DMCA.com Protection Status
title="৭

মৌলভীবাজার বাসীর প্রানের দাবীঃ ‘হটাও নাসের, বাঁচাও বিএনপি’

Naser Rahman_কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, বিপুল অর্থের জোরে দলের মধ্যে কোন্দল ও গ্রপিং সৃষ্টিসহ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড- চালিয়ে যাচ্ছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মী ও ১৯ দলের শরিক নেতাদের পাশ কাটিয়ে নিজের পছন্দের কিছু দলছুট ও সুযোগসন্ধানী নেতাকে নিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় জেলা বিএনপির নেতৃত্ব চালানোয় ইতিমধ্যে তিনি একঘরে হয়ে পড়েছেন। আর মৌলভীবাজার বিএনপি নাসের ও তার গুটি কয়েক সমর্থকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

শুধু জেলা সদরে নয়, জেলার প্রতিটি উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার ওপর চরম বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। ইতিমধ্যে জেলার সর্বত্র নাসের হটাও, বাঁচাও বিএনপি স্লোগান উঠেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলার সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে নাসের রহমানকে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানালেও কেন্দ্র থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নেতা-কর্মীরা চরম হতাশ।

মৌলভীবাজার বিএনপির নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন, নাসের রহমানের খুঁটির জোর কোথায়? নাসের রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা আর নানা অপকর্মের বিরাট প্রভাব পড়ছে জেলার বিএনপির রাজনীতিতে। এর সর্বশেষ প্রমাণ চলতি উপজেলা নির্বাচন। জেলার সাতটি উপজেলায় কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও নাসের রহমান কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড় করান। ফলে সদর উপজেলা ছাড়া এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জেলার বাকি ৫ উপজেলায় বিএনপি জয়লাভ করতে পারেনি। ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় বাকি দুটি উপজেলার ফলাফলও একই রকম হবে বলে সেখানকার নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা।

প্রতিটি উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীর জয়লাভের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নাসের রহমান-ঘোষিত প্রার্থীর কারণে এসব স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভে সক্ষম হন। প্রতিটি উপজেলায়ই বিএনপি ও এর শরিক দলের প্রার্থীরা দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। পক্ষান্তরে নাসের রহমানের অজনপ্রিয় প্রার্থীরা কোথাও জামানত হারান, কোথাও বা তৃতীয়-চতুর্থ অবস্থান লাভ করেন। এ অবস্থায় মৌলভীবাজারে বিএনপির রাজনীতি একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর সুফল নিচ্ছে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। শিগগির নাসের রহমানকে জেলা বিএনপির পদ থেকে অব্যাহতি না দিলে মৌলভীবাজারে বিএনপির রাজনীতি টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে দলীয় নেতা-কর্মীসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।



পাঁচটি ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে গত ১৯ ফেব্র“য়ারি কুলাউড়া উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে কেন্দ্রঘোষিত বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন আলহাজ শওকতুল ইসলাম শকু।

কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে নাসের রহমান তার পছন্দের প্রার্থী আব্দুল হান্নানকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করান। দলের নিশ্চিত ভরাডুবি আঁচ করতে পেরে জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বরাবর নাসের রহমানকে দল থেকে অব্যাহতি ও তার দোসর বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামানত হারানো আবেদ রাজাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানালেও কেন্দ্র থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে এম এম শাহীনের আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ স ম কামরুল ইসলাম ৪৬ হাজার ভোট পেয়ে কুলাউড়ায় বিজয়ী হন। পক্ষান্তরে বিএনপির প্রার্থী আলহাজ শওকতুল ইসলাম শকু পান প্রায় ৩৭ হাজার ভোট। অন্যদিকে নাসের রহমান-সমর্থিত প্রার্থী হন তৃতীয়। এই উপজেলায় হান্নান প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে শকু নিশ্চিত জয়লাভ করতেন। 

তৃতীয় দফা ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বড়লেখা উপজেলা নির্বাচনেও বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। এদিকে চতুর্থ দফায় ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজার সদরে বিএনপির প্রার্থী অত্যাধিক জনপ্রিয় হওয়ায় পার পেলেও কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে হেরে যায় বিএনপি। মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত প্রার্থী হিসেবে মিজানুর রহমান (ভিপি মিজান) দলীয় মনোনয়ন পেলেও নাসের রহমান তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া আবদুল মছব্বিরকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করান। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেগম খালেদা রব্বানী মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মিজানকে একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কথা জানালেও নাসের রহমান পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জানান, মৌলভীবাজারে বিএনপির একক কোনো প্রার্থী নেই। সেখানে বিএনপির প্রার্থী দুজন।

বেগম খালেদা রব্বানী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শক্রমে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মিজানুর রহমানের (ভিপি মিজান) নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলছুট নেতা আবদুল মছব্বির এরশাদের পক্ষে জনসংযোগ করছেন। এমনকি দলীয় প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা কটূক্তি ও হুমকি দিচ্ছেন। এ অবস্থায় বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলার মতো জেলার অন্য পাঁচটি উপজেলায়ও বিএনপির পরাজয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিএনপিকে বাঁচাতে বেগম খালেদা রব্বানী নাসের রহমানকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, নাসের রহমান ১৯ দলের নেতা নন, তিনি বিএনপির একটি অংশের নেতা। জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ ইসলামী দলগুলো তার সঙ্গে নেই।

তিনি জেলায় ১৯ দলীয় জোটের ঐক্য ধরে রাখতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে উপজেলা নির্বাচনে। একটি সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে নাসের রহমানের বক্তব্য, কেন্দ্র সিদ্ধান্ত দিয়েছে মৌলভীবাজার সদরে বিএনপির দুজন প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দি¦তায় থাকবেন। যার জনপ্রিয়তা বেশি, তিনিই জয়ী হয়ে আসবেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। কেন্দ্র এ ব্যাপারে আর কোনো সিদ্ধান্ত দেবে না। তাছাড়া উপজেলা নির্বাচন জোটগত ভাবে হচ্ছে না। বিএনপি প্রার্থী দিচ্ছে। জামায়াতও প্রার্থী দিচ্ছে। ১৯ দলীয় প্রার্থী বলতে কিছু নেই।

যদিও ২৩ মার্চের নির্বাচনে ভিপি মিজানের জনপ্রিয়তার কাছে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হন নাসের রহমান। ওই নির্বাচনে মিজান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আর নাসের রহমানের প্রার্থী মছব্বির ৪ জনের মধ্যে চতুর্থ স্থান লাভ করেন। তবে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। এদিকে আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় জুড়ী ও রাজনগর উপজেলা নির্বাচনেও ঘরের শত্রু বিভীষণ নাসের রহমানের বিরোধিতার কারণে এই দুটি উপজেলার পরিণতিও কুলাউড়া, বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের ভাগ্যবরণ করবে বলে উপজেলা দুটির বিএনপির নেতা-কর্মীরা আশঙ্কা করছেন। এ অবস্থায় জেলার প্রতিটি স্থানের বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা নাসের রহমানকে অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!