ে ভালো। সেটাই যে আলোকবর্তিকা। সেটাই কি বোঝাতে চাইলেন টাইগার ওয়ানডে ক্যাপ্টেন!

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!