DMCA.com Protection Status
title="৭

স্ত্রী রেখে উর্মিকে নিয়ে লিভ টুগেদার করতেন সেই খোকন

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অনাথ শিশু গৃহপরিচারিকা নির্যাতনকারী আতাউল্লাহ খোকন আগে থেকেই বখাটে। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে রেখে তিনি ফতুল্লায় তার পরকীয়া প্রেমিকা উর্মিকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঘরজামাই থেকে অন্যের স্ত্রী উর্মির সঙ্গে পরকীয়া করতেন খোকন।

বাসা ভাড়া উঠিয়ে কেনা প্রিমিও প্রাইভেটকারে ঘুরে বেড়াতেন পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে। একপর্যায়ে স্ত্রী ও সন্তান ছেড়ে উর্মিকে নিয়ে আত্মগোপন করেন খোকন।

এতে উভয়ের পরিবারে দেখা দেয় ক্ষোভ। বারবার চেষ্টা করেও উর্মিকে তার স্বামী সোহাগ ফিরিয়ে নিতে না পেরে আদালতে মামলা করেন। অন্যদিকে ভরণপোষণের খরচ চেয়ে খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নেন তার স্ত্রী রেজোয়ানা চৌধুরী। এর মধ্যেই ঘটে যায় খোকন ও উর্মির বর্বর নির্যাতনের ঘটনা।

এ ঘটনার পর থেকে তাদের ভাড়া নেয়া ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইর আনন্দনগর এলাকার শহীদুল্লাহর বাড়ির ফ্ল্যাটটি পুলিশ তালাবদ্ধ করে রেখে যায়। ওই বাড়িতে খোকনের আসবাবপত্রসহ একটি প্রাইভেটকার রয়েছে।

শিশু নির্যাতনের ঘটনার আট দিন পর গত শনিবার বিকেলে খোকনের স্ত্রী রেজোয়ানা চৌধুরী ওই বাড়িতে লোকজন নিয়ে এসে ঘরের তালা ভেঙে আসবাবপত্র নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বাড়িওয়ালা ও স্থানীয় লোকজন তাদের বাধা দেন। এর পর রেজোয়ানার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে খোকন ও উর্মির অজানা অনেক কাহিনি।

বাড়িওয়ালা শহীদুল্লাহ বলেন, পুলিশ ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ করে আমার জিম্মায় তাদের আসবাবপত্র রেখে গেছেন। পুলিশের নির্দেশ নিয়ে না আসা পর্যন্ত ওই ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কারো কাছে আমি দিতে পারি না। আমাকে খোকন বলেছে, সে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ইসদাইরে তার বাবার জমিতে বাড়ি করবে, তাই কিছু দিনের জন্য আমার বাসায় তার স্ত্রী উর্মিকে নিয়ে ভাড়া থাকবে। আমি জানতাম না খোকনের স্ত্রী ও তিন সন্তান আছে। এখন জেনেছি।

রেজোয়ানা চৌধুরী বলেন, কুমিল্লার হোমনা থানার কাশিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিম মিয়ার ছেলে আতাউল্লাহ খোকন। সে কোনো কাজকর্ম করে না। ফতুল্লার ইসদাইরে খোকনের বাবা একটি বাড়ি করে মারা যান। তার অন্য কোনো ভাই বেঁচে নেই। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। ইসদাইরের বাড়ির ভাড়া উঠিয়ে খোকন হাত খরচ চালায় এবং একটি প্রাইভেটকার কিনে। আমাকে বিয়ে করার পর থেকে ঢাকার শাহজাদপুরে আমার বাবার বাড়িতে আমাদের সঙ্গে থাকত। আমাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আমাদের পাশের বাড়িতেই ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া তার স্ত্রী উর্মিকে নিয়ে বসবাস করতেন। এতে উর্মির সঙ্গে খোকনের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রথমে তাদের পরকীয়ার বিষয়টি বুঝতে না পারলেও পালিয়ে যাওয়ার পর তা জানতে পারি।

comipled-Chiled2

রেজোয়ানা চৌধুরী আরও বলেন, আমি চেষ্টা করেছি খোকনকে ফিরিয়ে নিতে, কিন্তু সে কোনো কিছুতেই আমার কথা শুনেনি। উর্মিকেও চেষ্টা করেছে তার স্বামী সোহাগ ফিরিয়ে নিতে। উর্মিও তার স্বামীর কথা শুনেনি। স্ত্রী ও স্বামী- সন্তানদের মনে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখী হতে পারে না। খোকন ও উর্মিও পারেনি। তারা যে বিয়ে করেছে, তার প্রমাণ হিসেবে কাবিননামাও দেখাতে পারেনি। তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তাদের বিচার হতে হবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের এসআই ইলিয়াস জানান, ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইর আনন্দনগর এলাকার শহীদুল্লাহর বাড়ির ভাড়াটিয়া আতাউল্লাহ খোকন ও উর্মি আক্তারের বাসায় তিন মাস ধরে আট বছর বয়সী শিশু মাহি গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ নেয়। এরপর থেকে শিশুটিকে প্রায় সময় বাসায় ভারী কাজ করতে না পারলেই মারধর করা হতো। গত ১৯ জুলাই রাতে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ওই দম্পতির বাসায় গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জাকির হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তিনি আরও জানান, শিশুটির ওপর তারা অমানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছে। এর মধ্যে গরম খুন্তির আঘাতে শিশুটির ডান হাতের এক পাশের চামড়া উঠে গেছে।

মারধরের ফলে শিশুটির দুই গালসহ দুটি চোখ ফুলে যায়। তাকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে নিরাপদ হেফাজতে রাখতে গাজীপুর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দেন আদালত। এরপর শিশু মাহিকে সেখানে রাখা হয়।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের এসআই হানিফ বলেন, ২৩ জুলাই অনাথ শিশু মাহিকে (৮) নির্যাতনকারী পাষণ্ড আতাউল্লাহ খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই সময় উর্মি আক্তার নিজেকে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা দাবি করায় তার বিরুদ্ধে পুলিশের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!