ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জয়ের এমন সুযোগ সম্ভবত আর কেউ এভাবে হাতছাড়া করে ফেলে না। এক সময় ৯ বলে প্রয়োজন ছিল ১০ রান। হাতে উইকেট আছে। প্রায় বল সমান রান। এমন পরিস্থিতিতে দেখে-শুনে খেললেই জয় অনায়াসে ধরা দেয়। অথচ, শেষ মুহূর্তের চাপেই কি না ভেঙে পড়লো বাংলাদেশ। নিশ্চিত জয় করলো হাতছাড়া। বলতে গেলে তীরে এসে তরিই ডুবিয়ে দিলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। হেরে যেতে হলো মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে।
নিশ্চিত জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে পরাজয়ের দিকে যাওয়ার কাজটি করেছেন মূলতঃ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। একটি মাত্র ভুল করে। ৪৬তম ওভারের প্রথম বলের ঘটনা। জ্যাসন হোল্ডারের বলে কিছুটা পরাস্ত হন। বল একেবারে স্ট্যাম্পের গোড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে দৌড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চলে যান স্ট্রাইকিং প্রান্তে। অ্যাশলে নার্স বল তুলে পাঠালেন এবং স্ট্যাম্প ভাঙলেন হোল্ডার। ভাঙলো ৮৮ রানের জুটি। সে সঙ্গে বাংলাদেশের পরাজয়ের প্রথম ধাপে পা দেয়ার শুরু।
তবুও মুশফিকুর রহীম ছিলেন উইকেটে। আশাও ছিল। অন্যপ্রান্তে সাব্বির রহমান হার্ড হিটার। নিশ্চিত দু’একটা বিগ শট খেলে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সাব্বির আবারও হতাশ করলেন। বড় শটই খেলতে পারলেন না। উল্টো ফুল টসে ধরা খেলেন। ক্যাচ তুলে দিলেন বাউন্ডারি লাইনে হেটমায়ারের হাতে। শেষ ওভারের প্রথম বলে আবারও ফুলটস বলের কাছে পরাস্ত বাংলাদেশ। পরাস্ত মুশফিকুর রহীম। শটই খেলতে পারলেন না। উইকেট দিলেন হোল্ডারের বলে কিমো পলের হাতে।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রানের। সেট ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমকে হারানোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সেই রানও তুলতে পারলো না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ফলে মাত্র ৩রানে হেরে যেতে হলো বাংলাদেশকে।
২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। এনামুল হক বিজয় আগের ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে যাওয়ার কারণে এই ম্যাচে যেন বোঝাতে চেয়েছিলেন, শূন্য রানে আউট হওয়ার মত ব্যাটসম্যান নন তিনি। যে কারণে দেখা গেলো মাত্র ৯ বলেই ২ বাউন্ডারিতে ২৩ রান করে ফেলেন বিজয়। ২.৩ ওভারেই (১৫ বল) গড়ে ফেলেন ৩২ রানের জুটি। যেন টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং।
কিন্তু অ্যালজারি জোসেফের বলে উচ্চাভিলাসি হতে গিয়ে বোল্ড হতে হলো তাকে। বলের গতি-প্রকৃতি না বুঝেই ব্যাট করতে গেলেন। ফলে বোল্ড হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বিজয়ের। অ্যালজারি জোসেফ বিজয়কে হাত দিয়ে ইশারা করে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার। যেন প্রচ্ছন্ন একটা অপমান।
এরপর জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল। প্রথম ম্যাচের মতই এই দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৯৭ রানের জুটি। এরই মধ্যে ৪২তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তামিম ইকবাল। তবে ৮৫ বলে ৫৪ রান করার পর দেবেন্দ্র বিশুর বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে স্ট্যাম্পিং হলেন তামিম। দলীয় রান এ সময় ১২৯।
সাকিব আল হাসানও এরপর বেশিক্ষণ টিকলেন না। নিজের ৩৯তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি করার পর সাকিবও আউট হয়ে গেলেন অস্থিরতার প্রমাণ দিয়ে। আউট হওয়ার আগে দু’বার বেঁচেছিলেন তিনি। তবুও সতর্ক হননি। ফলে অ্যাশলে নার্সের বলে কিমো পলের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব।
তামিম-সাকিবের বিদায়ের পর জুটি গড়েন মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দু’জনের ব্যাটে আসে ৮৮ রানের জুটি। এ দু’জনের ব্যাটেই বলতে গেলে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে এসে পাগলামি করে বসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
জ্যাসন হোল্ডারের বলে মুশফিক পরাস্ত হলেও একেবারে ফিল্ডারের হাতে বল থাকা অবস্থায় দৌড়ে স্ট্রাইকিং প্রান্তে চলে আসেন রিয়াদ। বল যখন ফিল্ডার হোল্ডারের হাতে পাঠান, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেলো। ৩৯ রানে রানআউট হয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ।
রিয়াদ আউট হয়ে গেলেও এর পরক্ষণেই ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মুশফিকুর রহীম। ৫৬ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় আসে তার এই হাফ সেঞ্চুরি ইনিংসটি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পর ব্যাট করতে নামেন সাব্বির রহমান। কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। ১১ বলে ১২ রান করে ফিরে যেতে হলো তাকে।
পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়েই বিপদে পড়ে যেতে হলো বাংলাদেশকে। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে কিমো পলের বলে উইকেট দেন সাব্বির রহমান। আর ৫০তম ওভারের প্রথম বলে জ্যাসন হোল্ডারের ফুলটস বলে ধরাশায়ী হলেন মুশফিকুর রহীম। ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নিলেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৬৭ বলে করেন ৬৮ রান।
শেষ মুহূর্তে ব্যাট করতে নামেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এবং মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু দু’জনের কেউই কোনো বিগ শট খেলতে পারলেন না। ফলে ৩ রানে হার মেনে মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শিমরন হেটমায়ারের অনবদ্য সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ২৭১ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদিও ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় তারা। ৯৩ বলে ১২৫ রান করে আউট হন শিমরন হেটমায়ার। ৪৪ রান করেন রভম্যান পাওয়েল। ক্রিস গেইল করেন ২৯ রান এবং সাই হোপের ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন পেসার রুবেল হোসেন। অপর পেসার মোস্তাফিজুর রহমান নেন ২ উইকেট। এছাড়া সাকিব আল হাসানও নেন ২ উইকেট। মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মেহেদী হাসান মিরাজ নেন ১টি করে উইকেট।